প্রহরা: ইসলামপুরের পাটাগোড়া বালিকা বিদ্যালয়ের একটি বুথে কেন্দ্রীয় বাহিনীর পাহারা। নিজস্ব চিত্র
সামান্য পুনর্নির্বাচনের নিরাপত্তায় ‘ধান ভানতে শিবের গীত’ দেখল ইসলামপুর।
সোমবার দক্ষিণ দিনাজপুরের এই মহকুমার তিনটি বুথে ফের ভোট হল। কিন্তু তিনটি বুথ ঘিরে এ দিন ছিল অভূতপূর্ব নিরাপত্তা। কেন্দ্রীয় বাহিনীতে ছয়লাপ ছিল ইসলামপুর ব্লকের দু’টি এবং গোয়ালপোখর ব্লকের একটি বুথ। তার সঙ্গে ছিল কুইক রেসপন্স টিমের জওয়ানেরা এবং রাজ্য পুলিশও। সব মিলিয়ে নিরাপত্তা কঠিন বর্মে মুড়ে ফেলা হয়েছিল বুথগুলি। অথচ মূল ভোটের দিন, অর্থাৎ ১৮ এপ্রিল এই তিন বুথের মধ্যে ইসলামপুরের পাটাগোড়া বালিকা বিদ্যালয়ের বুথে কোনও বাহিনী ছিল না। বাকি দুই বুথ ইসলামপুরের ঢোলোগছ শিশুশিক্ষা কেন্দ্র এবং গোয়ালপোখরের লোহাগাছি আদিবাসী পাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নামসাক্ষী দু’জন করে কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ান ছিলেন।
সেদিন ওই তিনটে বুথেই ছাপ্পা ভোটের অভিযোগ ছিল। একাধিক ঘটনা এবং বিরোধীদের তা নিয়ে অভিযোগের জেরেই এ দিনের ফের ভোট। তবে জেলার রাজনৈতিক মহলের বক্তব্য, বিগত দু’দফার ভোটে দেখা গিয়েছে, দক্ষিণ ও উত্তর দিনাজপুর জেলায় যেসব জায়গায় বেশি করে কেন্দ্রীয় বাহিনী জরুরি ছিল, সেইসব জায়গাতেই পর্যাপ্ত বাহিনী মোতায়েন করা হয়নি। এমনকি, কোনও কোনও অতি স্পর্শকাতর বুথেও বাহিনীর তেমন সক্রিয়তা দেখা যায়নি।
একই বক্তব্য বিরোধীদেরও। সিপিএমের প্রার্থী মহম্মদ সেলিমের কোথায়, ‘‘আগের দিনও এমন নির্বাচন আমরা প্রত্যেকেই চেয়েছিলাম। কিন্তু প্রশাসন তা করেনি। বারবার অভিযোগ করলেও অনেক কেন্দ্রে রাজ্য পুলিশ দিয়ে ভোট চালানো হয়েছে। আরো বেশ কয়েকটি বুথে পুনর্নির্বাচনের দাবি করেছিলাম। কিন্তু তা করা হয়নি।’’ বিজেপির উত্তর দিনাজপুর জেলার সাধারণ সম্পাদক সুরজিৎ সেনের বক্তব্য, ‘‘শাসক দলের লোকেরা আজকেও পাড়ার গলিতে গিয়ে চেয়ার নিয়ে বসে সাধারণ মানুষকে হুমকি দিয়েছিল। তবে সমস্ত কিছু এড়িয়ে শান্তিপূর্ণ ভাবে ভোট হয়েছে।’’
রবিবারই কেন্দ্রীয় বাহিনী পৌঁছে গিয়েছিল এলাকায়। সকালে নির্বাচন শুরু হওয়ার পরেই কড়া নিরাপত্তার মধ্যে দিয়ে ভোটগ্রহণ পর্ব শুরু হয় সেখানে। পরিস্থিতি এমন যে ২০০ মিটারের মধ্যে বাইরের কাউকেও ঢুকতে দেওয়া হয়নি। এ দিন সকাল থেকেই ওই বুথ গুলিতে ঘুরে যান শাসক-বিরোধী প্রায় সব দলের প্রার্থীরাই। পুলিশ প্রশাসন সূত্রে খবর, প্রতিটি কেন্দ্রে অর্ধেক সেকশন কেন্দ্র বাহিনী (৪ জন) দেওয়া হয়। এছাড়া, ছিল কুইক রেসপন্স টিম। সেখানে এক সেকশন কেন্দ্র বাহিনী ও পুলিশের এক অফিসার। ছিল এইচআরএফএস, সেখানে ইনস্পেক্টর পদমর্যাদার একজন অফিসার একজন সাব-ইনস্পেক্টর ১২ জন ঢাল, টিয়ার গ্যাসধারী রাজ্য পুলিশের কনস্টেবল। আরটিতে ছিল একজন অফিসের চারজন বন্দুকধারী কনস্টেবল। এছাড়াও সেক্টর মোবাইলও ছিল। সেখানেও আর্মড ফোর্সের কনস্টেবল ছিল।
গত ১৮ এপ্রিল নির্বাচনের দিন ইসলামপুরের পাটাগোড়া কেন্দ্রে ছাপ্পা ভোটের অভিযোগ ছিল। তার প্রতিবাদ করায় প্রার্থী মহম্মদ সেলিমের উপর হামলার পাশাপাশি তার গাড়িও ভাঙচুর করা হয় বলে অভিযোগ। খবর করতে গিয়ে আক্রান্ত হন আনন্দবাজার পত্রিকার সাংবাদিক মেহেদী হেদায়েতুল্লাহ। অপরদিকে, ইসলামপুরে অপর একটি কেন্দ্র ঢোলোগছ শিশু শিক্ষা কেন্দ্রে ছাপ্পা ভোটের ভিডিয়ো ভাইরাল হয়। লোহাগাছি আদিবাসী পাড়া প্রাইমারি স্কুলে ছাপ্পা ভোটের অভিযোগ।
ইসলামপুরে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কার্তিক মণ্ডল বলেন, ‘‘প্রতিটি কেন্দ্রে পর্যাপ্ত কেন্দ্রীয় বাহিনী রয়েছে। এছাড়াও একাধিক টিম করেও কেন্দ্রীয় বাহিনী, পুলিশ রয়েছে সেখানে। কোথাও কোনো সমস্যা হয়নি।