সেতু তৈরির কৃতিত্বের দাবি ঘুরছে প্রচারে

মহকুমা শহরে যেতে ভরসা সেই ভুটভুটি। তাতেই মানুষ ওঠে, সাইকেল ওঠে, মোটরবাইক ওঠে, মাঝে মধ্যে ছোট গাড়িও চেপে বসে। গরমের সময় অবশ্য একটা বাশের সাঁকো তৈরি হয়। প্রায় দুই কিলোমিটার নদীপথ পেরিয়ে ওই ছোট্ট সাঁকোতে যাতায়াত করতে হয়।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কোচবিহার শেষ আপডেট: ২১ মার্চ ২০১৬ ০২:৪২
Share:

সিঙ্গিমারি নদীর উপরে চলছে সেতু তৈরির কাজ। নিজস্ব চিত্র।

ভোট আসে। ভোট যায়। সেতু আর হয় না।

Advertisement

মহকুমা শহরে যেতে ভরসা সেই ভুটভুটি। তাতেই মানুষ ওঠে, সাইকেল ওঠে, মোটরবাইক ওঠে, মাঝে মধ্যে ছোট গাড়িও চেপে বসে। গরমের সময় অবশ্য একটা বাশের সাঁকো তৈরি হয়। প্রায় দুই কিলোমিটার নদীপথ পেরিয়ে ওই ছোট্ট সাঁকোতে যাতায়াত করতে হয়। এ বারেও তার কোনও হেরফের হয়নি। শুধু সেতু তৈরির কাজ শুরু হয়েছে। ভোটের বাজারে তার কৃতিত্ব নিতেই ঝাঁপিয়ে পড়েছে শাসক থেকে বিরোধী সব দল। সিতাইয়ের সিঙ্গিমারি নদীর উপরে প্রায় ৯৫০ মিটার লম্বা ওই সেতুর কাজ শুরু হয়েছে ২০১২ সালে। ১২৫ কোটি টাকা খরচ করে ওই সেতু তৈরি হচ্ছে। ইতিমধ্যে প্রায় ৭৫ শতাংশ কাজ হয়ে গিয়েছে। প্রচারে সব দলের মুখে থাকছে এই সেতুর কথাই।

শাসক দলের দাবি, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পরে ওই সেতু তৈরিতে উদ্যোগী হন। সরকারে আসার এক বছরের মাথায় টাকা বরাদ্দ করে সেতুর কাজ শুরু করা হয়। গত ৩৪ বছরে বাম সরকার ওই সেতু নিয়ে কোনও উৎসাহ দেখায়নি। সিতাইয়ের তৃণমূল প্রার্থী জগদীশ বসুনিয়া বলেন, “এই সেতু মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জন্য হয়েছে। তিনি উদ্যোগী হয়েছিলেন। ওই সেতু সিতাইয়ের মানুষের স্বপ্ন। যা পূরণ করেছে তৃণমূল সরকার। মানুষ এই কথা কখনই ভুলবে না। আর সিপিএম বা বামেরা তো কোনও কথাই বলতে পারে না। তাদের ৩৪ বছরের জন্যই সিতাইয়ের মানুষকে কষ্টে দিন কাটাতে হয়েছে।” দিনহাটার তৃণমূল প্রার্থী উদয়ন গুহ অবশ্য বলছেন, “ওই সময় ছোটাছুটি হয়েছে। শিলান্যাস হয়েছে। কিন্তু কাজ হয়নি। যার পিছনে একটা রাজনৈতিক কারণ ছিল। ওই সেতুর কাজ উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দফতরের টাকায়। বাম আমলে ওই নামে কোনও দফতর ছিল না। এতেই সব স্পষ্ট।”

