ঝড়বৃষ্টিতে দুর্ভোগে মুখ্যমন্ত্রীও

প্রবল ঝড়বৃষ্টিতে বিপর্যস্ত হল উত্তরবঙ্গের বিস্তীর্ণ এলাকা। সোমবার দুপুর থেকে রাত পর্যন্ত কয়েক দফায় ঝড়বৃষ্টি হয় নানা এলাকায়। বৃষ্টির সময়ে বাজ পড়ে অষ্টম শ্রেণির পড়ুয়া এক বালকের মৃত্যু হয়েছে। দুপুরের পর ঘটনাটি ঘটে ধূপগুড়ি ব্লকের বারঘড়িয়া এলাকায়। পুলিশ জানায়, মৃতের নাম প্রশান্ত রায় (১৪(। বন্ধুদের সঙ্গে মাঠে খেলতে যাওয়ার সময় বাজ পড়ে ছাত্রটি ঝলসে ঘটনাস্থলেই মারা যায়।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ৩১ মার্চ ২০১৫ ০৩:৩০
Share:

সুনতালেখোলার পথে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সোমবার সামসিঙে দীপঙ্কর ঘটকের তোলা ছবি।

প্রবল ঝড়বৃষ্টিতে বিপর্যস্ত হল উত্তরবঙ্গের বিস্তীর্ণ এলাকা। সোমবার দুপুর থেকে রাত পর্যন্ত কয়েক দফায় ঝড়বৃষ্টি হয় নানা এলাকায়। বৃষ্টির সময়ে বাজ পড়ে অষ্টম শ্রেণির পড়ুয়া এক বালকের মৃত্যু হয়েছে। দুপুরের পর ঘটনাটি ঘটে ধূপগুড়ি ব্লকের বারঘড়িয়া এলাকায়। পুলিশ জানায়, মৃতের নাম প্রশান্ত রায় (১৪)। বন্ধুদের সঙ্গে মাঠে খেলতে যাওয়ার সময় বাজ পড়ে ছাত্রটি ঝলসে ঘটনাস্থলেই মারা যায়।

Advertisement

এদিন উত্তরবঙ্গ সফরে পৌঁছে দুর্যোগের মধ্যে পড়েন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও। বাগডোগরা পর্যন্ত সব ঠিকঠাকই ছিল। কিন্তু, বেলা ৩টে নাগাদ বিমানবন্দর থেকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ডুয়ার্সের দিকে রওনা হওয়ার পরেই আকাশ কালো মেঘে ঢেকে যায়। ঝোড়ো হাওয়ার সঙ্গে শুরু হয় বৃষ্টি। সাড়ে ৫টা নাগাদ বজ্রপাত-সহ তুমুল বৃষ্টি শুরু হয়ে যায়। মুখ্যমন্ত্রীর ডুয়ার্সের যাত্রাপথে সামসিং বাজার এবং মেটেলিতে তৃণমূলের একদল সমর্থক বৃষ্টি মাথায় করেই তাঁর জন্য অপেক্ষা করেন। মুখ্যমন্ত্রীর কনভয় দেখে তাঁরা এগিয়ে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রীকে খাদাও দেন। মুখ্যমন্ত্রীকে বলতে শোনা যায়, “বৃষ্টি নেমে গিয়েছে। আপনারা যে যার বাড়ি চলে যান।” পৌঁনে ৬টা নাগাদ মুখ্যমন্ত্রী বন উন্নয়ন নিগমের সুনতালেখোলার বাংলোয় পৌঁছন। যদিও বৃষ্টির মধ্যে গাড়ি থেকে নেমে বাংলোর সামনে থাকা দোলনা সেতু পার হয়ে ছাতা মাথায় দিয়ে তিনি হেঁটেই বাংলোর ভিতরে ঢুকে পড়েন।

ঘটনাচক্রে, দলীয় অনুষ্ঠানে যোগ দিতে এদিন শিলিগুড়িতেই ছিলেন আরএসপি নেতা তথা প্রাক্তন পূর্তমন্ত্রী ক্ষিতি গোস্বামী। তাