স্কুলের বদলে জেলার প্রাইমারি ও আপার প্রাইমারির ছাত্রছাত্রীদের দু-সেট করে পোশাক তৈরির বরাত তন্তুজ ও স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলোকে দিয়েছিল মালদহ জেলা প্রশাসন। কয়েকদিন আগে তন্তুজ জেলার চাঁচল ও বামনগোলা সার্কেলে তৈরি পোশাক পাঠিয়েও দিয়েছে। সেই বরাতই বাতিল করার নির্দেশ পাঠাল রাজ্য সর্বশিক্ষা মিশন।
শুক্রবার বিকেলে মালদহের জেলাশাসকের কাছে মিশনের রাজ্য ডিরেক্টর সেই নির্দেশ পাঠিয়েছেন। মিশনের আধিকারিকের দাবি, মালদহ প্রশাসনের পদক্ষেপ সর্বশিক্ষা মিশনের গাইডলাইন ও নিয়ম বহির্ভূত। এই নির্দেশে অস্বস্তিতে পড়েছে জেলা প্রশাসন। তারা এক্ষেত্রে ২০১২ সালের একটি সরকারি নির্দেশকে ঢাল করতে চাইছে। মালদহের জেলাশাসক তন্ময় চক্রবর্তী বলেন, ‘‘২০১২ সালে একটি সরকারি নির্দেশে ছিল স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলাদের স্বনির্ভর করতে তাঁদের দিয়ে পোশাক তৈরি করাতে হবে। আমরা সেই ব্যবস্থাই করেছি।’’
প্রতি বছর জেলার প্রাইমারি ও আপার প্রাইমারি স্কুলের পড়ুয়াদের পোশাক তৈরির দায়িত্ব স্কুলকেই দেওয়া হয়। গত বছর জেলার ১৪৬টি পঞ্চায়েতের দু’টি করে প্রাইমারি স্কুলের পড়ুয়াদের পোশাক তৈরির বরাত স্বর্নিভর গোষ্ঠীকে দেওয়া হয়। বাকি ক্ষেত্রে স্কুলই দায়িত্ব পেয়েছিল। অভিযোগ, গত বছর স্বনির্ভর গোষ্ঠীর দেওয়া পোশাক নিম্নমানের ছিল। ওই পোশাক নিয়ে বেশ কিছু স্কুলে ব্যাপক গোলমাল হয়। এই বছর জেলার ৩১টি সার্কেলের সমস্ত প্রাইমারি স্কুলের প্রায় ২ লক্ষ ৪৫ হাজার পড়ুয়া ও বেশ কিছু আপার প্রাইমারির সাড়ে সতেরো হাজার ছাত্রছাত্রীর পোশাক তৈরির বরাত দেওয়া হয় তন্তুজকে। বাকি আপার প্রাইমারির প্রায় তিন লক্ষ পড়ুয়ার পোশাকের বরাত দেওয়া হয় জেলার বিভিন্ন স্বনির্ভর দলগুলোকে। মার্চ মাসের শেষে এই বরাত দেন অতিরিক্ত জেলাশাসক (সর্বশিক্ষা মিশন) দেবতোষ মণ্ডল। বরাতে দু-সেট পোশাক পিছু ৪০০ টাকা করে খরচ ধরা হয়েছে।
এই বরাত নিয়ে প্রথম থেকেই আপত্তি তুলেছিল বিভিন্ন শিক্ষক সংগঠন। ২৮ এপ্রিল চাঁচল সার্কেলের এক প্রাইমারি স্কুল শিক্ষক জোহার আহমেদ বিষয়টি নিয়ে সরাসরি রাজ্য সর্বশিক্ষা মিশনে অভিযোগ জানান। সেই অভিযোগের ভিত্তিতেই মিশনের রাজ্য ডিরেক্টর শুক্রবার বিকেলে মালদহের জেলাশাসককে নির্দেশ পাঠিয়ে পোশাক তৈরির বরাত বাতিল করার কথা জানান। চিঠিতে তিনি জানিয়েছেন, মিশনের নিয়ম অনুযায়ী জেলা বা ব্লক প্রশাসন কেন্দ্রীয়ভাবে পোশাক কিনতে পারে না। স্কুলই পোশাক কিনবে ও বিলি করবে।
পশ্চিমবঙ্গ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির জেলা সম্পাদক দেবব্রত মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘বলেছিলাম নিয়মবহির্ভূত কাজ হচ্ছে। সেটাই প্রমাণ হল।’’ বিষয়টি নিয়ে প্রথম থেকেই আপত্তি জানানো হয় বলে জানান তৃণমূলের প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সম্পাদক আইনুল হকও। মালদহের জেলাশাসক বলেন, ‘‘রাজ্য সর্বশিক্ষা মিশনের ডিরেক্টরের চিঠি পেয়েছি। সরকারের কাছে দু’টি নির্দেশ নিয়েই বিশদে জানতে চাইব।’’