শোকে বিহ্বল বাতাসি, রয়েছে ক্ষোভও

নার্সিংহোমের বিরুদ্ধে যখন বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন একাধিক গ্রামবাসী, তখন আর একদিকে অঝোরে কেঁদে যাচ্ছিলেন ভবতোষ।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ০৪ নভেম্বর ২০১৯ ০৪:০৪
Share:

প্রতীকী ছবি

বয়স মোটে বছর পাঁচেক। বাতাসিতে বিবেকানন্দ শিশু বিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছিল শ্রেয়ান। এ বার পুজোয় বায়না করায় তাকে টুকটুকে হলুদ রঙের ধুতি-পাঞ্জাবি কিনে দিয়েছিলেন ভবতোষ। সেই ছোট্ট ফুটফুটে শ্রেয়ানের পরিণতি যে এরকম হবে তা স্বপ্নেও ভাবতে পারেননি কেউ। শ্রেয়ানের বাবা ভবতোষ মণ্ডল দীর্ঘ দিন থেকেই এলাকায় তৃণমূল নেতা। তিনি গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধানও। পড়শিদেরও প্রিয় ছিল ছোট্ট শ্রেয়ান। বাসিন্দাদের দাবি, সেই কারণেই মাটিগাড়া উত্তরায়ণ উপনগরীর নার্সিংহোমে ওই শিশুর মৃত্যুর খবর শুনে আবেগ ধরে রাখতে পারেনি রানিগঞ্জ-পানিশালির অনেকেই। রবিবার সকালে প্রায় ৩০ কিলোমিটার দূরের খড়িবাড়ির বাতাসি থেকে মাটিগাড়ার নার্সিংহোমে দলে দলে মহিলা-পুরুষ হাজির হয়ে ক্ষোভে ফেটে পড়েন।

Advertisement

নার্সিংহোমের বিরুদ্ধে যখন বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন একাধিক গ্রামবাসী, তখন আর একদিকে অঝোরে কেঁদে যাচ্ছিলেন ভবতোষ। বলছিলেন, ‘‘আমরা চাই নার্সিংহোমের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হোক। আমার মতো আর কোনও অভাগা বাবাকে যেন তাঁর সন্তান না হারাতে হয়।’’ কথা বলতে গিয়ে প্রায় মাটিতে লুটিয়ে যাচ্ছিলেন এলাকার শাসক দলের এই নেতা। তাঁকে এ ভাবে দেখে কান্নায় ভেঙে পড়েন আশেপাশের অনেকেই। এক আত্মীয় বলেন, ‘‘বাড়িতে বাচ্চাটার মা, ভাই রয়েছে। ওঁদের সামনে কী ভাবে গিয়ে দাঁড়াব আমরা জানি না।’’

শ্রেয়ানের এক ভাইও রয়েছে। তার বয়স বছরখানেক। ছোট ভাই শৌভিককে নিয়ে বাড়িতেই ছিলেন শ্রেয়ানের মা। ভবতোষ এবং তাঁর স্ত্রী সুষ্মিতাদেবীর বড় ছেলের এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় শোকে ডুবে গিয়েছে বাতাসির বাসিন্দারাও। এলাকা সূত্রে জানা গিয়েছে, এ দিন বিকেল চারটে নাগাদ শ্রেয়ানের দেহ বাড়িতে পৌঁছলে এলাকার মানুষ বাড়িতে ভিড় করেন। ছেলের দেহ দেখে কান্নায় ভেঙে পড়েছিলেন শ্রেয়ানের মা সুষ্মিতাদেবী ও অন্য আত্মীয়রা।

Advertisement

তৃণমূল সূত্রের খবর, শাসক দলের নেতা হিসেবে এলাকায় যথেষ্ট ভাল জনসংযোগ ভবতোষের। যে কোনও সমস্যা হলেই নাকি পাশে পাওয়া যায় তাঁকে। তাই এ দিন নার্সিংহোমে তাঁর ছেলের মৃত্যুর খবর শুনেই দলে দলে হাজির হয়েছিলেন গ্রামবাসীরা। তাঁদের অনেকেই জানান, রাজনৈতিক পরিচয় নয় পড়শি পরিচয়েই বাসিন্দারা এসেছেন। গোলমালের খবর পেয়ে দার্জিলিং জেলার তৃণমূল নেতারাও এ দিন নার্সিংহোমে যান।

এ দিন মাটিগাড়ায় বিক্ষুব্ধ জনতাকে সামাল দিতে বেশ বেগ পেতে হয়েছে পুলিশকে। কমব্যাট ফোর্স ছাড়াও, মহিলা র‌্যাফকর্মীদেরও নামাতে হয়েছিল বিক্ষোভ সামাল দিতে। যদিও ভবতোষ ও তাঁর আত্মীয়রা জানান, কোথায় কী ভাঙচুর হয়েছে তা তাঁরা জানেন না।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement