অনশন মঞ্চে দুই জুনিয়র চিকিৎসক। ছবি স্বরূপ সরকার।
শারীরিক অবস্থার অবনতি হচ্ছে গত ৬ অক্টোবর থেকে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালে অনশনে থাকা জুনিয়র চিকিৎসক সৌভিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের। সোমবার মেডিক্যাল টিম তাঁর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে। তাতে জানা গিয়েছে, রক্তচাপ নামছে সৌভিকের। এর পরেও অনশন চালিয়ে গেলে সমস্যা বাড়বে। এ দিকে, এ দিন উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালে অনির্দিষ্টকাল অনশনে বসেন আরও এক জুনিয়র চিকিৎসক, ইএনটি বিভাগের পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ট্রেনি (পিজিটি) সন্দীপ মণ্ডল।
শুরুতে অনির্দিষ্ট কাল অনশনে বসেছিলেন উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালের মানসিক রোগ বিভাগের পিজিটি অলোককুমার বর্মা এবং উত্তরবঙ্গ ডেন্টাল কলেজের ইনটার্ন সৌভিক বন্দ্যোপাধ্যায়। অনশনরত অবস্থায় অসুস্থ হওয়ায় অলোককে আইসিইউ-তে ভর্তি করানো হয় পুজোর মধ্যে। সৌভিক অনশন চালিয়ে যাচ্ছেন। তাঁর সঙ্গেই এ দিন যোগ দেন সন্দীপ। মেডিক্যাল টিমের অন্যতম তথা উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালের মেডিসিন বিভাগের প্রধান দীপাঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘অলোকের অবস্থা স্থিতিশীল। সৌভিকের স্বাস্থ্য পরীক্ষা হয়েছে। এখনও শারীরিক পরিস্থিতি সঙ্কটজনক না হলেও রক্ত চাপ কমছে। তবু অনশন চালিয়ে যাওয়ায় চিন্তা রয়েছে।’’
এ দিন থেকে ফেডারেশন অব মেডিক্য্যাল অ্যাসোসিয়েশনের (ফেমা) তরফে সরকারি, বেসরকারি সমস্ত ক্ষেত্রে ৪৮ ঘণ্টা বহির্বিভাগে কর্মবিরতির ডাক দেওয়া হয়েছিল। তবে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বহির্বিভাগের পরিষেবা অধিকাংশ বিভাগেই খোলা ছিল। আন্দোলনকারীদের তরফে জানানো হয়েছে, যে চিকিৎসকেরা চাইছেন, তাঁরা কর্মবিরতি করছেন। বাকিরা কাজ করছেন। ‘জুনিয়র ডক্টরস ফ্রন্ট’ এ দিনের কর্মবিরতির ব্যাপারে কোনও সিদ্ধান্ত নেয়নি বলে সার্বিক ভাবে কর্মবিরতি হয়নি বলে জানা গিয়েছে। তবে আইএমএ দু’দিনের এই‘পেন ডাউন’ কর্মবিরতিতে সম্মতি দিয়েছে।
সুপার সঞ্জয় মল্লিক বলেন, ‘‘এক জন অনশনকারী ভর্তি রয়েছেন। এ দিন কর্মবিরতি ডাকা হয়েছিল। তাতে অবশ্য সমস্ত বহির্বিভাগ খোলা রাখা ছিল। টিকিটও দেওয়া হয়। সেই মতো পরিষেবা মিলেছে।’’
এ দিন নাগরিক সমাজের বিভিন্ন ব্যক্তি উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালে যান। অনশনকারীদের সঙ্গে কথা বলেন। তাঁদের তরফে পার্থপ্রতিম মিত্র, প্রদীপ নাগরা জানান, আজ, মঙ্গলবার তাঁরা শিলিগুড়ি শহরে প্রতীকী অনশনে বসতে চান।
অন্য দিকে, জলপাইগুড়ি মেডিক্যালের সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল ক্যাম্পাসেও ছিল চিকিৎসকদের কর্মবিরতি। ১২ ঘণ্টার প্রতীকী অনশনে বসেন অন্তত ২০ জন চিকিৎসক। আউটডোর পরিষেবা বন্ধ থাকলেও জরুরি বিভাগের সামনে বসে চিকিৎসা পরিষেবাও দেন অনশনকারী চিকিৎসকেরা। জেলার সরকারি হাসপাতালগুলির চিকিৎসা পরিষেবায় কোথাও কোনও অসুবিধে হয়নি বলে দাবি জেলা স্বাস্থ্য দফতরের।
চিকিৎসকদের কর্মবিরতির জেরে মেডিক্যালের সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল এবং জেলা সদর হাসপাতালের স্বাস্থ্য পরিষেবা ব্যাহত হচ্ছে কি না তা দেখতে সকাল থেকেই হাসপাতালে হাজির ছিলেন মেডিক্যালের সুপার তথা ভাইস প্রিন্সিপাল কল্যাণ খান-সহ অন্য আধিকারিকেরা। অনশন কর্মসূচিতে মেডিক্যালের বেশ কয়েকটি বিভাগের বিভাগীয় প্রধানেরাও যোগ দিয়েছেন। সিনিয়র চিকিৎসক সুদীপন মিত্র বলেন, ‘‘সরকার এই আন্দোলনকে শুধু জুনিয়র চিকিৎসকদের আন্দোলন হিসেবে দেখানোর চেষ্টা চালাচ্ছেন। এই আন্দোলন শুধুমাত্র জুনিয়র চিকিৎসকদের আন্দোলন নয়। চিকিৎসকদের এই আন্দোলন এখন সাধারণ মানুষের আন্দোলনে পরিণত হয়েছে। রোগীদের সঙ্গে আমাদের কোনও সংঘাত নেই। রোগীদের পরিষেবা যতটা দেওয়া সম্ভব, তা দিতে চেষ্টা করছি আমরা।’’
ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের জলপাইগুড়ি জেলা শাখার সহ-সভাপতি রাহুল ভৌমিক বলেন, ‘‘সোমবার ও মঙ্গলবার রাজ্য জুড়েই জরুরি পরিষেবা ছাড়া, সব পরিষেবা বন্ধ রাখার আহ্বান দিয়েছেন চিকিৎসকদের কয়েকটি সংগঠন।’’