পাঁচ দিনের সফর সেরে ১ এপ্রিল কলকাতা ফিরবেন মুখ্যমন্ত্রী। ফাইল ছবি
দু’একটা দুষ্টু গরু সব জায়গায় থাকে। কিন্তু আমি মাফ করব না। এমন ঘটনা আমি কখনও মাফ করব না। বগটুই-কাণ্ড নিয়ে বললেন মমতা।
দাদু-নাতির গন্ডগোল হলেও সিবিআই চাই! মা-মেয়ের গন্ডগোল হলে সিবিআই চাই! আর কত নীচে নামবেন?
গ্রাফিক: সনৎ সিংহ
শিলিগুড়িতে মুখ্যমন্ত্রী বললেন, ‘‘নেতাই-কাণ্ডে এখনও বিচার হয়নি। পাঁচটা আঙুল সমান হয় না। সব জগতেই আছে ভাল-খারাপ। বাংলা সবচেয়ে শান্তির জায়গা।’’
ডেউচা পাঁচামি আটকাতে বগটুইয়ে ষড়যন্ত্র হয়েছে। পুলিশকে দায়ী করা হচ্ছে। ডেউচা পাঁচামি হলে বহু কর্মসংস্থান হবে। বিরোধীরা খুন করে নজর ঘোরাচ্ছেন, বললেন মমতা।
মমতা বললেন, ‘‘আসল রহস্য কখনও কখনও দেশলাইয়ের কাঠিটা কেউ জ্বালিয়ে দেয়। যারা করছে তাদের আমি নিন্দা করি। আশা করি, কেউ এমন করবেন না। যখন রেলমন্ত্রী ছিলাম, তখন রোজ রেলের লাইন কেটে রেখে দিত। নয় আরশোলা খুঁজে বার করত। এখন আরশোলা কোথায় গেল? আমি তখন বলেছিলাম, গ্রাম, শহরের ছেলেরা নজর রাখুন। যদি দেখেন রেলের লাইন কাটা, তা হলে আপনাকে রেল থেকে পুরস্কার দেওয়া হবে। না হলে চাকরি দেওয়া হবে। এখনও বলব, কারও কাছে কোনও খবর থাকে, এখানে গন্ডগোল হতে পারে, এখানে হিংসা হতে পারে, তা হলে সঙ্গে সঙ্গে লোকাল পুলিশকে জানাবেন। ব্যবস্থা না নিলে পুলিশের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে সরকার।’’
মমতা যোগ করলেন, ‘‘আজ সকলের হাতে মোবাইল থাকে। প্রয়োজনে ছবি তুলে পাঠাবেন। সাংবাদিকদেরও বলব। প্রয়োজনে আমাকেও ছবি পাঠাতে পারেন। কেউ এই ধরনের ঘটনা ধরিয়ে দিলে সরকার থেকে পুরস্কার দেওয়া হবে। আগামী দু’মাস টাইম নেব। তার পর কারও বিরুদ্ধে দুর্নীতি, খুনখারাপি, অত্যাচারের অভিযোগ থাকে, আমি আর একটা সেট আপ তৈরি করব। যেটা করেছিলাম ‘দিদিকে বলো’। নামটা এখন আমি বলছি না। আপনারা ফোন করে বললে আমি সঙ্গে সঙ্গে অ্যাকশন নেব।’’
মমতার কথায়, ‘‘আমরা সাধ্যমতো চেষ্টা করি। দুটো ক্লাবে গন্ডগোল হলে আমাকে গালাগালি দেবেন? এলাকায় গন্ডগোল যাতে না হয় তা দেখতে হবে। নাক আর মুখে কালি লাগিয়ে সিপিএম, কংগ্রেস, বিজেপি মিছিল করবে। আর সিপিএম, কংগ্রেস, বিজেপি তোফা হয়ে সোফায় বসে থাকবে? উন্নাও, হাথরস, লখিমপুরের ঘটনায় কী বিচার হয়েছে? সিবিআই হয়েছে? অসমে এনআরসি নিয়ে কত লোকের মৃত্যু হল, দিল্লতে কত লোক মারা গেল। কেউ বিচার পেয়েছে? কর্নাটক, উত্তরপ্রদেশে বিচার হয়েছে? ত্রিপুরা, অসম, উন্নাও, দিল্লির হিংসায় আমাদের প্রতিনিধি দলকে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। আর এখানে আমি যাতে যেতে না পারি তাই সকাল-বিকেল সেজেগুজে টিভিতে চলে যাচ্ছে।’’
