কেচবিহারে উদয়ন গুহর সাংবাদিক বৈঠক। ছবি: হিমাংশুরঞ্জন দেব।
পঞ্চায়েত নির্বাচনে দিনহাটায় পর্জদুস্ত হয়েছিল বামেরা। দেড় বছরের মধ্যেই সেই দিনহাটাতেই পুরসভা নির্বাচনে শাসক দল তৃণমূলকে খাদের কিনারে ঠেলে দিয়ে ঘুরে দাঁড়ালো বামফ্রন্ট তথা ফরওয়ার্ড ব্লক। বাম কর্মীরা যার কৃতিত্ব দিতে চান, কমল পুত্র উদয়ন গুহকে। যিনি বামফ্রন্ট নেতা তথা ফরওয়ার্ড ব্লকের কোচবিহার জেলা সম্পাদকের দায়িত্বে রয়েছেন। মঙ্গলবার পুরসভার ভোটের ফল প্রকাশ হতেই জানা যায়, দিনহাটায় নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্টতা পেয়েছে বামেরা। শুধু তাই নয়, ওয়ার্ডগুলিতে জয়ের মার্জিনেও অনেকটা ফারাক। ওই জয়ে আত্মবিশ্বাসী উদয়ন বিধানসভা ভোটের দিকে লক্ষ্য রেখে কর্মীদের রুখে দাঁড়ানোর ডাক দিয়েছেন।
উদয়নবাবু বলেন, “শাসক দলের সন্ত্রাসে মানুষ সন্ত্রস্ত। যার দিকে আরাজকতা চলছে। কোথাও শান্তি নেই। মানুষ এই অবস্থার পরিবর্তন চান। শাসক দল ভয় দেখিয়ে ভোটে জিততে চাইছে। আমাদের কর্মীরা লড়াই করেছেন। মানুষ সঙ্গে ছিলেন। তাই জয় হয়েছে। আগামীতেও চোখ রাঙ্গানির কাছে ভয় না পেয়ে লড়াই করতে হবে।” শাসক দলের কোচবিহার জেলা সভাপতি রবীন্দ্রনাথ ঘোষ অবশ্য কোনও সন্ত্রাসের অভিযোগ মানতে নারাজ। তিনি বলেন, “সন্ত্রাস হলে ফরওয়ার্ড ব্লক জিততে পারত না। এর পরে এমন মিথ্যে অভিযোগ করলে মানুষ মেনে নেবে না। দিনহাটায় প্রত্যেক মিটিঙয়ে আমরা যে সারা পেয়েছিলাম তাতে জয় আমাদের নিশ্চিত ছিল। কেন হার হল তা নিয়ে দলীয় স্তরে পর্জালোচনা করা হবে।”
দেড় বছর আগেই পঞ্চায়েত নির্বাচনে শাসক দলের সামনে খড়কুটোর মতো ভেসে গিয়েছিল বাম তথা ফরওয়ার্ড ব্লক। দিনহাটায় জেলা পরিষদের তিনটে আসনে হারের পাশাপাশি তিনটি পঞ্চায়েত সমিতিও হাতছাড়া হয় তাঁদের। অধিকাংশ গ্রাম পঞ্চায়েত আসনও দখল করে নেয় শাসক দল। সেই সময় একটি মামলায় অভিযুক্ত হওয়ার পর বেশ কিছুদিন দিনহাটায় ছিলেন না উদয়নবাবু। তা নিয়ে কর্মীদের মধ্যে একটা ক্ষোভ তৈরি হয়। কিন্তু শুধু দিনহাটাতেই গোটা কোচবিহার জেলাতেই শাসক দলের কাছে হার স্বীকার করতে হয়েছিল বামেদের। লোকসভা নির্বাচনেও দিনহাটা সহ জেলার বেশিরভাগ এলাকাতেই শাসক দলের তুলনায় পিছিয়ে ছিল বামেরা। এই অবস্থায় বাম কর্মীদের মনোবল তলানিতে ঠেকে যায়। মিটিং মিছিলেও তাঁরা আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন। কর্মীদের অনেকে শাসক দলের হাতে আক্রান্ত হওয়ার ভয়েও চুপচাপ বসেছিলেন। পুরসভা নির্বাচনে এই পরিস্থিতি বদলাতেই সামনে থেকে লড়াই করার সিদ্ধান্ত নেন উদয়নবাবু। প্রথম দিকে দলের রাজ্য নেতৃত্ব আপত্তি জানালেও পরে তাঁকে লড়াইয়ের অনুমতি দেওয়া হয়। এবারে মাঠ ছাড়েননি উদয়নবাবু। প্রার্থী হওয়ার আগে থেকেই টানা জনসংযোগে নামেন। পৌঁছে যান বাড়িতে বাড়িতে। কর্মীদের মনোবল বাড়াতে নিজেই হাঁটতে থাকেন রাস্তায়।
এক সময় বামফ্রন্ট তথা ফরওয়ার্ড ব্লকের লড়াকু নেতা কমল গুহের খাস তালুক হিসেবে নাম হয়েছিল দিনহাটার। তাঁর পুত্র হিসেবে উদয়নবাবুরও দাপট তৈরি হয় সেখানে। ২০১১ সালে রাজ্যে পরিবর্তনের সময়েও দিনহাটায় জয়ী হন উদয়নবাবু। কিন্তু তার পর থেকে দিনহাটায় ‘কমল মিথ’ ভাঙতে তৎপর হয়ে ওঠে শাসক দল। শাসক দলের জেলা সভাপতি রবীন্দ্রনাথ ঘোষ দিনরাত পড়ে থেকে ওই এলাকায় প্রচার চালান। পঞ্চায়েত নির্বাচনে জেলা পরিষদ, পঞ্চায়েত সমিতি এবং গ্রাম পঞ্চায়েতগুলি দখল করে বাম তথা ফরওয়ার্ড ব্লককে কোণঠাসা করে দেন তিনি। লোকসভা নির্বাচনেও পরিস্থিতি একই থাকে। শাসক দলের জেলা সভাপতি পরিষ্কার জানিয়ে দেন, দিনহাটা আর ফরওয়ার্ড ব্লক তথা উদয়ন গুহদের চান না। পুরসভা নির্বাচনেও বামেদেরে কোণঠাসা করতে চেষ্টার কোনও ত্রুটি রাখেননি রবীন্দ্রনাথবাবু। কিন্তু ফলাফলে দেখা যায়, ১৬ টি আসনের মধ্যে বামেরা পেয়েছে ১৩ টি। তৃণমূল ৩ টি। শুধু তাই, বামেদের মুখ উদয়নবাবু জিতেছেন ৪৫৫ ভোটে। তৃণমূলের মুখ অশোক মণ্ডল হেরেছেন ৪৬৭ ভোটে। উদয়নবাবু বলেন, “আমরা মানুষের সঙ্গে আছি। মানুষ আমাদের সঙ্গে আছে। সন্ত্রাস করে বেশিদিন তা রোখা যাবে না।”