গর্ত বোজানো চলছে আলিপুরদুয়ারে। নিজস্ব চিত্র
চব্বিশ ঘণ্টার ব্যবধানে একই মাঠে নির্বাচনী জনসভা করেছিলেন বিজেপির অমিত শাহ ও সিপিএমের সূর্যকান্ত মিশ্র৷ কিন্তু দুই সভায় তৈরি হওয়া আলাদা আলাদা মঞ্চের জন্য বাঁশ পোঁতার ফলে মাঠের বিভিন্ন জায়গায় ভরে ছিল গর্তে৷ অভিযোগ, বুধবার সকালে নিজেদের সেই সভামঞ্চের গর্ত বোজাতে গিয়ে বামেদের সভামঞ্চের গর্তও বোজালেন বিজেপির নেতা-কর্মীরা৷
মাঠ বাঁচানোই তাঁদের লক্ষ্য বলে বিজেপির জেলা নেতারা দাবি করলেও, এই ঘটনায় শোরগোল পড়ে গিয়েছে আলিপুরদুয়ার জেলার রাজনীতিতে৷ তৃণমূলের অভিযোগ, আলিপুরদুয়ারেও যে রাম-বাম মিলেমিশে একাকার, তা এই ঘটনাই প্রমাণ করে৷ যদিও বিজেপি এর সঙ্গে রাজনীতিকে জড়াতে নারাজ৷
আলিপুরদুয়ার শহরে যে কোনও বড় সভাই প্যারেড গ্রাউন্ডে হয়৷ অতীতে অনেক বড় বড় জনসভা হয়েছে এই মাঠে৷ এ বারের নির্বাচনও তার ব্যতিক্রম ছিল না৷ তবে ব্যতিক্রম ছিল একটাই, আলিপুরদুয়ারের প্রথমবার এ বারের নির্বাচনেই প্যারেড গ্রাউন্ডে জনসভা করে বিজেপি৷ মার্চ মাসের শেষে দলের সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহকে নিয়ে এসে প্যারেড গ্রাউন্ডের এক কোণে যে সভা করেছিলেন বিজেপি নেতারা৷ অমিত শাহর সভার ঠিক একদিন আগে ওই মাঠের একই কোণে জনসভা করেছিল বামেরা৷ যেখানে মুখ্য বক্তা ছিলেন সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র৷ তবে এ বারের নির্বাচনে প্যারেড গ্রাউন্ডে অবশ্য কোনও নির্বাচনী জনসভা করেনি তৃণমূল৷
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
একদিনের ব্যবধানে নিজেদের দুই শীর্ষ নেতাকে নিয়ে বিজেপি ও বামেদের দুই জনসভার ফলে দুই পক্ষকেই মঞ্চ গড়া-সহ নানা কারণে মাঠে প্রচুর গর্তও খুঁড়তে হয়৷ কিন্তু অভিযোগ, ওই দুই জনসভার পর দু’পক্ষই মাঠটিকে সেভাবেই ফেলে রাখেন৷ প্রতিদিন শহরের প্রচুর মানুষ ওই মাঠে হাঁটতে যান৷ কিন্তু মাঠের এক কোণ গর্তে ভরে থাকায় তাঁদের অনেকের মধ্যেই ক্ষোভ ছড়াচ্ছিল৷
এই অবস্থায় শ্রমিক দিবসের সকালে ট্রাকে করে মাটি নিয়ে গিয়ে প্যারেড গ্রাউন্ডের গর্ত বোজাতে নামেন বিজেপির নেতা-কর্মীরা৷ তৃণমূলের দাবি, নিজেদের সভার জন্য হওয়া গর্তের পাশাপাশি বামেদের সভার গর্তও বুজিয়ে দেন তাঁরা৷ তৃণমূলের জেলা সভাপতি মোহন শর্মা বলেন, “বিষয়টি কানে শুনে বিশ্বাস করতে পারছিলামনা৷ তাই বৃহস্পতিবার নিজে ওই মাঠে যাই৷ গিয়ে দেখি বিজেপি নেতারাই বামেদের সভার মঞ্চের গর্তও বুজিয়ে দিয়েছেন৷ আমাদের নেত্রী বরাবরই বলে এসেছেন, রাম-বাম মিলে মিশে একাকার৷ এই জেলাতেও যে সেটা হয়েছে, তা এই ঘটনা প্রমাণ করে৷”
বিজেপির জেলা সম্পাদক জয়ন্ত রায় বলেন, “ওই মাঠে বামেরা কোথায় সভা করেছিল জানিনা৷ তবে আমরা সভা করেছিলাম৷ এ ছাড়াও নির্বাচনের কাজে প্রশাসনও মাঠ ব্যাবহার করেছিল৷ আমরা বুধবার প্যারেড গ্রাউন্ডে গিয়ে দেখি প্রচুর গর্ত৷ তখন সব গর্তই বোজানো শুরু করি৷” কে কোথায় গর্ত খুঁড়েছে, তা নয়৷ মাঠকে বাঁচানোই তাঁদের লক্ষ্য ছিল বলেই দাবি জয়ন্তের৷
সিপিএমের জেলা সম্পাদক মৃণালকান্তি রায় বলেন, “আমাদের সভার পর মাঠে যে গর্ত থেকে গিয়েছিল তা জানা ছিল না৷ জেনে অথবা না জেনে বা প্রচারের লক্ষ্যে— কারণ যাই হোক না কেন, বিজেপি যদি নিজেদের সভামঞ্চের পাশাপাশি আমাদের সভামঞ্চের জন্য হওয়া মাঠের গর্ত বুজিয়ে দেয়, সেটাকে ভাল বলব৷ এর ফলে মাঠটা তো বাঁচবে৷”