Advertisement

বামেদের পাল্টা দাবি, বাম আমলেই ওই সেতু তৈরিতে উদ্যোগী হয়েছিল প্রশাসন। কমল গুহ ওই সেতু নিয়ে দীর্ঘদিন আন্দোলন করেন। ক্ষিতি গোস্বামী পূর্তমন্ত্রী থাকার সময়েই ওই প্রকল্প পাশ হয়। সেই সময় সমীক্ষা হয়। কাজ শুরু হওয়ার আগে সরকার বদল হয়। নতুন সরকার ক্ষমতায় এসে কাজ শুরু করে। দিনহাটার বাম প্রার্থী অক্ষয় ঠাকুর বলেন, “ওই সেতুর জন্য আন্দোলন সংগঠিত করেছেন কমল গুহ। যার জন্যই তা তৈরিতে উদ্যোগ নেওয়া হয়। বাম আমলেই সব কাজ সম্পূর্ণ হয়। শুধু টাকা বরাদ্দের অপেক্ষা ছিল। উদয়নবাবু সব জানেন।” সিতাইয়ের বিদায়ী বিধায়ক কংগ্রেসের কেশব রায়। তাঁর মন্তব্য, “সিতাইয়ের সেতুর তৈরিতে কে উদ্যোগী হয়েছিল তা সবাই জানে। বিধানসভায় গিয়ে আমি প্রথম ওই সেতু নিয়ে লড়াই শুরু করি। এর পরেই টাকা বরাদ্দ করা হয়। যারা কৃতিত্ব দাবি করছেন তারা ঠিকমতো জানেন না কিভাবে ওই কিভাবে কি হল।”

বাসিন্দারা জানাচ্ছেন, প্রতি বছরই সিতাই বিধানসভা আসনে ওই সেতু তৈরি নিয়ে প্রতিশ্রুতি দেওয়াটা হয় প্রধান বিষয়। ওই এলাকার মানুষ ওই সেতুর জন্য চরম কষ্টে দিন কাটাতে বাধ্য হন। বর্ষাকালে চলাচল করা মাঝে মধ্যে অসম্ভব হয়ে পড়ে। সব থেকে বেশি অসুবিধেয় পড়তে হয় কৃষিজ পণ্য আবং প্রশাসনিক কাজ করা নিয়ে। সিতাই দিনহাটা মহকুমার একটি অংশ। সিতাই থেকে দিনহাটা শহরে আসতে হলে ওই নদী পার হতে হয়। সিতাই এবং লাগোয়া শীতলখুচির একটি এলাকার প্রধান কৃষিজ সম্পদ তামাক। যার প্রধান বাজার রয়েছে দিনহাটাতেই। অথচ দিনহাটায় যেতে হলে তাদের মাথাভাঙা হয়ে প্রায় আশি কিলোমিটার ঘুরে দিনহাটায় যেতে হত। ফলে ফসলের দাম পড়ে যায় অনেক বেশি। অথচ দিনহাটা থেকে নদী পার করে পনেরো কিলোমিটার রাস্তা পেরোলেই সিতাই যাওয়া যায়। স্বাভাবিক ভাবেই ওই এলাকা এবং দিনহাটা, শীতলখুচির একটি বাসিন্দাদের বেশিরভাগ ওই সেতু নিয়ে সরব ছিলেন। তাই প্রতিবছর ভোটে ওই তিন বিধানসভাতেই ঘুরেফিরে আসে সেতুর দাবি। ওই তিন বিধানসভাতেই তার প্রভাব পড়ে বলে অনুমান নেতাদেরও।

তৃণমূলের নেতাদের দাবি, এ বারে ২০১২ সালে ওই সেতুর কাজ শুরু হওয়ার পরে ২০১৬ সালের মধ্যে তা শেষ করার আশ্বাস দেওয়া হয়। শেষপর্য়ন্ত তা শেষ না হলেও সেতুর বেশিরভাগ কাজ শেষ হয়েছে। আর বছর দেড় থেকে দু’য়ের মধ্যে ওই সেতু ব্যবহার করতে পারবেন বাসিন্দারা। তাই তাদের আমলে এই কাজ হয়েছে বলে বাসিন্দারা তাদেরই ভোট দেবেন বলে তৃণমূল নেতাদের আশা। পক্ষান্তরে, কংগ্রেস ও বামেরাও সেতু তৈরির কৃতিত্ব দাবিতে আসরে নেমেছে। বাসিন্দারা ভোটবাক্সে কার ডাকে সাড়া দেন সেটাই এখন দেখার।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement