বুথে যাওয়ার জন্য এসেছে গাড়ি। পানঝোরায়। ছবি: দীপঙ্কর ঘটক
চা-বলয়ে ছুটলেন দু’জনেই। আলিপুরদুয়ারের তৃণমূল প্রার্থী দশরথ তিরকে ও বিজেপি প্রার্থী জন বার্লা।
এ দিন সকালে বাড়িরে কাছেই রাধাকৃষ্ণের মন্দিরে পুজো দিয়ে দশরথ পৌঁছন কুমারগ্রাম প্রাথমিক স্কুলে৷ ওই স্কুলেই প্রতিবার সকাল সাতটায় প্রথম ভোটটা দিয়ে আসছেন দশরথ৷ এ দিনও প্রথমেই ভোট দিতে কেন্দ্রের ভিতরে প্রবেশ করেন তিনি৷ তাঁর আঙুলে কালিও দিয়ে দেন ভোটকর্মী৷ কিন্তু ইভিএম মেশিন বিভ্রাটের জেরে ভোট না দিয়েই বেরিয়ে যেতে হয় তাকে৷ এরপরই কুমারগ্রামের বিভিন্ন বুথে ঘুরতে শুরু করেন৷ ভোট যন্ত্র ঠিক হয়েছে জানতে পেরে, ঘণ্টাখানেক পর কেন্দ্রে ফিরে ভোট দেন৷ দশরথের আফশোস, “প্রতিবার আমার বুথে প্রথম ভোটটা আমিই দিই৷ এ বার আর পারলাম না৷”
এরপরই কখনও নাগরাকাটা, কখনও বীরপাড়া বা মাদারিহাটের একের পর এক চা বাগানের বুথগুলিতে ছুটতে শুরু করেন দশরথ। বিকেল পর্যন্ত বেশিরভাগ সময় চা বলয়েই কাটান তিনি। সবশেষে যান ফালাকাটায়। সেখানে বুথে বুথে ঘুরে চলে যান দলের ব্লক পার্টি অফিসে৷ প্রার্থীর ‘সেনাপতি’, তৃণমূলের জেলা সভাপতি মোহন শর্মা দশরথকে জেতাতে গত কয়েকদিন ধরে দিন-রাত এক করে দিয়েছিলেন। ভোটের দিন, বৃহস্পতিবার অবশ্য তিনি দিনভরই কাটান তৃণমূলের জেলা দফতরে। নিজের ঘরে বসে কাগজ-পেন আর তিনখানা মোবাইল ফোন নিয়ে বসে পড়েন তিনি৷
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
বিজেপি প্রার্থী জনও সরেজমিনে পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে নেমেছিলেন সকাল থেকেই। লক্ষ্মীপুর চা বাগানের বাসিন্দা জন নিজে ভোট দিয়েই যান বন্ধ রেডব্যাঙ্ক চা বাগানে। কর্মীদের নির্দেশ দেন, ‘‘ময়দান ছাড়বি না!’’ সেখান থেকে আসেন নাগরাকাটায়। দলের কর্মী-সমর্থকরা তাঁকে প্রত্যন্ত বামনডাঙা অঞ্চলে যেতে অনুরোধ করলেও তিনি বুঝিয়ে বলেন তাঁকে ছ’টি বিধানসভায় ঘুরতে হবে, তাই সব জায়গায় যাওয়া সম্ভব নয়। ঘোরার পথে যেখানেই জন দেখেছেন বিজেপির কর্মীরা বসেছেন, দাঁড়িয়ে তাঁদের জিজ্ঞাসা করেছেন কোনও অসুবিধে হচ্ছে কি না।
এ দিন নাগরাকাটায় নানা বাগানের শ্রমিক মহল্লায় পৌঁছে যায় পিকআপ ভ্যান। একে একে শ্রমিক পরিবারের সদস্যেরা সেই গাড়ির ডালায় উঠে পরছেন। সেই পিকআপ ভ্যান পৌঁছে যায় বুথে বুথে। গাড়িতে ঝান্ডা না থাকায় ভোটাররা কাদের সমর্থক তা সাদা চোখে বোঝার উপায় নেই। তবে নাগরাকাটার চা বলয়ে ভোটারদের এ ভাবে তুলে আনায় বিজেপির জনই এগিয়ে রয়েছেন বাগানের বাসিন্দারাই জানাচ্ছেন। জন অবশ্য বলেন, “আমাদের চা শ্রমিক সমর্থকরা নিজের উদ্যোগেই ভোট কেন্দ্রে পৌঁছে যাচ্ছেন, আমাদের কিছুই করতে হচ্ছে না।” শ্রমিকরা জনের পরিবহণ ব্যবহার করলেও ভোট তৃণমূলকেই দেবেন বলে দাবি তৃণমূল নেতৃত্বের। নাগরাকাটা ব্লক তৃণমূলের পর্যবেক্ষক স্বপন সাহা বলেন, “বিজেপি অনেক টাকা নিয়ে নেমেছে, কিন্তু মানুষ আমাদের সঙ্গে রয়েছে।” সহ প্রতিবেদন: রাজু সাহা