Kali Puja 2021

বলির সময় কেঁপে উঠত মূর্তি, বাঁধা থাকত শিকলে, ডাকাতের পুজো পেতেন মানিকোড়ার কালী

প্রতি শনিবার ও মঙ্গলবার ছাড়াও আষাঢ়, কার্তিক, অগ্রহায়ণ মাসে দেবীর বিশেষ পুজো হয়।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

মানিকোড়া শেষ আপডেট: ২৮ অক্টোবর ২০২১ ১৫:৪২
Share:

গ্রাফিক: সনৎ সিংহ

ডাকাতদের হাতে পূজিতা দেবী এখন ‘মানিকোড়া কালী’ নামে পরিচিত। মালদহের এই এলাকার মানুষের মুখে মুখে এখনও শোনা যায় এক সময় ডাকাতদের হাতে পূজিতা মা কালীর হাড়হিম করা বহু কাহিনী।

Advertisement

স্থানীয় লোকমুখে শোনা যায়, প্রায় ৩০০ বছর আগে পুনর্ভবা নদী পেরিয়ে রাতের অন্ধকারে এক দল ডাকাত জঙ্গলে ঘেরা মানিকোড়ায় এই দেবীর পুজো দিতে আসতেন। সূর্য ওঠার আগেই পুজো দিয়ে আবার নিজেদের ডেরায় ফিরে যেতেন ডাকাতরা। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পুজো উদ্যোক্তারা শুধু বদলে গিয়েছেন। ব্রিটিশ আমলে স্থানীয় এক জমিদার ভৈরবেন্দ্র নারায়ণ রায় জঙ্গলে ঘেরা এই পরিত্যক্ত পুজোর বেদি খুঁজে পান। এর পর থেকে বংশপরম্পরায় সেই জমিদারদের উদ্যোগেই এই পুজো হত। জমিদারি প্রথা উঠে যাওয়ার পর গ্রামবাসীদের উদ্যোগে মালদহের হবিবপুর থানা এলাকায় এই কালী পুজো হয়ে আসছে।

ডাকাত দল এখানে প্রথমে যে পুজো করত, শোনা যায়, সেটিতে মশাল জ্বালিয়ে পুজো হত। কথিত আছে কোনও এক সময় গ্রামে শাখা ফেরি করতে এসেছিলেন শাঁখারি। গ্রামের পথে এক বালিকা তার কাছে শাঁখা পরতে চায়। শাঁখারি তার হাতে শাঁখা পরিয়ে দেন। কিন্তু দাম চাইতেই ওই বালিকা বলে ওঠেন, তার কাছে পয়সা নেই, শাঁখার দাম তার বাবা দেবেন। সেই বালিকা বলে, তার বাবা কালী মন্দিরের সেবায়েত। শাঁখারি কালী মন্দিরে গিয়ে সেবায়েত-এর কাছে শাঁখার দাম চাইতেই অবাক হয়ে যান ওই সেবায়েত। তিনি বলেন, তাঁর কোন মেয়ে নেই। কে শাখা পরেছে? হঠাৎ তাঁর নজর যায় পাশের পুকুরের দিকে। দেখতে পান জলের উপরে একটি মেয়ে দুই হাত উঁচু করে রয়েছে। দু’টি হাতে রয়েছে একজোড়া নতুন শাঁখা। মুহূর্তে সেবায়েত বুঝে যান, ওই মেয়ে আর কেউ নন, স্বয়ং মা কালী। মুহুর্তের মধ্যেই শাখার দাম মিটিয়ে দেন তিনি। লোকমুখে শোনা যায়, পুজোর গভীর রাতে এই দেবীমূর্তি কেঁপে ওঠে। পাঁঠা বলির সময় মায়ের মূর্তি সামনের দিকে ঝুঁকে পড়তে চায়। মূর্তি যাতে পড়ে না যায়, আগে সেই জন্য আগে দেবী মূর্তিকে লোহার শিকল দিয়ে বেঁধে রাখার প্রচলন ছিল। এখন চক্ষু দান ও পাঁঠা বলির সময় দেবীর মুখ কাপড় দিয়ে ঢেকে রাখা হয়।

Advertisement

গ্রামের যে কোনও শুভ অনুষ্ঠান শুরু হওয়ার আগে এখনও দেবীর পুজো দেওয়ার রেওয়াজ রয়েছে। প্রতি শনিবার ও মঙ্গলবার ছাড়াও আষাঢ়, কার্তিক, অগ্রহায়ণ মাসে দেবীর বিশেষ পুজো হয়। পুজো কমিটির সদস্য সজল রায় বলেন, ‘‘এই পুজো নিয়ে অনেক গল্প কথা রয়েছে। বর্তমানে গ্রামবাসীরাই এই পুজো করেন। এখনও এখানে সাড়ে সাত-হাতের মূর্তি তৈরি হয়। দেবীর মাহাত্ম্যের নানা কাহিনী এখনও মানুষের মুখেমুখে ফেরে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement