প্রতীকী ছবি।
জলপাইগুড়ি জেলায় কোনও মাসে গড়পরতা যত পরিবার একশো দিনের কাজ পেয়ে থাকেন, জেলা প্রশাসনের পরিসংখ্যানে দেখা যাচ্ছে, লকডাউনের সময়ে তার থেকে প্রায় ১১ থেকে ১৪ গুণ বেশি সংখ্যক পরিবার কাজ পেয়েছেন।
এই পরিসংখ্যান দেখে চমকে উঠেছেন জেলা প্রশাসনেরই অনেক আধিকারিক। ওই পরিসংখ্যান থেকেই জানা যাচ্ছে, যে সংখ্যক শ্রমদিবস এক একটি মাসে জেলায় তৈরি হয়, গত মে, জুন এবং জুলাই মাসে তৈরি হয়েছে তার ১৫ গুণ বেশি শ্রমদিবস। খাতায় কলমে এত বিপুল সংখ্যক বাসিন্দা কাজ পেলেও চলতি আর্থিক বছরে একশো দিনের প্রকল্পের কাজ শেষ করার শতাংশের হারে রাজ্যের বেশ কিছু জেলার নিরিখে পিছিয়েই রয়েছে জলপাইগুড়ি।
জেলা প্রশাসন সূত্রে খবর, চলতি আর্থিক বছরের শুরু থেকে এখনও জেলায় প্রায় ৬৭৭৪টি প্রকল্পের কাজ শুরু হলেও শেষ হয়েছে মাত্র ৭২টি। একদিকে জেলার বিপুল সংখ্যক বাসিন্দার এই প্রকল্পে কাজ পাওয়া এবং অন্যদিকে কাজে অগ্রগতি কম— এই দুই খতিয়ে দেখতেই জেলায় কেন্দ্রীয় অডিট দল আসছে বলে সূত্রের খবর।
জেলা প্রশাসনের পরিসংখ্যান বলছে, লকডাউন শুরুর পরে এপ্রিল মাসে জলপাইগুড়ির ১২,৫৭৬টি পরিবার একশো দিনের কাজ পেয়েছিল। মে মাসে কাজ পাওয়া পরিবারের সংখ্যা ১১ গুণের বেশি বেড়ে হয়েছে ১ লক্ষ ৪০ হাজার ৪৩৬। জুন মাসে এই সংখ্যা আরও বেড়ে দাঁড়ায় ১ লক্ষ ৭৮ হাজার ২৫৪ পরিবারে। এটিই সর্বকালীন রেকর্ড বলে দাবি করছেন প্রকল্পে যুক্ত কর্মী-আধিকারিকদের অনেকেই। একই ভাবে বেড়েছে শ্রমদিবসের সংখ্যাও। যেখানে এপ্রিল মাসে জেলায় ২ লক্ষ ১১ হাজার শ্রমদিবস তৈরি হয়েছিল, সেখানে মে মাসে প্রায় সাড়ে ২৩ লক্ষ এবং জুন মাসে প্রায় সাড়ে ৩০ লক্ষ শ্রমদিবস তৈরি হয়েছে বলে
প্রকল্পের মাসিক রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে।
এত বিপুল পরিবারকে কাজ পাইয়ে দিতে জেলায় কী নতুন কাজের সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে?
জলপাইগুড়ির জেলাশাসক অভিষেক তিওয়ারি বলেন, “নতুন কাজ সে ভাবে বাড়েনি। তবে লকডাউনের সময়ে আমাদের লক্ষ্য ছিল যত বেশি সংখ্যক পরিবারকে একবার করে কাজ পাইয়ে দেওয়া যায়। তাই সংখ্যাটি কয়েক মাসে বেশি মনে হচ্ছে। বছরের শেষে মোট কাজ পাওয়া পরিবারের গড় সংখ্যা অন্যান্য বছরের তুলনায় খুব বেশি হেরফের হবে না।” প্রকল্পের কাজ শেষ হতে বেশি সময় লাগা নিয়ে জেলাশাসক বলেন, “কাজ শেষের সব তথ্য ওয়েবসাইটে আপটেড করা যায়নি। গত কয়েক দিন ধরে আপডেটের কাজ বন্ধ রয়েছে। আপডেট হলে পূর্ণাঙ্গ তথ্য মিলবে।”
বিজেপির জেলা সভাপতি বাপি গোস্বামী বলেন, “কেন্দ্রীয় অডিট দল এসে আসল তথ্য বের করতে পারবেন। আমাদের আশঙ্কা অনেক তথ্যে জল মেশোনা হয়েছে, কোথাও বা জলে তথ্যে মেশোনা হয়েছে।” তাঁদের এই দাবি মানতে চাননি তৃণমূল নেতৃত্ব। যদিও তাঁরা প্রকাশ্যে বলছেন, ‘‘এটা পুরোপুরি প্রশাসনিক বিষয়। তাই এখানে দলের তরফে কিছু বলার নেই।’’