বদলের হাওয়া টের পাচ্ছেন গুড়িয়াহাটির বাসিন্দারা

গুড়িয়াহাটি ১ নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের গ্রামে হয়েছে কোচবিহার পঞ্চানন বর্মা বিশ্ববিদ্যালয়। পাশেই হয়েছে কোচবিহার মেডিক্যাল কলেজ। ওই এলাকাই এক সময় মহাশ্মশান যাওয়ার রাস্তা বলেই পরিচিত ছিল।

Advertisement

কিশোর সাহা

কোচবিহার শেষ আপডেট: ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ০৩:৩৬
Share:

—ফাইল চিত্র।

বদলের হাওয়া যে গুড়িয়াহাটিতে বইছে তা স্থানীয় বাসিন্দা গৌতম দত্ত, বীরেন বর্মনের মতো অনেকেই বললেন। তাঁরা বলেন, “আমাদের সুবিধে হয়েছে। আমরা বাড়ি ভাড়া দিতে পারছি। বিকল্প আয়ের একটা রাস্তা খুলে গিয়েছে। রাস্তাঘাট, পানীয় জল, নিকাশির মান বাড়াতে গেলে তো পুরসভা করতেই হবে।’’ তা ছাড়া জঞ্জালের পরিমাণও তুলনায় বেড়ে য়াবে বলে সাফাইয়ের জন্যই প্রচুর বরাদ্দ দরকার। যা কি না গ্রাম পঞ্চায়েতের পক্ষে বরাদ্দ করা সম্ভব নয়।

Advertisement

এলাকার গ্রামের পঞ্চায়েত সদস্য তথা প্রাক্তন গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান আব্দুল কাদের তো বাড়ির সামনে ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ হওয়ায় গর্বিত।। তিনি বললেন, ‘‘এক সময় দিনেও সুনসান লাগত। এখন সদা ব্যস্ত আমাদের এলাকা। এটা শহর হতে বেশি দেরি হবে না। দেখবেন, শীঘ্রই এটাও কোচবিহার শহরের মদ্যেই ঢুকে পড়বে। হয় কোচবিহার পুরসভাকে কর্পোরেশন করতে হবে। না হলে গুড়িয়াহাটি পুরসভা গঠনের দাবি উঠবে।’’

এর চেয়েও বেশি প্রত্যাশার আঁচে ফুটছে গুড়িয়াহাটি ১ নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েত। কী ঘটছে সেখানে!

Advertisement

একটা সময়ে যে এলাকায় যাওয়ার কথা বললে অনেকেই বলতেন, ‘ওই যে মহাশ্মশানের কাছে! গত ৪ বছরে সেই পরিচয়ই পাল্টে গিয়েছে। এখন প্রশ্ন করলে একবাক্যে যে কেউ বলে ওঠেন, ‘ওই যে ইউনিভার্সিটির কাছে’!

ঘটনা এটাই। গুড়িয়াহাটি ১ নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের গ্রামে হয়েছে কোচবিহার পঞ্চানন বর্মা বিশ্ববিদ্যালয়। পাশেই হয়েছে কোচবিহার মেডিক্যাল কলেজ। ওই এলাকাই এক সময় মহাশ্মশান যাওয়ার রাস্তা বলেই পরিচিত ছিল। এখন সবাই বিশ্ববিদ্যালয় যাওয়ার রাস্তা বলেই জানে। সেখানে হেক্টরের পর হেক্টর জমি ছিল পড়ে ছিল কৃষি ফার্মের। সেই জমিতেই বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে উঠেছে।

সেখানে এখন ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা প্রায় দেড় হাজার। তাঁদের যাতায়াতের জন্য যেমন টোটো গাড়ি ভাড়া পাচ্ছে। তেমন বিশ্ববিদ্যালয়ের আশেপাশে তৈরি হয়েছে নানা দোকান। বাড়িতে বাড়িতে ভাড়া থাকতেও শুরু করেছেন ছাত্রছাত্রীরা। ওই এলাকার বাসিন্দাদের কথায়, “বিশ্ববিদ্যালয় পাড়া বলেই চিনতে শুরু করেছে অনেকে।” গুড়িয়াহাটি-১ গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান আশিস চৌধুরী বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের ফল আমরা ইতিমধ্যেই পেতে শুরু করেছি। আগামীদিনে এই এলাকা শিলিগুড়ির শিবমন্দিরের মতোই অর্থনৈতিক ভাবে শক্তিশালী হয়ে উঠবে বলে বিশ্বাস করি।”

বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছেই দোকান বীরেন রায়ের। মধ্যবয়সী বীরেনবাবুর দোকানে আগের চেয়ে সামান্য বিক্রি বেড়েছে। কিন্তু, এলাকায় দু-চার পা হাঁটলেই যে ভাবে ‘পেয়িং গেস্ট’ রাখার জন্য বোর্ড টাঙানো, দেওয়ালে পোস্টার সাঁটানো তা দেখিয়ে হাসেন বীরেনবাবু। তিনি বলেন, ‘‘অনেকেই ধারদেনা করে বাড়তি ঘর তৈরি করেছে। কোথাও শুধু মেয়েদের থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা হয়েছে। কোথাও ছেলেদের।’’ একাধিক জেরক্সের দোকানও হয়েছে। একটা সময়ে কোচবিহার থেকে সারা দিনে হাতে গোনা কয়েকটি অটো, টোটো চলাচল করত ওই এলাকায়। এখন টোটো স্ট্যান্ডে সর্বদাই ভিড়।

শহরের উপকণ্ঠে ওই এলাকার বিধায়ক উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী রবীন্দ্রনাথ ঘোষ। তাঁর ছেলে পঙ্কজ বললেন, ‘‘গুড়িয়াহাটির বেকার ছেলেমেয়েদের সামনে বিকল্প আয়ের নানা সুযোগ তৈরি হয়েছে। আমরা স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মাধ্যমেও কিছু স্টল করার চেষ্টা করছি।’’

কোচবিহারের জেলাশাসক কৌশিক সাহা নিয়মিত ওই তিনটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পরিকাঠামোর নির্মাণের তদারকি করতে যান। তিনি বলেন, ‘‘কোনও এলাকায় ঠিকঠাক সরকারি বিনিয়োগ হলে তার প্রভাব কতটা সুদুরপ্রসারী সেটার দৃষ্টান্ত হতে পারে গুড়িয়াহাটির দুটি গ্রাম পঞ্চায়েত। ওই এলাকা নিয়ে শিল্পোদ্যোগীরাও আগ্রহী হয়ে উঠেছেন।’’

(শেষ)

(সহ প্রতিবেদন: নমিতেশ ঘোষ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement