যে যে চা বাগানের শ্রমিকদের প্রভিডেন্ট ফান্ড, গ্র্যাচুইটির টাকা বকেয়া হয়ে রয়েছে, সেইসব বাগানের জমির লিজ় নবীকরণ করা হবে না বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে জলপাইগুড়ি জেলা প্রশাসন। এই কারণে গত বছরের ডিসেম্বরে চারটি বাগানের লিজ় নবীকরণ আটকে দেওয়া হয়েছিল বলে সূত্রের খবর। পরে সেই বাগানগুলো বকেয়া পরিশোধ করে লিজ় নবীকরণ করায়।
নির্দেশের জেরে কাজও হচ্ছে বলে দাবি প্রশাসনের। গত বছরের অগস্টে জলপাইগুড়ি জেলা প্রশাসন সমীক্ষা করে দেখেছিল প্রায় ১৭টি চা বাগানের গ্র্যাচুইটি বকেয়া রয়েছে। গত বছরের ডিসেম্বরে সেই সংখ্যা এসে নেমেছে দু’টোয়। তা ছাড়া গ্র্যাচুইটি বকেয়ার আর কোনও ঘটনা নেই বলে দাবি প্রশাসনের। গ্র্যাচুইটি আদায়ের দায়িত্ব রয়েছে রাজ্যের শ্রম দফতরের।
কিন্তু প্রভিডেন্ট ফান্ড (পিএফ) দফতর কেন্দ্রের নিয়ন্ত্রণে। তৃণমূল শ্রমিক নেতাদের অভিযোগ, বারবার চিঠি পাঠালেও কেন্দ্র বাগান শ্রমিকদের বকেয়া পিএফ আদায় করতে পদক্ষেপ করছে না। সেই কারণেই রাজ্য প্রশাসন পিএফ পরিশোধের জন্য চা বাগান মালিকদের উপর চাপ তৈরি করেছে। বাগান শ্রমিকদের কথা ভেবেই এমন করা হচ্ছে বলে দাবি তৃণমূল শ্রমিক নেতাদের। তৃণমূলের চা শ্রমিক নেতা ও আলিপুরদুয়ারের তৃণমূলের জেলা সভাপতি মোহন শর্মার কথায়, “চা বাগান শ্রমিকেরা এ সব কেন্দ্র না রাজ্যের দায়িত্বে থাকে তা বোঝেন না। তাঁদের প্রাপ্য বঞ্চিত হলে তাঁদের ক্ষোভ থাকবেই। কেন্দ্র হাত গুটিয়ে থাকবে বলে তো আমরা থাকব না। রাজ্য সরকার সব বন্ধ চা বাগান খুলতে উদ্যোগী।”
উত্তরবঙ্গের চা বাগানগুলোয় বকেয়া পিএফের পরিমাণ এখন প্রায় ৩২ কোটি টাকা, এমনটাই দাবি শ্রমিক সংগঠনগুলোর। শ্রম দফতর সূত্রের খবর, ডুয়ার্স-তরাই মিলিয়ে প্রায় ৩৫ শতাংশ চা বাগানে শ্রমিকদের পিএফের টাকা বকেয়া রয়েছে।
পিএফ বকেয়া থাকলে নিয়ম মতো সংশ্লিষ্ট থানায় চা বাগান মালিকদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের, এমনকি সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করারও বিধি রয়েছে। এই দু’টি কাজই পিএফ দফতরের করার কথা। সাম্প্রতিক অতীতে এমন পদক্ষেপ করা হয়নি বলেই অভিযোগ। জলপাইগুড়ির জেলাশাসক শিল্পা গৌরীসারিয়া বলেন, “শ্রমিকদের প্রাপ্য বকেয়া রাখা যাবে না। লিজ নবীকরণ করার আগে বকেয়া আছে কিনা দেখেই পদক্ষেপ করা হচ্ছে।”
যদিও পিএফ দফতরের কর্তাদের দাবি, তাঁরা কাজ করছেন। ওই দফতরের জলপাইগুড়ি আঞ্চলিক অফিসের এক পদস্থ কর্তার মন্তব্য, “রাজ্য প্রশাসন যদি নিজেরা উদ্যোগী হয় তবে ভাল। আমাদের কাজ আমরা করে যাচ্ছি।”
এ দিকে পিএফ-কে জমি লিজ়ের শর্ত হিসেবে চাপানোর বিরোধিতা করেছে চা বাগান মালিকদের কয়েকটি সংগঠন। তাদের দাবি, এর জন্য অন্য আইন রয়েছে। টি অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্ডিয়ার মহাসচিব প্রবীরকুমার ভট্টাচার্য বলেন, “বিষয়টি আগে খতিয়ে দেখতে হবে। তারপরে এ নিয়ে মন্তব্য করব।”
বিরোধী চা শ্রমিক সংগঠনগুলির যৌথ মঞ্চের অন্যতম সদস্য এইউপিডব্লুর কেন্দ্রীয় কমিটির নেতা মনি কুমার ডার্নাল বলেন, “রাজ্য সরকার মাঝেমধ্যেই অনেক কথা বলে থাকেন। তবে শুধু ভোটের আগে কড়া নিয়ম করলে হলে চলবে না।”