দুই চিত্র: (বাঁ দিকে) বিপুল রায়কে গান স্যালুটে শ্রদ্ধা সেনার। (ডান দিকে) সেবক থেকে সিকিমের পথে বাহিনীর গাড়ি। ছবি: নারায়ণ দে, বিনোদ দাস
সামরিক গতিবিধি বাড়ছে উত্তরবঙ্গ ঘেঁষা ভারত-চিন সীমান্তে। সেনা সূত্রের খবর, গত মঙ্গলবার লাদাখের ঘটনার পরে সীমান্তে নজরদারি তো বটেই প্রয়োজনে অতিরিক্ত বাহিনী মোতায়েনের কাজ শুরু হয়েছে। কারণ, গত মাসেই লাদাখের মত ঘটনা ঘটেছিল সিকিমের চিন সীমান্তে। বাড়তি নজরদারি শুরু হয়েছে লাগোয়া নেপাল সীমান্তেও।
কিছুদিন আগেই উত্তর সিকিমের নাকু লা সীমান্তে ভারতীয় ও চিনের সেনা মুখোমুখি চলে আসে। সেনা সূত্রে খবর ছিল, নাকু লা সেক্টরে সীমান্ত চুক্তি লঙ্ঘন করে এগোচ্ছিল চিন। বিষয়টি দেখতেই ভারতীয় সেনা রুখে দাঁড়ায়। চিন এবং ভারতীয় সেনা জওয়ানদের মধ্যে ধাক্কাধাক্কি হয়েছিল। সংর্ঘষে ৪ জন ভারতীয়, ৭ জন চিনের জওয়ান আহত হন। এই মাসের প্রথমেই চিফ অব আর্মি স্টাফ মনোজ মুকুন্দ নরবনে সুকনা, বিন্নাগুড়ি সফরে এসে পরিস্থিতির খোঁজখবর নিয়ে যান।
২০১৭ সালে প্রায় দুই মাস ধরে চলেছিল ডোকলাম বিবাদ। ভারত-চিন-ভুটান সীমান্তে অবস্থিত ডোকা লা মালভূমি অঞ্চল ঘিরে উত্তেজনা তৈরি হয়। চিনা সেনা সীমান্ত লঙ্ঘন করে ভারতীয় এলাকায় ঢুকে বুলডোজার দিয়ে দু’টি বাঙ্কার ভেঙে দিয়েছে বলে অভিযোগ ছিল। ওই অঞ্চলে দায়িত্বে থাকা ইন্দো-টিবেটান বর্ডার পুলিশের (আইটিবিপি) ক্যাম্প সীমান্ত থেকে বেশ কিছুটা ভিতরে। টহল দেওয়ার সময় ভারতীয় জওয়ানরা সীমান্ত লাগোয়া বাঙ্কারগুলিতে বিশ্রাম নিতেন। এ ছাড়াও নিজেদের এলাকা না হওয়ার পরেও চিন এলাকায় রাস্তা তৈরি চেষ্টা করছি বলে অভিযোগ। সামরিক কৌশলগত কারণে ভারত তা আটকে দিতেই দু’পক্ষ মুখোমুখি হয়ে যায়। পরে আলোচনায় সমাধান মেলে। এলাকা ঘুরে যান সেই সময়ের সেনা প্রধান বিপিন রাওয়াত।
সুকনা সেনা সদর দফতরের অফিসারেরা জানাচ্ছেন, উত্তরবঙ্গের শিলিগুড়ি করিডর প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এই চিকেন নেক বা করিডরের চারপাশে নেপাল, ভুটান, চিন এবং বাংলাদেশ সীমান্ত রয়েছে। সহজেই এই করিডর দিয়ে উত্তর পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলিতে পৌঁছানো যায়। তাই সামরিক এবং কৌশলগত কারণে এখানে বিশেষ করে চিন সীমান্তে বাড়তি নজর রাখা হয়। বাগডোগরা বা হাসিমারার মত বায়ুসেনা ঘাঁটি থেকে আলাদা নজরদারি চলে। বুধবারও সিকিমে সেনা বাহিনীর গতিবিধি বাড়ানোর ছবি দেখা গিয়েছে। সিকিমে চিন সীমান্ত ২২০ কিলোমিটারের মত।
সেনা বাহিনীর সুকনা ৩৩ কোরের এক পদস্থ কর্তা জানান, লাদাখে সংঘর্ষের খবরের কিছুক্ষণের মধ্যেই দেশের সব চিন সীমান্তে বাড়তি সামরিক ব্যবস্থা নেওয়া হয়। উত্তরবঙ্গ ঘেঁষা সিকিমের চিন সীমান্ত তার থেকে বাদ যায়নি।