উত্তর দিনাজপুরের কালিয়াগঞ্জ থানার বাঘন এলাকায় নির্যাতিতা নাবালিকার অস্বাভাবিক মৃত্যুর দু’দিন কেটেছে। অথচ আত্মহত্যায় প্ররোচনা দেওয়ার ঘটনায় অভিযুক্ত প্রতিবেশি যুবককে গ্রেফতার করা দূরের কথা, অভিযুক্তের খোঁজে দক্ষিণ দিনাজপুরের বালুরঘাটে পুলিশের কোনও দল এখনও পর্যন্ত যায়নি কেন, সেই প্রশ্নে ক্ষোভে ফুঁসছেন মৃতার পরিবারের লোকজন ও প্রতিবেশিরা।
মৃতার পরিবারের লোকেদের অভিযোগ, সোমবার সকালে কালিয়াগঞ্জ থানার তদন্তকারী পুলিশকর্মীরা তাঁদের বাড়িতে গিয়ে সকলের নামধাম নথিভূক্ত করে ফিরে যান। গত শনিবার রায়গঞ্জের ফাস্ট ট্র্যাক ২ আদালতে নির্যাতিতা ওই কিশোরী ধর্ষণে অভিযুক্ত ওই যুবকের বিরুদ্ধে কী সাক্ষ্য দিয়েছিল ও কারা তাকে হুমকি দিয়েছিল, সেই ব্যাপারে পুলিশ কোনও প্রশ্নই করেনি।
জেলা পুলিশ সুপার সৈয়দ ওয়াকার রেজার দাবি, ‘‘অভিযুক্তের খোঁজে পুলিশ তল্লাশি শুরু করেছে। শীঘ্রই তাকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।’’ অভিযুক্তকে গ্রেফতার করতে বালুরঘাটে পুলিশ পাঠানো হয়েছে কি না বা তাকে ধরতে দক্ষিণ দিনাজপুর পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করে সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে কি না, সেই বিষয়ে পুলিশ সুপার কোনও মন্তব্য করতে চাননি। তবে বালুরঘাট থানা সূত্রে খবর, এখনও অবধি কালিয়াগঞ্জ থানা থেকে তাদের এ বিষয়ে কোনও খোঁজ নেওয়ার কথা বলা হয়নি।
সৈয়দ ওয়াকার রেজার কথায়, ‘‘পুলিশকে পুলিশের মতো কাজ করছে। আমরা অভিযুক্তকে গ্রেফতার করব।’’
দিনমজুর পরিবারের মৃত ওই কিশোরীদের বাড়িটি টিনের তৈরি। ওই বাড়িতে মোট চারটি ঘর রয়েছে। তার বাড়ির একেবারে পাশের বাড়িটিতেই দু’মাস আগে পর্যন্ত পেশায় দিনমজুর অভিযুক্ত ধীমান সরকার তার বাবা পেশায় গৃহশিক্ষক বিশ্বনাথ সরকার ও মা ঝুমা সরকারকে নিয়ে থাকতেন। সে কয়েক মাস আগে বিয়ে করলেও স্ত্রী বাড়িতে থাকত না।
টিনের চালা দেওয়া পাশাপাশি দুটি ঘরযুক্ত পাকা ওই বাড়িটি অবশ্য দুমাস আগেই বিশ্বনাথবাবু নির্যাতিতা ওই নাবালিকা ও তার দাদার নামে লিখে দিয়ে তারা বালুরঘাটে এক আত্মীয়ের বাড়িতে চলে যান বলে মৃতার পরিবারের দাবি। তার পর থেকে মৃতার পরিবারের লোকজন ও তাঁদের আত্মীয়রা পালা করে ওই বাড়িতে থাকতে শুরু করেন। সোমবার দুপুরে মৃত ওই নাবালিকার বাড়িতে গিয়ে দেখা গেল তার মা মেয়ের মৃত্যুর শোকে কান্নায় ভেঙে পড়েছেন। তাঁকে সান্ত্বনা দিচ্ছেন মৃতার বাবা, দাদা ও দিদি। মৃতার বাবা, মা ও দাদা সকলেই দিনমজুর। মৃতার মা কাঁদতে কাঁদতে বললেন, ‘‘মেয়ে আত্মহত্যা করার দু’দিন পেরিয়ে গেল, কিন্তু পুলিশ এখনও ধীমানকে গ্রেফতার করতে পারল না। শুনেছি ধীমান পরিবারের লোকজনকে নিয়ে বালুরঘাটে ওর শ্বশুরবাড়ির পরিচিত কারোর বাড়িতে রয়েছে। পুলিশের উচিত ছিল বালুরঘাটে গিয়ে ওকে খুঁজে বার করে গ্রেফতার করা। ও গ্রেফতার না হওয়া পর্যন্ত আমরা শান্তি পাচ্ছি না।’’
মৃতার বাবার অভিযোগ, শনিবার আদালতে সত্য সাক্ষ্য দেওয়ার পর ওই দিন আমার মেয়েকে ধীমান ও ওর এক আইনজীবী মেয়েকে হুমকি দিয়ে বলে, বোঝাপড়া সত্ত্বেও কেনও মেয়ে আদালতে ধীমানের বিরুদ্ধে ধর্ষণের সাক্ষ্য দিল। তাঁর দাবি, ‘‘মেয়ে বাড়িতে ফিরে ভয়ে রাতে গলায় ওড়নার ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করে। আমরা তো এ সব কথাই এ দিন পুলিশকে বলতে চেয়েছিলাম। কিন্তু পুলিশ তো শুধু আমাদের নামধাম লিখে নিয়ে চলে গেল।’’ বোনের অপমৃত্যুর পর ওই রাতেই মৃতার দাদা কালিয়াগঞ্জ থানায় ধীমানের বিরুদ্ধে আত্মহত্যায় প্ররোচনা দেওয়ার অভিযোগ দায়ের করেন। মৃত ওই নাবালিকার প্রতিবেশীরা বলেন, ‘‘বাড়ি ছেড়ে যাওয়ার আগে ওরা বলেছিল বালুরঘাটে যাচ্ছে।’’
২০১৩ সালের ১৪ ডিসেম্বর রাতে ধীমান ওই নাবালিকার টিনের ঘরের কাঠের দরজার শিকল ভেঙে ভিতরে ঢুকে তাকে খুনের হুমকি দিয়ে ধর্ষণ করে পালিয়ে যায় বলে অভিযোগ। পরদিন নির্যাতিতার অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ অভিযুক্তকে গ্রেফতার করে। এর পর আদালতের নির্দেশে প্রায় তিন মাস সে জেল হেফাজতে ছিল। পুলিশ ওই মামলার চার্জশিট দেওয়ায় সম্প্রতি আদালতে ওই মামলার শুনানি শুরু হয়। শনিবার ওই নাবালিকা ও ধীমান দু’জনেই আদালতে গিয়েছিল।
সরকারি আইনজীবী শেখর পাল বলেন, ‘‘সরকারি আইনজীবীরা আইন মেনেই ওই নাবালিকাকে ওইদিন জেরা করেন। জোর করে বয়ান নেওয়া হয়নি।’’ অভিযুক্তের আইনজীবী স্বরূপ বসাক দাবি করেন, তিনি ও তাঁর সহকারি কোনও আইনজীবী ওই দিন সাক্ষ্যগ্রহণের সময় ছাড়া ওই নাবালিকার সঙ্গে কথাই বলেননি।