ভোটবাক্সেই জলের জবাব

ভোটের আঁচ কেমন ভাবে পড়ছে প্রত্যন্ত এলাকায়? কেমন আছেন দুঃস্থ, একদা নির্যাতিত, বা প্রান্তিক ভোটাররা? জনজীবনের সেই ছবি তুলে ধরছে আনন্দবাজার। খানিক দূরে একটা টিউবওয়েল দেখিয়ে জিজ্ঞাসা করতেই হরেকৃষ্ণ জানালেন, ওই জল খেলে পেটের অসুখ অবধারিত। কয়েক দিন আগেই তাঁর বাবাকে বালুরঘাট হাসপাতালে ভর্তি করেন তিনি।

Advertisement

নীহার বিশ্বাস 

তপন শেষ আপডেট: ০৬ এপ্রিল ২০১৯ ০৮:০১
Share:

অবাক-জলপান: আয়রন মেশানো জলই ভরসা গ্রামে। নিজস্ব চিত্র

সুকুমার রায়ের ‘অবাক জলপান’ নাটকে সামান্য একটু তেষ্টা মেটাতে যে বিড়ম্বনায় পড়েছিলেন পথিক, এক দিন ভরদুপুরে তপনে গিয়ে প্রায় তেমনই অভিজ্ঞতা হল। স্কুটার থামিয়ে রাস্তার পাশে এক মুদির দোকানে খাওয়ার জল চাইতেই দোকানদার হরেকৃষ্ণ সরকার কাঁচুমাচু মুখে বললেন, ‘‘দাদা, খাওয়ার মতো আর সবই আছে, শুধু জলটুকু নেই।’’ এই একবিংশ শতাব্দীতে বালুরঘাট শহর লাগোয়া তপন ব্লকে পানীয় জলের সঙ্কট এখনও এমনই।

Advertisement

খানিক দূরে একটা টিউবওয়েল দেখিয়ে জিজ্ঞাসা করতেই হরেকৃষ্ণ জানালেন, ওই জল খেলে পেটের অসুখ অবধারিত। কয়েক দিন আগেই তাঁর বাবাকে বালুরঘাট হাসপাতালে ভর্তি করেন তিনি। ডাক্তার জানান, ওই আয়রন মেশানো জল খেয়েই পেট খারাপ করেছে।

তপন ব্লকের ভারিলা, শ্রীবই, পাহাড়পুর, তারাজপুরের মতো ছ’-সাতটি গ্রামে হাজার হাজার মানুষ আজও তীব্র জলকষ্টে রয়েছেন। ভারিলার বাসিন্দা সঞ্জয় দাস, সুধারানি মণ্ডল, মাম্পি মিস্ত্রিরা বলেন, ‘‘যাঁদের সামর্থ্য আছে তাঁরা বালুরঘাট থেকে ড্রামে করে জল কিনে আনছেন। যাঁদের সে সামর্থ্য নেই তাঁরা বাধ্য হয়ে টিউবওয়েলের এই বিষজল পান করছেন।’’ তাই ঘরে ঘরে পেটের অসুখ, হাতে পায়ে চামড়ার অসুখ লেগেই আছে।

Advertisement

প্রশাসন সূত্রে খবর, তপন ব্লকের বিস্তীর্ণ এলাকার জলে রয়েছে আর্সেনিক ও ফ্লুয়োরাইড। টিউবওয়েলের জল এত ক্ষতিকারক ধাতুতে ভরা যে, জল কয়েক ঘণ্টা রাখলেই লাল হয়ে যায়। সাবমার্সিবল পাম্প বসানোর মতো স্তরও সব জায়গায় মেলে না।

এলাকার স্কুলগুলোতেও মাঝে কয়েক মাস মিড ডে মিল বন্ধ ছিল পানীয় জলের অভাবে। অবশেষে স্কুলে সাবমার্সিবল পাম্প বসিয়ে জলের সমস্যা কিছুটা মেটানো গিয়েছে।

তপনের চিরকালীন এই সমস্যার সমাধানে প্রশাসন কি কোনও ব্যবস্থাই নেয়নি? বিধায়ক বাচ্চু হাঁসদা দীর্ঘ দিন ধরে প্রতিমন্ত্রী। তিনিও কি কোনও উদ্যোগ নেননি? প্রশ্ন শুনেই সমস্বরে বাসিন্দারা ক্ষোভ উগরে দিয়ে বললেন, ‘‘অনেক বছর থেকে শুনছি এখানে পরিস্রুত পানীয় জল দেওয়া হবে। এ জন্য নাকি ৩০০ কোটি টাকা বরাদ্দও করা হয়েছে। কিন্তু কোথায় সেই সব টাকা, আর কোথায় তার কাজ। আজও কিছুই হয়নি।’’

পরিস্রুত জল না পেয়ে তাই নিজেদের দাবি জানাতে প্রস্তুত হচ্ছেন বাসিন্দারা। তাঁরা জানেন, ভোট চাইতে আসবেনই প্রার্থীরা। তখন তাঁদের কী বলবেন? তাঁদের উত্তর, ‘‘জবাবটা একেবারে ভোটের বাক্সেই দেব।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement