শুকানো হচ্ছে মাখনা ফল। চাঁচলে। — নিজস্ব চিত্র
ভরা মরসুম চলছে মাখনা চাষের। মালদহের অন্যতম অর্থকরী ফসল এই মাখনা। মাখনা থেকে তৈরি খইয়ের চাহিদা বিদেশেও রয়েছে। কিন্তু নোট বাতিলের ধাক্কায় দাম পড়ে গিয়েছে মাখনার। কম দামে মাখন বিক্রি করতে পারছেন না চাষিরা। নোটের গেরোয় ব্যবসায়ীরাও চাষিদের কাছ থেকে মাখনা কিনতে পারছেন না। ফলে চরম সঙ্কটে পড়েছে মাখনা চাষ।
মালদহ জেলা-সহ রাজ্যের মধ্যে মাখনা চাষের অন্যতম এলাকা হরিশ্চন্দ্রপুর। এখানে মাখনা থেকে খই তৈরির ৫৫টি প্রক্রিয়াকরণ ইউনিট রয়েছে। চাষিদের ঘরে মাখনা পড়ে থাকায় কাঁচাপণ্যের অভাবে ধুঁকছে সেই কারখানাগুলিও। ফলে বিপাকে পড়েছে সেই কারখানার শ্রমিকেরাও। প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে মাখনার সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে ৪০ হাজারেরও বেশি মানুষের জীবিকা। যা পরিস্থিতি দাঁড়িয়েছে, তাতে এই মরসুমে কয়েক কোটি টাকার ব্যবসা মার খাওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে ব্যবসায়ীদের সূত্রে জানা গিয়েছে। ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, হরিশ্চন্দ্রপুর ব্যবসার অন্যতম এলাকা হলেও পুরো এলাকায় মাত্র দু’টি এটিএম রয়েছে। সেই দু’টি এটিএমও নিয়মিত খোলা থাকে না বলেও অভিযোগ উঠেছে।
উচ্চ প্রোটিনযুক্ত ও স্বাস্থ্যকর খাবার হিসেবে মাখনার ব্যাপক চাহিদা রয়েছে পাকিস্তান-সহ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলিতে। হরিশ্চন্দ্রপুর থেকে প্রতিদিনই মাখনার খই প্যাকেটজাত করে পাঠানো হয় দিল্লি, লখনউ, কানপুর, পঞ্জাবে। সেখান থেকে সেগুলি রফতানি করা হয় বিদেশে। মাখনার এই চাহিদার উপর ভিত্তি করেই গড়ে উঠেছে একের পর এক খই প্রক্রিয়াকরণ ইউনিট। হরিশ্চন্দ্রপুরে মাখনার ৫৫টি প্রক্রিয়াকরণ ইউনিটে ১৫ হাজার শ্রমিক কাজ করেন। এছাড়া মাখনা চাষ ও আনুষাঙ্গিক ক্ষেত্রে জড়িত আরও অন্তত হাজার তিরিশেক মানুষ। অক্টোবরের শেষে জলাশয় থেকে মাখনা উঠতে শুরু করে। এই মরসুমের সমস্ত মাখনা উঠে গিয়েছে। কিন্তু তা বিক্রি করতে পারছেন না চাষিরা।
এই পরিস্থিতিতে মাখনার দাম প্রতি কিলোগ্রামে ১০০ টাকা করে কমে গিয়ে ১৫০ টাকা প্রতি কিলোগ্রামে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু তারপরেও তা বিক্রি করতে পারছেন না চাষিরা। হরিশ্চন্দ্রপুরের নানারাহীর মহম্মদ আবু জলাশয় লিজ নিয়ে ১০০ বিঘা এলাকায় মাখনার চাষ করেছিলেন। তিনি বলেন, ‘‘ব্যবসায়ীরা পাঁচশো ও হাজারের পুরানো নোট দিচ্ছেন। কিন্তু ওই টাকা নিয়ে কী করব আমরা।’’ একই সঙ্কটের কথা জানান কৃষক আব্দুল লতিফ, প্রদীপ মণ্ডলরাও।
কুমেদপুরের এক মাখনা ব্যবসায়ী মহম্মদ রকি বলেন, ‘‘ব্যাঙ্কের লাইনে দাঁড়িয়ে প্রতিদিন মাত্র দু’হাজার টাকা পাওয়া যাচ্ছে।’’ ওই টাকায় ব্যবসা চালু রাখা সম্ভব নয় বলে জানান তিনি। একই অভিযোগ জেলা পরিষদের অধ্যক্ষ, স্থানীয় বাসিন্দা শেখ খলিলেরও। তিনি নিজেও মাখনা ব্যবসায়ী। তাঁর কথায়, ‘‘হরিশ্চন্দ্রপুরে কয়েক কোটি টাকার মাখনার ব্যবসা হয়। ব্যাঙ্কে সারাদিন লাইন দিয়ে যা টাকা মেলে, তাতে মাখনা কেনার টাকা থাকে না।’’ যা পরিস্থিতি তাতে চাষি, ব্যবসায়ীরা ক্ষতির মুখে পড়ার পাশাপাশি মাখনা শ্রমিকদেরও না খেয়ে মরতে হবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন তিনি।