টহল: গোলমালের পরে ওদলাবাড়িতে। নিজস্ব চিত্র
জাতীয় সড়কের ধারে জমি কেনাবেচাকে কেন্দ্র করে অগ্নিগর্ভ হয়ে উঠল ওদলাবাড়ি। মালবাজার থানার ওদলাবাড়ি ঘিস নদী লাগোয়া ৩১ নম্বর জাতীয় সড়কের ধারে পাঁচ কাঠা জমিকে ঘিরে মার পাল্টা মারে সরগরম হয়ে উঠল ওদলাবাড়ি।
বৃহস্পতিবার রাত ১০ টা থেকে ১১টা এক ঘণ্টা ৩১ নম্বর জাতীয় সড়কে উত্তেজনা ছড়িয়ে পরে। বাধ্য হয়ে পুলিশ ৩ কিমি আগে বাগরাকোট মিনা মোড়ে যান চলাচল বন্ধ করে দেয়। পুরো ঘটনার প্রতিবাদে ওদলাবাড়ির ব্যবসায়ী সংগঠন শুক্রবার দিনভর ব্যবসা বন্ধ করে প্রতিবাদ জানায়।
সম্প্রতি ওদলাবাড়ির কাপড়ের ব্যবসায়ী তথা নব নির্বাচিত নির্দল হিসাবে জয়ী গ্রাম পঞ্চায়েত সদস্য বাবু প্রধান ঘিস নদীর সেতুর কাছে জাতীয় সড়কের ধারে ৫ কাঠা জমি কেনেন। নির্দল হিসাবে জিতলেও বাবু প্রধান তৃণমূল সমর্থক বলেই এলাকার সকলের দাবি। অভিযোগ ঘিসবস্তি এলাকার তৃণমূল নেতা মহম্মদ হজরত আলি মঙ্গলবার রাতে বাবু প্রধানের কাছে তার এলাকাতে জমি কেনা বাবদ টাকা দাবি করেন। টাকা দিতে অস্বীকার করায় বাবু প্রধানকে হজরত এবং তার সঙ্গীরা বেধড়ক মারধর করে বলেও অভিযোগ। বাবু প্রধানকে রক্তাক্ত অবস্থায় শিলিগুড়ির নার্সিংহোমে ভর্তি করানো হয় বলেও দাবি।
এই ঘটনার পরই ওদলাবাড়ি এলাকার ব্যবসায়ী, সাধারণ বাসিন্দা সকলেই ক্ষোভে ফুঁসতে শুরু করেন। বৃহস্পতিবার রাতে হজরত আলিকে একা পেয়ে যেতেই তাঁর উপর চড়াও হন সকলে। হজরতের গাড়ি ভাঙচুর করে দেওয়া হয়। জখম হজরত এরপর কোনও মতে পালিয়ে যান। রাতে তাঁকেও শিলিগুড়ির নার্সিংহোমে ভর্তি করানো হয়। শুক্রবার সকালে ব্যবসায়ীরা দোকান বন্ধের সিদ্ধান্ত মাইকিং করে ঘোষণা করে দেন।
ব্যবসায়ী রাজেশ পটেল, মানস চট্টোপাধ্যায়, চন্দন দাসরা বলেন, “আমরা শান্তিতে শুধু ব্যবসাটুকু করে যেতে চাই, সেই পরিবেশ বিঘ্নিত হয়েছে বলেই ব্যবসা বন্ধের ডাক দিয়ে প্রতিবাদ জানানো হয়েছে।” শুক্রবার মালবাজারের এসডিপিও দেবাশিস চক্রবর্তী বড় বাহিনী নিয়ে ওদলাবাড়িতে রুট মার্চ করেন। এদিকে পুরো ঘটনার পেছনে তৃণমূলকে দায়ী করেছে বিজেপি। তৃণমূলের গোষ্ঠী সংঘর্ষের রেওয়াজ ডুয়ার্সে আমদানির চেষ্টা চলছে বলেও অভিযোগ। এর আগেও ঘিস নদীতে বালি খাদানের দখল রাখাকে কেন্দ্র করে খুন হন এক তৃণমূল কর্মী এক যুবক। খুনের অভিযোগ ওঠে তৃণমূলের ব্লক যুব নেতার ওপরে। দু’পক্ষই পরস্পরের বিরুদ্ধে মালবাজার থানায় নাম করে লিখিত অভিযোগ করেছে।
মালবাজার ব্লক তৃণমূল সভাপতি তমাল ঘোষ নিজে ওদলাবাড়ি এলাকার বাসিন্দা। কিছু মাস পরপরই কেন নদী, বালি এবং জমি নিয়ে গোলমাল হচ্ছে ওদলাবাড়িতে, প্রশ্ন উঠছে তা নিয়েও। তবে এই ঘটনা সম্পূর্ণ অরাজনৈতিক, ব্যক্তিগত সমস্যা বলেই দাবি করেন তমালবাবু। বৃহস্পতিবার রাতেই পুরো ঘটনার খবর নেন জলপাইগুড়ি জেলা তৃণমূল সভাপতি সৌরভ চক্রবর্তী। তিনি বলেন, “জমি কেনা নিয়ে গোটা এলাকায় উত্তেজনা ছড়ানো বরদাস্ত করা হবে না, এটা পুলিশ দেখবে। বিষয়টি নিয়ে অহেতুক রাজনীতি করা হচ্ছে।” ওদলাবাড়ি অঞ্চল বিজেপি নেতা উত্তম সিংহরায় বলেন, “এই অশান্তি রাজনীতির জন্যেই হয়েছে, যে কোনও মূল্যে চিরস্থায়ী শান্তি চাই।”