Malda River Erosion

‘আমরা কি ঘর পাব না’

মালদহ জেলায় নদী-ভাঙন নিত্যদিনের সমস্যা। জেলার প্রায় ৮০ কিলোমিটার এলাকা দিয়ে বয়ে গিয়েছে গঙ্গা। প্রতি বছরই ভাঙনে জেরবার হচ্ছে গঙ্গাপারের বিস্তীর্ণ এলাকা।

Advertisement

জয়ন্ত সেন

শেষ আপডেট: ০৫ ডিসেম্বর ২০২৪ ০৮:৫৪
Share:

কনকনে ঠান্ডায় এ ভাবেই কাটছে রাত। নিজস্ব চিত্র।

ভাঙনের জেরে গঙ্গা বইছে ভিটের দোরে। ভিন্ রাজ্যে হাড়ভাঙা দিনমজুরির টাকায় তিল-তিল করে গড়ে তোলা পাকা ঘরবাড়ি আতঙ্কে ভেঙে নিতে হয়েছে। নিজস্ব জমি না থাকায় ওই ভিটেতেই ত্রিপলের নীচেই বসবাস করতে হচ্ছে। আবাস যোজনায় অনেকেই যখন ঘর পাচ্ছে, তখন ভাঙনে পীড়িত মালদহের রতুয়ার শ্রীকান্তটোলার বাসিন্দা ফুলকুমারী মণ্ডলদের মতো দুর্গতদের আকুতি ও প্রশ্ন, “আমরা কি ঘর পাব না? আমাদের কি পুনর্বাসন দেওয়া হবে না? নদীপারে প্রবল শীত ও বর্ষায় ত্রিপলের নীচে কী ভাবে বাস করব?”

Advertisement

মালদহ জেলায় নদী-ভাঙন নিত্যদিনের সমস্যা। জেলার প্রায় ৮০ কিলোমিটার এলাকা দিয়ে বয়ে গিয়েছে গঙ্গা। প্রতি বছরই ভাঙনে জেরবার হচ্ছে গঙ্গাপারের বিস্তীর্ণ এলাকা। এ বারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। গঙ্গা ভাঙনে জেলায় ভিটেমাটি হারিয়েছেন শতাধিক বাসিন্দা। ভাঙনের আগ্রাসী রূপ দেখে নদীপারের বাসিন্দারা অনেকেই ঘরবাড়ি ভেঙে নিয়েছেন। বাঁধের ভাঙা অংশ দিয়ে জল ঢুকে দু’দফায় বন্যা হয়েছে মানিকচক ব্লকের ভূতনির তিনটি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায়। পাশাপাশি জেলায় ফুলহার নদী বয়ে গিয়েছে সাড়ে ৪৮ কিলোমিটার এলাকা দিয়ে। এই নদীরও ভাঙন রয়েছে। তবে মহানন্দা, টাঙন ও পুর্নভবার মতো নদী জেলায় প্রবাহিত হলেও সেগুলিতে তেমন ভাঙন নেই।

মূলত গঙ্গা ও ফুলহারের ভাঙনে যে সমস্ত পরিবার ঘরবাড়ি হারিয়েছেন বা আতঙ্কে ঘরবাড়ি ভেঙে নিয়েছেন তাঁদের অনেকেই এখন কেউ ত্রিপলের নীচে বা কেউ অন্যের জমিতে অস্থায়ী আস্তানা তৈরি করে বসবাস করছেন। প্রশাসন সূত্রেই জানা গিয়েছে, জেলায় এ বার প্রায় এক লক্ষ মানুষ আবাস যোজনায় ঘর পেতে চলেছেন। সে পরিস্থিতিতে ভাঙন দুর্গতেরা প্রশ্ন তুলেছেন, তাঁরা কি ঘর পাবেন না?

Advertisement

রতুয়া ১ ব্লকের মহানন্দাটোলার শ্রীকান্তটোলার বাসিন্দা ফুলকুমারী মণ্ডলের স্বামী দ্বিজেন। তিনি ভিন‌্-রাজ্যের শ্রমিক। দিল্লিতে বেসরকারি আবাসনে নির্মাণ শ্রমিক হিসাবে কাজ করছেন। লক্ষ্মীপুজোর সময় থেকে এলাকায় ভাঙন হওয়ায় কাজ ফেলে বাড়িতে ফিরে এসেছেন। ফুলকুমারী বলেন, “দিল্লিতে দিনরাত এক করে কাজ করায় স্বামীর জমানো টাকায় বছর দুয়েক আগে, দুটি পাকা ঘর তৈরি করতে পেরেছিলাম। তখন নদী প্রায় এক কিলোমিটার দূরে ছিল। দু’বছরেই নদী ঘরের দোরগোড়ায় চলে এল। লক্ষ্মীপুজোর পরে যে ভাবে ভাঙন শুরু হয়েছিল, আমরা ভেবেছিলাম, এ বারে বোধ হয় ভিটেমাটি গঙ্গায় বিসর্জন হবে। সে আতঙ্কে নিজেরাই ঘর ভেঙে নিয়েছিলাম। নদী ঘরের দোরে এসে থমকেছে। এখন ভাঙা ভিটেতেই প্রশাসনের দেওয়া ত্রিপলে দিন কাটাতে হচ্ছে। নতুন করে আর ঘর তৈরির ক্ষমতা নেই। এই অসহায় পরিস্থিতিতে আমরা কি আবাস যোজনায় ঘর পেতে পারি না?”

একই আকুতি ভাঙন-দুর্গত ডুবি মণ্ডল, সীমা মণ্ডল, মেনকা মণ্ডল, নির্মল মণ্ডলদের। তাঁরা বলেন, “আবাস যোজনায় ঘর পেতে ও পুনর্বাসনের দাবি জানিয়ে প্রশাসনের কাছে আবেদনও করেছি। কিন্তু কোনও আশ্বাস মেলেনি।” পঞ্চায়েত সদস্য কিরণশঙ্কর মণ্ডল বলেন, “শতাধিক পরিবার হয় ভাঙনে ঘর হারিয়েছেন বা আতঙ্কে বাড়ি ভেঙে নিয়েছেন। তাদের নিজস্ব জমি বলতে কিছুই নেই। তাঁদের পুনর্বাসন প্রয়োজন।” রতুয়া ১-এর বিডিও রাকেশ টোপ্পো বলেন, “দুর্গতদের পুনর্বাসনে জমির খোঁজ চলছে। আবাসের বিষয়টি কর্তৃপক্ষ দেখছেন।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement