অন্তিমযাত্রায় শহিদ অনিস

দু’ঘণ্টা অন্তর দু’টি ফোন। প্রথম ফোনে মধুকলা রাইকে তাঁর স্বামী জানিয়েছিলেন সপ্তাহ দুয়েক পরেই ফিরবেন। ঘণ্টাদুয়েক পরে দ্বিতীয় ফোনে মধুকলা দেবী জানতে পারেন, কিছু আগেই জঙ্গিদের গুলিতে স্বামীর মৃত্যু হয়েছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ০২ ডিসেম্বর ২০১৬ ০৩:০৪
Share:

কান্নায় ভেঙে পড়েছেন স্ত্রী ও পরিজনেরা। — বিশ্বরূপ বসাক

দু’ঘণ্টা অন্তর দু’টি ফোন। প্রথম ফোনে মধুকলা রাইকে তাঁর স্বামী জানিয়েছিলেন সপ্তাহ দুয়েক পরেই ফিরবেন। ঘণ্টাদুয়েক পরে দ্বিতীয় ফোনে মধুকলা দেবী জানতে পারেন, কিছু আগেই জঙ্গিদের গুলিতে স্বামীর মৃত্যু হয়েছে।

Advertisement

বৃহস্পতিবার দুপুর তিনটেয় সামরিক বাহিনীর বিশেষ বিমানে রাইফেল ম্যান অনিস রাইয়ের দেহ এসে পৌঁছয় বাগডোগরার বায়ুসেনা বিমানবন্দরে। বাগডোগরার শ্মশানে অনিসের অন্তোষ্টি হয়েছে। ২৯ নভেম্বর কাশ্মীরে জঙ্গি হামলায় মৃত্যু হয়েছে অনিসের। সেনা বাহিনীর তরফেই অনিসের পরিবারের সদস্যদের বাগডোগরায় নিয়ে আসা হয়। ২ বছরের মেয়ে রয়েছে অনিসের। বড় হয়ে মেয়েও সেনা বাহিনীতে যোগ দিক এমনটাই ইচ্ছে ছিল অনিসের। এ দিন কথা বলার মতো পরিস্থিতিতে ছিলেন না মধুকলা। অনিসের দিদি পুষ্পা থাপা বললেন, ‘‘আমাদেরও কোনও আপত্তি নেই। দেশের জন্য আমার ভাই শহিদ হয়েছে এটা গর্বের। আমাদের পরিবারের সদস্যদের অনেকেই সেনাতে রয়েছেন।’’

নেপালের কাঠমণ্ডুর একটি গ্রামে বাড়ি অনিসের। সেনাবাহিনীতে যোগ দিতেই বাগডোগরায় এসে বসবাস শুরু করেন। যোগ দেন গোর্খা রেজিমেন্টে। ছুটিতে কখনও বাগডোগরায় আসতেন, কখনও বা নেপালের গ্রামেও ফিরতেন। বছর সাতেক আগে বিয়ে হয়েছিল। মেয়ে হওয়ার পরে পরিবারের সদস্যদের বলেছিলেন, ‘‘আমার মেয়ে সেনা অফিসার হলে খুশি হব।’’ গত বুধবার রাতেই অনিসের পরিবারকে বাগডোগরায় নিয়ে আসে সেনা বাহিনী। ব্যাঙডুবির ৩৩ কোরের সেনা রেজিমেন্টে পরিবারকে রাখা হয়। পরিবারের সদস্যরাই সেনা কর্তৃপক্ষকে জানান, বাগডোগরাতেই শেষকৃত্য হোক এটাই তাঁদের ইচ্ছে। সেই মতো বাগডোগরা শ্মশানে গান স্যালুট দিয়ে শেষকৃত্য সম্পন্ন হয় আনিসের।

Advertisement

রাইফ্যাল ম্যান অনিসের এবার বিভাগীয় পরীক্ষাতেও বসার কথা ছিল। রাইফেল ম্যান থেকে নায়েক হওয়ার পরীক্ষা দেবে বলে অনিস জানিয়েছিলেন জামাইবাবু ভক্তবাহাদুর রাইকে। এ দিন বাগডোগরায় এসেছিলেন ভক্তবাহাদুরও। তিনিও অবসরপ্রাপ্ত সেনা জওয়ান। ভক্তবাহাদুরবাবু বলেন, ‘‘অনিস মাঝেমধ্যেই বলত, দেশের জন্য শহিদ সকলে হতে পারে না, তার জন্য ভাগ্য চাই।’’ কাশ্মীরে টহলদারির সময়ে হঠাৎই জঙ্গিহানা হয়। দীর্ঘক্ষণ গুলি বিনিময় চলে। জঙ্গিদের গুলিতে অনিস সহ ৭ সেনার মৃত্যু হয়। এ দিন বাগডোগরার শ্মশানে সেনার মেজর, ব্রিগেডিয়ার পদ মর্যাদার অফিসাররা উপস্থিত ছিলেন।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement