সড়ক জুড়ে ছোটবড় যানবাহন। বাইকের দৌরাত্ম্য। উধাও ফুটপাত। পা ফেলার জায়গা হারিয়ে যানজটে কাহিল পথচারী। রাস্তা পারাপারের জন্য লম্বা লাইন। অবশেষে জলপাইগুড়ি জেলার বিভিন্ন শহরের ওই পরিচিত ছবি পাল্টাতে উদ্যোগী হল পুলিশ, পুরসভা ও পঞ্চায়েত সমিতি। যানজট নিয়ন্ত্রণে কড়া ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বুধবার ধূপগুড়ি, ময়নাগুড়ি ও জলপাইগুড়ি থানার পুলিশ কর্তাদের সঙ্গে আলোচনায় বসেন জেলা পুলিশ সুপার আকাশ মেঘারিয়া। শহরের প্রধান সড়কে ব্যাটারি চালিত টোটো চলাচলে নিয়ন্ত্রণ, অটো এবং ম্যাজিক গাড়িতে অতিরিক্ত যাত্রীবহন বন্ধ করার মতো বেশ কিছু সিদ্ধান্ত ওই সভায় নেওয়া হয়। জেলা পুলিশ সুপার বলেন, “থানার পুলিশ কর্তাদের বলা হয়েছে পুরসভা, পঞ্চায়েত সমিতি এবং মোটর ভেহিক্যালস কর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে।”
জেলা পুলিশের ওই উদ্যোগের পাশে দাঁড়িয়েছেন বিভিন্ন সংগঠন ও প্রতিষ্ঠান। জলপাইগুড়ি সার্কিট বেঞ্চ দাবি আদায় ও সার্বিক উন্নয়ন সমন্বয় কমিটির সম্পাদক তপন ভট্টাচার্য বলেন, “যানজটে শহর কাহিল হয়ে পড়ছে। দ্রুত যান চলাচল শৃঙ্খলার মধ্যে আনা জরুরি। জেলা পুলিশ ভাল উদ্যোগ নিয়েছে।” জলপাইগুড়ি আনন্দচন্দ্র কলেজের অর্থনীতি বিভাগের প্রধান সুদীপ চক্রবর্তী জানান, ২০১১ সাল থেকে শহরে যানজট উদ্বেগজনকভাবে বেড়ে চলেছে। রাস্তা চওড়া করেও লাভ হচ্ছে না। কারণ, রাস্তার ফুটপাত দখল করে দোকান বসছে। তাঁর উপরে টোটো গাড়ির সংখ্যা বেড়ে চলায় পরিস্থিতি জটিল হয়েছে। তাঁর আশা, “পুলিশ কড়া ব্যবস্থা নিলে সমস্যা অনেকটা কমবে।”
ময়নাগুড়ি ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক বজরংলাল হীরাউৎ বলেন, “নির্দিষ্ট রুট ছেড়ে শহরের রাস্তায় ছোট গাড়ির ভিড় বেড়ে চলেছে। এভাবে কতদিন চলবে।” জেলা পুলিশ সুপার জানান, প্রতিটি যাত্রীবাহী গাড়িকে নির্দিষ্ট রুটে চলতে হবে। নিরাপত্তার জন্য অটো এবং ম্যাজিক গাড়িতে চালকের নাম ও মোবাইল ফোন নম্বর এমন জায়গায় লিখতে হবে যেন সহজে যাত্রীদের নজরে পড়ে।
শুধু জেলা পুলিশ নয়। জলপাইগুড়ি পুরসভা এবং ময়নাগুড়ি পঞ্চায়েত সমিতি যানজট মুক্ত শহর গড়তে পৃথকভাবে বিভিন্ন মহলের সঙ্গে আলোচনায় বসতে তৎপর হয়েছে। আজ, বৃহস্পতিবার পরিবহণ সংগঠন, পুলিশ, নাগরিক কমিটি, ব্যবসায়ী সংগঠনের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনায় বসবেন ময়নাগুড়ি পঞ্চায়েত সমিতি কর্তৃপক্ষ। পঞ্চায়েত সমিতির তৃণমূল সভাপতি সুভাষ বসু বলেন, “যানজট নিয়ন্ত্রণে জেলা পুলিশ তৎপর হয়েছে এটা ভাল কথা। তবে আমরা নিজেদের মতো করে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, পরিবহণ সংস্থা, ব্যবসায়ী সমিতি, নাগরিক কমিটি, পুলিশ এবং দমকলের প্রতিনিধিদের নিয়ে আলোচনায় বসব।”
পঞ্চায়েত সমিতির কর্তারা জানান, ফুটপাত দখল হয়ে যাওয়ায় ময়নাগুড়ি শহরের রাস্তা উদ্বেগজনক ভাবে সঙ্কীর্ণ হয়েছে। ছোটবড় যানবাহনের ভিড়ে ট্রাফিক মোড়, দুর্গাবাড়ি মোড়, নতুন বাজার, জাগৃতি মোড় এলাকা পথচারীদের কাছে বিপজ্জনক। সুভাষবাবু বলেন, “বৃহস্পতিবার সভায় বিভিন্ন মহলের পরামর্শ মেনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” যানজট নিয়ন্ত্রণে ব্যবস্থা নিয়ে জুন মাসে আলোচনায় বসবে জলপাইগুড়ি পুরসভা। পুরসভার চেয়ারম্যান মোহন বসু বলেন, “যানজট নিয়ন্ত্রনের জন্য শহরের রাস্তাকে ওয়ানওয়ে করার পরিকল্পনা রয়েছে। ওই বিষয়ে জুন মাসের প্রথম সপ্তাহে পুলিশ, প্রশাসন সহ বিভিন্ন মহলের সঙ্গে আলোচনায় বসে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”