মোহন কচ্ছপ কোচবিহারে। —নিজস্ব চিত্র।
রাজ্য সড়কের দু’ধারে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে প্ল্যাকার্ড। বড় বড় হরফে লেখা রয়েছে, ‘গাড়ি ধীরে চালান। রাস্তায় কচ্ছপ চলাচল করে।’ তার পরেও দুর্ঘটনায় কচ্ছপের মৃত্যু আটকানো যাচ্ছে না বলে অভিযোগ উঠছে কোচবিহারের বাণেশ্বরে।
স্থানীয় বাসিন্দারা অভিযোগ করেছেন, গত এক সপ্তাহের মধ্যে গাড়ি চাপা পড়ে পর-পর দু’টি কচ্ছপের মৃত্যু হয়েছে। এর আগেও এমন ভাবেই অনেক কচ্ছপের মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ। বিশেষ করে রাতের অন্ধকারে ওই দুর্ঘটনা ঘটছে। যে কারণে বাসিন্দারা ওই এলাকায় ‘কচ্ছপের নিরাপদ করিডর’ গড়ে তোলার দাবি করেছেন। রাতে রাস্তায় পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা করার দাবিও করা হয়েছে। কোচবিহার জেলা প্রশাসনের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘ওই এলাকায় একটি আন্ডারপাস তৈরির প্রস্তাব রাজ্যে পাঠানো হয়েছে। সে সঙ্গে রাস্তায় পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।’’ বাণেশ্বর 'মোহন' রক্ষা কমিটির সভাপতি তথা তৃণমুলের কোচবিহার জেলা পরিষদের সদস্য পরিমল বর্মণ বলেন, ‘‘আমরা প্রশাসনের কাছে ওই বিষয়ে পদক্ষেপ করার জন্য দাবি জানিয়েছি। বিশেষ করে, মোহন করিডরের রাস্তাটুকুতে একটি ওভারব্রিজ করলে, ওই সমস্যার স্থায়ী সমাধান হবে।’’
বাণেশ্বরের শিব মন্দিরের দিঘিতে মূলত কচ্ছপদের বসবাস। ওই কচ্ছপদের স্থানীয় মানুষ দেবতা রূপে পুজো করেন। স্থানীয় ভাবে ‘মোহন’ নামেই পরিচিত ওই কচ্ছপেরা। ওই মন্দির এবং মোহনদিঘি কোচবিহার দেবোত্তর ট্রাস্ট বোর্ডের অধীনে রয়েছে। ট্রাস্টের তরফে জানা গিয়েছে, কচ্ছপের দল পুকুরের পাড়ে দলে-দলে ভিড় করে। আশেপাশে ঘুরে বেড়াতেও দেখা যায় তাদের। বছর কয়েক আগে, ওই পুকুরের পাড় কংক্রিট দিয়ে বাঁধাই করে দেওয়া হয়েছিল। এর পর থেকেই একের পরে এক কচ্ছপ মারা যেতে শুরু করে। তা নিয়ে গোটা এলাকায় ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। ‘মোহন রক্ষা কমিটি’ তৈরি করে আন্দোলন শুরু করেন স্থানীয় মানুষ। অনেকেই অভিযোগ করেন, কংক্রিটের পাড়ের ফলে অসুবিধার মধ্যে পড়তে হয় মোহনদের। প্রজননের অসুবিধা হয়। শুধু তা-ই নয়, জলজ অনেক প্রাণীরও ক্ষতি হয়। চাপে পড়ে শেষ পর্যন্ত কংক্রিটের পাড় ভেঙে দেওয়া হয়। অস্ট্রিয়ার একটি সংস্থার পরামর্শ মেনে কচ্ছপদের যত্ন নেওয়া শুরু করা হয়। তারা কচ্ছপের খাবারের একটি তালিকাও দিয়েছিল।
হিসাব তেমন ভাবে না থাকলেও প্রাথমিক ভাবে ধারণা, প্রায় আড়াইশো কচ্ছপ ওই পুকুরে রয়েছে। ইদানিং আরও কিছু কচ্ছপের জন্ম হয়েছে। সব মিলিয়ে তাদের খাবার হিসেবে বর্তমানে ছ’কেজি করে ভাত দেওয়া হয়। বর্ষাকালে খাবারে কিছুটা পরিবর্তন হয়। সে সময় ভাতের সঙ্গে কেঁচো, গুগলি দেওয়া হয়। বর্ষার সময় কেঁচো, শামুকের অভাব হয় না। তা আশেপাশ থেকে কিনে নিয়ে গিয়ে পুকুরে ছেড়ে দেওয়া হয়। পাশাপাশি, ছ’মাসে এক বার করে জলে পাঁচশটি অক্সিজেন ট্যাবলেট দেওয়া হয়। এ ছাড়া, প্রজননের জন্য পুকুর পাড়ে বালি, কুচি পাথর রাখা হয়েছে। ছোট ছোট কিছু ঝোপ তৈরি করে রাখা হয়েছে।
বাণেশ্বরের দিঘিতে যে কচ্ছপ রয়েছে সেগুলি লুপ্তপ্রায় প্রজাতির। ওই কচ্ছপ এক সময় বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গের আরও দুই-এক জায়গায় পাওয়া যেত। এখন আর তা পাওয়া যায় না। তাই এই কচ্ছপদের যাতে কোনও ক্ষতি না হয় সে ব্যাপারে ওই এলাকার বাসিন্দারা ঐক্যবদ্ধ। এলাকার বাসিন্দারা জানান, শিবমন্দিরের পুকুরে থাকা ওই কচ্ছপ এলাকায় অন্য পুকুর, ডোবাতেও চলে যায়। পাকা রাস্তা পার হয়েও চলাচল করে তারা। সে
সময়েই দুর্ঘটনার কবলে পড়ে। পরিমল বলেন, ‘‘ছশো মিটারের মতো রাস্তার উপর দিয়ে একটি উড়ালপুল হলে সমস্যা মিটবে।’’