আবেদন: চা বাগান বন্ধের প্রতিবাদ জানিয়ে ভোট বয়কটের ডাক দিয়ে পোস্টার দার্জিলিঙের ঘুম এলাকায়। নিজস্ব চিত্র
সোনাদা স্টেশনের পরের বাঁকেই রাস্তার ধারে সীমা ছেত্রীর ছোট্ট মোমোর দোকান। দিন আনা দিন খাওয়ার সংসার। চিকেন মোমোর অর্ডার দিয়ে পাহাড়ের পরিস্থিতি নিয়ে কথা শুরু করতেই অভিযোগের ডালি নিয়ে হাজির হলেন তাঁর দিদি সুমিত্রা। নিয়মিত জল পাওয়া যায় না, জমির পাট্টা নেই, চা বাগান বন্ধ হওয়ায় কাজ জুটছে না— আরও কত কী-ই!
ভোট এসেছে, নেতারা আসবেন, তাঁদের গিয়েই সমস্যার কথা বলছেন না কেন? এ বার দুই বোন এক সঙ্গে চেঁচিয়ে উঠলেন, ‘‘ভোট নিয়েই সবাই দিল্লিতে পালিয়ে যায়। তাই যার দেখা পাওয়া যাবে না, আর তাকে চাই না।’’ পাহাড়ে প্রচারে কেউ তুলেছে জাতিসত্তার দাবি, কেউ উন্নয়নের প্রশ্নে ভোট চাইছে। তবে সব কিছুর মাঝে সাংসদের ‘দেখা পাওয়াটাও’ সাধারণ মানুষের দাবি হয়ে উঠেছে।
যশোবন্ত সিংহকে নিয়েও পাহাড়ের অভিযোগ ছিল। সেই অভিযোগ ‘ক্ষোভ’ হয় ১০৫ দিনের বন্ধের পরে। চৌরাস্তায় ঘুরে ঘুরে চা বিক্রি করেন সনু লামা। তাঁর কথায়, ‘‘পাহাড়ের দুঃসময়ে সব থেকে বেশি দরকার ছিল সুরেন্দ্র সিংহ অহলুওয়ালিয়াকে। আন্দোলনের সময় কত দিন যে না খেয়ে কাটিয়েছি, তার ঠিক নেই। তবুও তাঁকে আমরা পাইনি। সুখ, দুঃখে যার কাছে যেতে পারব, তাকেই চাই।’’ সনু, সীমার মতো কাছের লোককে চাওয়ার দাবি উঠছে পাহাড়ের অনেক জায়গা থেকেই। সাধারণ মানুষের যা ‘কাছের লোক’, রাজনৈতিক দলগুলির কাছে তা ‘ভূমিপুত্র’। সব দলই নিজেদের প্রার্থীকে ভূমিপুত্র হিসেবে ব্যাখ্যা দিয়েছেন।
রাজু বিস্তাকেও তাই ‘বহিরাগত’ বলে কটাক্ষ করেছেন অনেকেই। যদিও নিজেকে পাহাড়ের লোক প্রমাণে মরিয়া রাজুর ব্যাখ্যা, ‘‘মাটিগাড়ার খাপরাইল মোড়েই আমার শ্বশুরবাড়ি। দার্জিলিং, কালিম্পংয়ে অনেক দিন থেকেই সমাজসেবা মুলক কাজ করছি। পাহাড়ের সমস্যা বুঝি।’’ বাকি জীবন পরিবার-সহ পাহাড়েই কাটানোর ইচ্ছেও প্রকাশ করেছেন রাজু। যদিও সেই ইচ্ছেকে ‘ভাঁওতা’ বলেছেন বিনয় তামাং। আর তৃণমূলের দার্জিলিঙের পর্যবেক্ষক অরূপ বিশ্বাসের কথায়, ‘‘ভূমিপুত্র তো আমাদের প্রার্থী। তিনি এ বার বহিরাগতকে হারিয়ে দেবেন।’’ বিজেপির পাহাড়ের নেতা-কর্মীরা আবার বলছেন, ‘‘তৃণমূলই তো বহিরাগত।’’
এই টানাপড়েনের মধ্যে কেমন আছে আম-দার্জিলিং? রবিবার বৃষ্টির পরে সোমবার ম্যাল জুড়ে রোদ। সেখানেই দেখা হল কলেজ পড়ুয়া অঞ্জু লামার সঙ্গে। ম্যালে ঢোকার পথে বড় করে লেখা হচ্ছে, ‘আই লাভ দার্জিলিং’। সে দিকে তাকিয়ে তিনি বলেন, ‘‘এ কথা শুধু লিখলেই হবে? দার্জিলিংকে ভালবাসার লোক কোথায়?’’