লোক আদালতের রায়ে খুশি মিনা, নাহারি

কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি গিরীশচন্দ্র গুপ্তের নির্দেশে ও রাজ্য আইনি পরিষেবার উদ্যোগে ষষ্ঠ চা বাগান লোক আদালত বসল ডুয়ার্সের বীরপাড়ার বন্ধ বান্দাপানি চা বাগানে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

বীরপাড়া শেষ আপডেট: ২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০২:২১
Share:

বান্দাপানি চা বাগানের প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বসেছে লোক আদালত। — নিজস্ব চিত্র

কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি গিরীশচন্দ্র গুপ্তের নির্দেশে ও রাজ্য আইনি পরিষেবার উদ্যোগে ষষ্ঠ চা বাগান লোক আদালত বসল ডুয়ার্সের বীরপাড়ার বন্ধ বান্দাপানি চা বাগানে।

Advertisement

শনিবার চা বাগানে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বসা ষষ্ঠ লোক আদালতে প্রায় ১৩০০ আবেদনের মামলার শুনানি ও রায়দান হয়। এ দিন অনুষ্ঠিত লোক আদালতে দু’টি বেঞ্চে শ্রমিকদের বকেয়া প্রভিডেন্ট ফান্ড, ফাউলাই, হাতির হামলায় মৃত ও ঘর ভাঙা, বয়স্ক ভাতা, রেশন কার্ড, বিধবা ভাতা, বিধবা পেনশন, পানীয় জল, জব কার্ড, প্রতিবন্ধী ভাতা-সহ বিভিন্ন বিষয়ে আবেদনের শুনানি ও রায় দেন বিচারকেরা।

ডুয়ার্সের বান্দাপানি চা বাগান বন্ধ গত চার বছর ধরে। রাজ্য সরকার বাগানটি অধিগ্রহণ করলেও এখনও বাগান খোলা বা শ্রমিকদের সমস্যা সমাধান হয়নি। ফলে, শ্রমিকরা কেউ বাইরের রাজ্যে, ভুটানে গিয়ে কাজ করছেন। কেউ কেউ বাগানে থেকেই নদীতে পাথর ভেঙে একপেটা বা আধপেটা খেয়ে বেঁচে আছেন। মারা গিয়েছেন প্রায় একশো শ্রমিক।

Advertisement

এর আগে বন্ধ ও অচলাবস্থা চলা চা বাগানে লোক আদালত বসিয়ে শ্রমিকদের সমস্যা সমাধানের জন্য লোক আদালত বসানোর নির্দেশ দিয়েছিলেন কলকাতা হাইকোর্টের তৎকালীন প্রধান বিচারপতি মঞ্জুলা চেল্লুর ও বিচারপতি জয়মাল্য বাগচি। সেই নির্দেশ বহাল রাখতে বর্তমান প্রধান বিচারপতিও লোক আদালতের ব্যবস্থা চালু রেখেছেন।

শনিবার সকাল দশটায় শুরু হয় লোক আদালত। লোক আদালতের প্রথম বেঞ্চে বিচারক ছিলেন আলিপুরদুয়ার আদালতের অতিরিক্ত সেশন বিচারক ইন্দিবর ত্রিপাঠী। দুই আইনজীবী ছিলেন অমিত সরকার ও অর্ঘ্য মিত্র। দ্বিতীয় বেঞ্চে বিচারক ছিলেন অতিরিক্ত দায়রা বিচারক রাজেশ চক্রবর্তী। দুই আইনজীবী ছিলেন মোহিত বিশ্বাস ও অ্যালভিন মিনজ। উপস্থিত ছিলেন আলিপুরদুয়ারের অতিরিক্ত জেলা সেশন জজ ও আলিপুরদুয়ার মহকুমা লিগাল সার্ভিস কমিটির চেয়ারম্যান অশোককুমার পাল। এ ছাড়াও উপস্থিত ছিল দার্জিলিং লিগাল ফোরাম, জলপাইগুড়ি লিগাল ফোরাম ও আলিপুরদুয়ার লিগাল ফোরামের আইনজীবীরা।

বাগানের জঙ্গল লাইনের মিনা গোয়ালা ও অন্তুলিস খালকো বলেন, “মাঝে মাঝেই হাতি বাড়িঘর ভেঙে তছনছ করে। বন বিভাগকে বলার পরেও তাঁরা উদাসীন থাকেন। কোনও কোনও ক্ষেত্রে দশ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণ হলে বছর ঘুরে পাওয়া যায় মাত্র ৫০০ টাকা। কোন সময় সেটাও পাওয়া যেত না। এমনকী মানুষও মেরে ফেলে হাতি। তাই আমরা লোক আদালতে বিচার চেয়েছিলাম। আদালতের নির্দেশে আমরা খুশি।”

বাগানের পাকা লাইনের নাহারি তিরকি ও সন্তোষী ছেত্রী বলেন, “দীর্ঘদিন থেকে আমরা পিএফের টাকা পাচ্ছিলাম না। অনেকবার আবেদন করেও কাজ হয়নি। তারপর লোক আদালতের কথা শুনে আবেদন করি। দীর্ঘদিনের অপেক্ষা এক দিনেই আদালতের রায়ে টাকা দেওয়ার নির্দেশ শুনে আমরা আনন্দিত।” আইনজীবি অমিত সরকার বলেন, “ প্রতিটি আবেদনের শুনানির পর, বিচারক আধিকারিকদের নির্দেশ দিয়েছেন যার যা পাওয়া তা অচিরেই মিটিয়ে দিতে হবে। বিচারপতিরা আরও জানান, পাওয়া না মিটালে আধিকারিকদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

এ দিন প্রাথমিক স্কুলে শুনানির সময় উপস্থিত ছিলেন মাদারিহাট-বীরপাড়ার বিডিও সহ সব দফতরের আধিকারিকেরা।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement