বিশ্ব উষ্ণায়নের কবলে উত্তর দিনাজপুরও
গত ১৯ মার্চ আনন্দবাজারের উত্তরবঙ্গ সংস্করণে কালো এক ছাতা এক শিশুর সাইকেলে বেঁধে দেবার ছবি মনে করায় বালুরঘাট, তপন, গঙ্গারামপুর, বংশীহারি, বুনিয়াদপুর প্রভৃতি এলাকা তীব্র গরমের কবলে পড়েছে। সূর্যের রশ্মি পুড়িয়ে দেয় শরীরের ত্বক ও কৃষিজমিকে। স্কুল ফেরত ছেলেমেয়েরা টিনের ভ্যানে বসে সিদ্ধ হয়ে যায়। দাবদাহ বর্তমানে অসহনীয় হয়ে উঠেছে। অনেকে কালো ছাতা ব্যবহার বন্ধ করে দিয়েছে। তরুণীরা ত্বককে টানটান ও উজ্জ্বল করতে প্রচুর টাকা খরচ করে থাকে। বিউটি পার্লারেও যায়। যুবকরাও ছাতা নেবার প্রয়োজনীয়তায় গুরুত্ব দেয় না। বাইক চালকদের আবার এই প্রখর দাবদাহে হেলমেটও পড়তে হয়। শরীরে গরম সহ্যের একটা সীমাও আছে। মার্চের শুরুতেই দাবদাহ শুরু কলকাতায় গরম পড়ে গিয়েছে জানুয়ারির শেষ থেকেই। সবচেয়ে আশঙ্কার কথা, দক্ষিণ দিনাজপুরের নদীগুলো যেমন আত্রেয়ী, টাঙ্গন, পুনর্ভবা, উত্তর দিনাজপুরের মহানন্দা, সুঁই শুকিয়ে গিয়েছে বহু আগে থেকেই। গঙ্গাতেও জলের টান ভায়নক। যে কারণে এনটিপিসি তাদের বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ করে দিয়েছে। নদীর বুকে এখন লাল বালুর চরা। বালুরঘাটের পরিবেশ কর্মীরা উপগ্রহ চিত্র মারফত বুঝেছেন যে, বাংলাদেশে প্রায় ৭০০, ৮০০ মিটার বাঁধ নির্মাণ করে আত্রেয়ীকে মৃতপ্রায় করে দিয়েছে। বছর পাঁচেক ধরে বাংলাদেশ-হিলি সীমান্তে রাশিয়া থেকে এনে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন পাম্প বসিয়ে হিলি, ত্রিমোহিনী থেকে প্রচুর পানীয় জল তুলে নিচ্ছে প্রতিনিয়ত। এর সঙ্গে হিলি-বাংলাদেশ সড়ক উন্নয়নের কাজও চলছে। এ সব কারণে বিগত ৮, ১০ বছরে অন্তত সাড়ে পাঁচ লক্ষ সবুজ গাছ ধ্বংস হওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এ সব কারণে মালদহের গাজল, হবিবপুর বুলবুলচণ্ডী, মুচিয়া প্রভৃতি বাংলাদেশ সীমাম্ত সংলগ্র অঞ্চল থেকে উত্তর দিনাজপুরের ইটাহার গ্লোবাল ওয়ার্মিংয়ের কবলে। শুধু উত্তর দিনাজপুরই নয়, ভারতের অন্যান্য জায়গাতেও গত ১১ মার্চ দিনের তাপমাত্রা সকাল সাড়ে আটটাতেই পৌঁছে গিয়েছিল ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। যা অত্যন্ত ভয়ানক। কাজেই বিগত দশকে বিশ্বের আবহবিদরা দক্ষিণ এশিয়ার ভারত, বাংলাদেশ ও পাকিস্তানকে সবচেয়ে খরাপীড়িত অঞ্চল হিসেবে পরিণত হওয়ার আশঙ্কা করেছিলেন, সেটাই প্রমাণিত। উপকূল অঞ্চল কর্ণাটক ছাড়া কেরলেও চলছে খরা। অথচ ভারতায় মৌসুমী বায়ু এখানেই সবচেয়ে আগে প্রবেশ করে। মিজোরাম, মেঘালয়েও বৃষ্টি কমেছে বিদত এক দশক ধরে। তার ফলে এসব অ়ঞ্চলে পানীয় জলের অভাব তীব্র আকার ধারণ করেছে। আরও উদ্বেগের কথা, এই ২০১৪-১৫-তে এল নিনোর কারণে এই অঞ্চলগুলি যে খরা কবলিত হয়েছে তাই নয়, বিগত দশ বছরে এ সব অঞ্চলে বৃষ্টিপাতও কমেছে উল্লেখযোগ্য হারে। ২০১৫-তে বৃষ্টিপ্রবণ শিলিগুড়িতেও প্রখর দাবদাহ চলেছিল। টানা দশ মাস এ সব অঞ্চস তাপে দগ্ধ হয়েছিল। বিশ্ব উষ্ণায়নের