মশা তাড়ানোর কাজ চলছে কোচবিহারে। —ফাইল চিত্র।
মালবাজার
এক দিকে গরুমারা জাতীয় উদ্যান, অন্য দিকে ঘন জঙ্গল। জঙ্গলের ভিতরেই ছাওয়াফুলি গ্রাম। মেরেকেটে একশো পরিবারের বাস। গ্রামের মধ্যেই ছোট চা বাগানে সকলে শ্রমিকের কাজ করেন। জঙ্গলে ছোট বিল, বদ্ধ জলাশয়। জঙ্গল এতটাই গভীর যে ঠিক মতো সূর্যের আলোও ঢুকতে পারে না। আর এখানেই মশার আঁতুড়ঘর গড়ে উঠেছে। ডেঙ্গিও থাবা বসিয়েছে এই এলাকায়। এলাকাটি এতটাই দূরবর্তী এবং জঙ্গলাকীর্ণ যে স্বাস্থ্যকর্মীদের ঠিক মতো পৌঁছে পরিষেবা দেওয়াটাও কষ্টসাধ্য বলেই আজও মশাই এখানে শেষ হাসি হেসে চলেছে বলেই বাসিন্দাদের দাবি।
দার্জিলিং
গত বছর দার্জিলিং জেলায় ৫৬ জনের রক্তের ম্যালেরিয়ার জীবাণু মিলেছিল। এ বছর এখন পর্যন্ত পাওয়া গিয়েছে ২৬ জনের শরীরে। দার্জিলিং জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক অসিত বিশ্বাস বলেন, ‘‘তিনটি কারণে ম্যালেরিয়া এখন অনেকটাই নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়েছে। তার একটি র্যাপিড কিটের সাহায্যে দ্রুত ম্যালেরিয়ার জীবাণু চিহ্নিতকরণ। ‘আরটিসুনেট কমবাইন থেরাপি’র সাহায্যে চিকিৎসা। এই পদ্ধতিতে ইঞ্জেকশন বা ট্যাবলেটের মাধ্যমে ম্যালেরিয়ার ওষুধ দেওয়া হয়। তৃতীয়ত, মেডিকেটেড মশারির ব্যবহার।’’ গত সাত আট বছরে উত্তরবঙ্গে ম্যালেরিয়ার পরিস্থিতি অনেকটাই বদলেছে বলে মনে করেন উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের প্রধান অরুণাভ সরকারও।
উত্তর দিনাজপুর
গত ৪ থেকে ৬ অগস্ট পর্যন্ত রায়গঞ্জ জেলা হাসপাতালে ডেঙ্গির উপসর্গ নিয়ে ৮ জন ভর্তি হন। রক্ত পরীক্ষার পর তাঁদের মধ্যে ইটাহার ও করণদিঘির বাসিন্দা দুই কলেজ ছাত্রের শরীরে ডেঙ্গির জীবাণু ধরা পড়ে। এখন তাঁরা অবশ্য সুস্থ। মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক জগন্নাথ সরকার জানিয়েছেন, ডেঙ্গি রুখতে এক সপ্তাহ ধরে প্রচার চলছে। পুরসভা ও পঞ্চায়েতের তরফে মশানাশক গ্যাস, তেল ও পাউডার ছড়ানোর কাজ চলছে। বাসিন্দাদের দাবি, প্রশাসনের তৎপরতা আরও বাড়ানো দরকার।
জলপাইগুড়ি
মালবাজার, শিলিগুড়ি সংলগ্ন জলপাইগুড়ি জেলার অংশ এবং ধূপগুড়িতে এই মশার জ্বালাতন বেশি। জেলা স্বাস্থ্য দফতরের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী ২০১২ সালে জেলায় ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হয় ৭২৫ জন। ২০১৩ সালে ৩৯৪ জন, ২০১৪ সালে ১১৫ জন, ২০১৫ সালে ২১১ জন এবং ২০১৬ সালে আক্রান্ত হয়েছেন ২৪ জন। মৃত্যু হয়েছে ২০১২ সালে ৩ জন, ২০১৩ সালে ১ জন, ২০১৫ সালে ১ জন এবং ২০১৬ সালে এখনও পর্যন্ত ১ জনের। ২০১৪ সালে জেলায় ১৭ জনের ডেঙ্গি হয়। ২০১৫ সালে ২৫ জনের এবং ২০১৬ সালে ২ জনের ডেঙ্গি হয়।
কোচবিহার
ফি বছর বিভিন্ন অনেকে মশাবাহিত রোগে আক্রান্ত হন। গত বছরেও দু’জনের মৃত্যু হয়। জেলা হাসপাতালে দৈনিক গড়ে ১০-২০ জন রোগী ভর্তি থাকছেন। এ বছরে ৮০ জনের শরীরে ম্যালেরিয়ার জীবাণু মেলে রক্ত পরীক্ষার পরে। সকলেই সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গিয়েছেন। চিকিৎসক উজ্জ্বল আচার্যের পরামর্শ, বাড়িতে ফ্রিজ থেকে ফুলের টব, পরিত্যক্ত পাত্র কোথাও যাতে জল জমে না থাকে সেদিকে নজর রাখতে হবে। মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক সুমিত গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, “পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে। মশা নিয়ন্ত্রক প্রতিষেধক বিভিন্ন পুরসভাকে দিয়েছি।”