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘দু’মাস সময় দেব। কোনও নেতার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ থাকলে ফোন করবেন। সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেব।’’
বগটুই নিয়ে বিরোধীদের কটাক্ষ করলেন মমতা। বললেন, ‘‘যখন কেউ কাজ করতে পারে না, তখন হামলার পথ বেছে নেয়। আমি চাই মে-জুনের মধ্যে জিটিএ নির্বাচন হোক। পাহাড়ে কিছু রাজনৈতিক দলের সঙ্গেও আমাকে কথা বলতে হবে। পাহাড়ে ওই আইন কেন্দ্রীয় সরকার চালু করলে ত্রিস্তর পঞ্চায়েত ব্যবস্থা চালু করা যাবে।’’
মমতা বলেন, ‘‘কী সিপিএমের নেতারা? গালগুলো লাল টুকটুকে হয়েছে? কী কংগ্রেস নেতারা? কাশ্মীরে শ্রমিকরা খুন হয়েছে? আর এখানে খুন হয়েছে তৃণণূল নেতা। আগুন লাগল যাদের বাড়িতে, তারাও তৃণমূল। আর তৃণমূলকেই গালি দেওয়া হচ্ছে। তা হলেই বুঝুন, হাত, মাথা, পা সবই আমাদের কাটা গেল। হ্যাঁ, পুলিশের ভুল ছিল। খুনের পর ওদের আশঙ্কা করা উচিত ছিল কিছু একটা হতে পারে। তাই ব্যবস্থাও নেওয়া হয়েছে।’’
‘‘পুরনিগম এবংপুরসভাগুলিকে বলব, মন দিয়ে মানুষের কাজ করুন। আমার কোনও ছুটি নেই। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত মানুষের কাজ করতে হয়। মানুষ দায়িত্ব দিয়েছেন বলে আমি হনু হইনি। পঞ্চায়েতে যাঁরা আছেন তাঁদেরও বলব, মন দিয়ে কাজ করুন। আগামী বছর পঞ্চায়েতেও ভোট হবে। আমি চাই, শান্তিপূর্ণ ভোট হবে। যেমন শিলিগুড়িতে হয়েছে’’, বললেন মমতা
মমতার কথায়, ‘‘সরকারি কাজে গতি আনতে ‘দিদিকে বলো’ এবং ‘দুয়ারে সরকার’ প্রকল্প হয়েছে। দার্জিলিং এবং কালিম্পঙে জমির পাট্টা দেব আমরা। পুরনিগম এবং পুরসভাগুলিকে বলব, মন দিয়ে মানুষের কাজ করুন। আমার কোনও ছুটি নেই। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত মানুষের কাজ করতে হয়। মানুষ দায়িত্ব দিয়েছেন বলে আমি হনু হইনি। পঞ্চায়েতে যাঁরা আছেন তাঁদেরও বলব, মন দিয়ে কাজ করুন। আগামী বছর পঞ্চায়েতেও ভোট হবে। আমি চাই, শান্তিপূর্ণ ভোট হোক। যেমন শিলিগুড়িতে হয়েছে।’’
মমতা বললেন, ‘‘আমাদের সরকার অনেক কাজ করেছে। মোট ২১ লক্ষ বিধবা ভাতা দেওয়া হয়েছে। ১ কোটি ৭৫ লক্ষ মহিলাকে ‘লক্ষ্মীর ভান্ডার’ প্রকল্পে টাকা ২ কোটি ৩৩ লক্ষ মানুষ স্বাস্থ্য সাথী কার্ড পেয়েছেন। নবম শ্রেণিতে সাইকেল এবং দ্বাদশ শ্রেণিতে স্মার্টফোন।’’
পাঁচদিনের পাহাড় সফরে বাগডোগরার উদ্দেশে রওনা দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বাগডোগরা বিমানবন্দরে নেমে গোঁসাইপুরের একটি প্রশাসনিক বৈঠক করবেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পরে তিনি শিলিগুড়িতে একটি অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন। সেখানে বিভিন্ন সরকারি প্রকল্পের সুবিধাপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের শংসাপত্র প্রদান করবেন মুখ্যমন্ত্রী।