করাল ছায়া প্রায় সর্বত্র। বৃষ্টি কমার ফলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত কৃষি, গবাদি পশু এবং কৃষকরা। বিগত ২০ বছরের পরিসংখ্যানে দেখা গিয়েছে উত্তর ও দক্ষিণ দিনাজপুরে কালবৈশাখীর হারও কমে গিয়েছে। আমের বৃদ্ধি ও পুষ্টিতে বৃষ্টির জল একান্ত প্রয়োজন। কালবৈশাখিতে আমের মুকুল পূর্ণতা পায়। ভূগর্ভের জলেরও পুনর্নবীরকরণ ঘটে। বৃষ্টি ও জলের অভাবে ডুয়ার্সে ও সিকিমে মাঝে মাঝেই দাবানল হচ্ছে। এই দাবানলে বন্য জন্তুদের জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। উত্তর দিনাজপুরের তপনে পানীয় জলের সংকট তীব্র। এখানে মার্ক টু টিউবওয়েল ছাড়া জল ওঠে না। তাই তপন ও বংশীহারির আদিবাসীরা ফুটিফাটা জমিতে দাঁড়িয়ে ভাবতে থাকে কবে হবে নির্বাচন। কারণ নির্বাচন হলে লক্ষ লক্ষ টাকা খরত করে মার্ক টু টিউবওয়েল বসানো হয়ে থাকে। কিন্তু বাস্তবে দেখা যায় লক্ষ টাকার টিউবয়েলগুলো অচিরেই খারাপ হয়ে পড়ে থাকে। সাম্প্রতিক এক তথ্যে দেখা যায় গোটা দেশেই খরার কারণে গোচারণভূমি ও তৃণভুমির আয়তন কমে আসছে। গবাদি পশুগুলি ধুঁকছে। অথচ এদের উপরেই গ্রামীণ অর্থনীতি দাঁড়িয়ে। এই সর্বগ্রাসী খরার হাত থেকে গ্রামীণ অর্থনীতিকে কী ভাবে বাঁচানো যায়, সেটাই এখন কোটি টাকার প্রশ্ন।
—অধ্যাপক শান্তনু বসু। চাঁচল কলেজ।
’৬৭ থেকে সুজাপুরে
‘গনির গড় সুজাপুরে জমছে কাকা-ভাইপোর লড়াই’ (আনন্দবাজার, উত্তরবঙ্গ, ১৮ মার্চ) সংবাদে লেখা হয়েছে কালিয়াচকের সুজাপুর বিধানসভা কেন্দ্রের প্রার্থী ঈশা খান চৌধুরী এবং তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থী আবু নাসের খান চৌধুরী (লেবু) উভয়েই কোতুয়ালি পরিবারের সদস্য হওয়ার সুবাদে কাকা-ভাইপোর লড়াই প্রসঙ্গে কোতুয়ালি সূত্রে উল্লেখিত হয়েছে, ‘সুজাপুর বিধানসভা কেন্দ্রে ১৯৫২ সাল থেকে ১৯৭৭ পর্যন্ত বিধায়ক ছিলেন নেতা প্রয়াত গনি খান চৌধুরী’, এটা ঐতিহাসিক ভুল। প্রসঙ্গত, ১৯৫২ সালে গনিখান চৌধুরী উত্তর কালিয়াচক বিধানসভায় নির্দল প্রার্থী হিসেবে বামপন্থীদের সমর্থনে নির্বাচিত হন। ১৯৫৭ সালের বিধানসভা নির্বাচনে উত্তর কালিয়াচক বিধানসভা থেকে স্বতন্ত্র দলের প্রার্থী হয়ে জনৈক নির্দল প্রার্থী নীরেন সিংহর কাছে হেরে যান। ১৯৬২ সালে বিধানসভা নির্বাচনে ডাঃ বিধান চন্দ্র রায়ের বদান্যতায় দক্ষিণ কালিয়াচক বিধানসভা থেকে প্রথম বার কংগ্রেস প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে নির্দল প্রার্থী প্রমোদরঞ্জন বসুর কাছে সাড়ে আট হাজার ভোটে পরাজিত হন। ১৯৬৭ সালে কংগ্রেস প্রার্থী হিসেবে প্রথম সুজাপুর বিধানসভা কেন্দ্র থেকে নির্বাচিত হন ও ১৯৭৭ পর্যন্ত সুজাপুরের বিধায়ক ছিলেন। এবং ১৯৮০ সালে প্রথম বার সাংসদ সদস্য নির্বাচিত এবং আমৃত্যু সাংসদ ছিলেন। অতএব উপরোক্ত তথ্য ঠিক নয়। ১৯৬৭ সালের আগে গনিখান পশ্চিমবঙ্গ বিদানসভার কংগ্রেসি সদস্য ছিলেন না। সুতরাং ১৯৬৭ সালের পূর্বে সুজাপুর গনির গড় ছিল না।
—হরিচরণ সরকার মণ্ডল, কালিয়াচক, মালদা।