মালদহ
স্বাস্থ্য দফতরের এক কর্তা জানান, শহর জুড়ে রয়েছে নিকাশি নালা এবং জঞ্জালের স্তুপ। শহরেই রয়েছে খাটালও। তাই মশার দাপটও রয়েছে। এখন পর্যন্ত জেলাতে ডেঙ্গিতে ১৪ জন এবং ম্যালেরিয়াতে ১০ জন আক্রান্ত হয়েছেন। পুরাতন মালদহের কোর্ট স্টেশনের বাসিন্দা ক্ষিতীশ দাসের ম্যালেরিয়ায় মৃত্যু হয়। জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক দিলীপকুমার মণ্ডল বলেন, মশার উপদ্রব রুখতে কীটনাশক, ব্লিচিং স্প্রে করা হচ্ছে। তবে এলাকাবাসীর অভিযোগ, নিয়মিত তা করা হয় না।
আলিপুরদুয়ার
জঙ্গল ও পাহাড় ও চা বাগানে ঘেরা কালচিনি ব্লক বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তালিকায় ম্যালিরিয়া প্রবণ এলাকা। কিছু দিন আগেও প্রতি বছর ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু ঘটত। গত দু’বছরে অনেকটাই কমেছে। এ বছর জুলাই পর্যন্ত জ্বরে আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় ৩৯ হাজার। ম্যালেরিয়া ধরা পড়েছে ১০ জনের। কুমারগ্রামের সংকোশ চা বাগানের এক মহিলার মৃত্যু হয়েছে কয়েকদিন আগেই। শহরের ১৫ নম্বর ওয়ার্ডে এক তরুণী অজানা জ্বরে মারা গিয়েছে।
দক্ষিণ দিনাজপুর
জেলায় অ্যানোফেলিক্স মশার দাপট বেশি। যে কারণে প্রতিবছর জেলায় অন্তত ২৫০ জন ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হন বলে জেলা স্বাস্থ্য দফতর জানিয়েছে। বালুরঘাট ব্লকের চিঙ্গিশপুর, ডাঙা, অমৃতখণ্ড এলাকাগুলিতে ভিন রাজ্যে কাজে গিয়ে অনেকে ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়েছেন বলে স্বাস্থ্য দফতর জানিয়েছে। গত ১১ অগস্ট ডুবাহার এলাকার রঞ্জিত ওঁরাও (৩০) ফ্যালসিফেরাম ম্যালেরিয়ায় মারা যান।
আধিকারিক জগন্নাথ সরকার জানিয়েছেন, ডেঙ্গি রুখতে এক সপ্তাহ ধরে প্রচার চলছে। পুরসভা ও পঞ্চায়েতের তরফে মশানাশক গ্যাস, তেল ও পাউডার ছড়ানোর কাজ চলছে। বাসিন্দাদের দাবি, প্রশাসনের তৎপরতা আরও বাড়ানো দরকার।
মালদহ
স্বাস্থ্য দফতরের এক কর্তা জানান, শহর জুড়ে রয়েছে নিকাশি নালা এবং জঞ্জালের স্তুপ। শহরেই রয়েছে খাটালও। তাই মশার দাপটও রয়েছে। এখন পর্যন্ত জেলাতে ডেঙ্গিতে ১৪ জন এবং ম্যালেরিয়াতে ১০ জন আক্রান্ত হয়েছেন। পুরাতন মালদহের কোর্ট স্টেশনের বাসিন্দা ক্ষিতীশ দাসের ম্যালেরিয়ায় মৃত্যু হয়। জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক দিলীপকুমার মণ্ডল বলেন, মশার উপদ্রব রুখতে কীটনাশক, ব্লিচিং স্প্রে করা হচ্ছে। তবে এলাকাবাসীর অভিযোগ, নিয়মিত তা করা হয় না।
দক্ষিণ দিনাজপুর
জেলায় অ্যানোফেলিক্স মশার দাপট বেশি। যে কারণে প্রতিবছর জেলায় অন্তত ২৫০ জন ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হন বলে জেলা স্বাস্থ্য দফতর জানিয়েছে। বালুরঘাট ব্লকের চিঙ্গিশপুর, ডাঙা, অমৃতখণ্ড এলাকাগুলিতে ভিন রাজ্যে কাজে গিয়ে অনেকে ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়েছেন বলে স্বাস্থ্য দফতর জানিয়েছে। গত ১১ অগস্ট ডুবাহার এলাকার রঞ্জিত ওঁরাও (৩০) ফ্যালসিফেরাম ম্যালেরিয়ায় মারা যান।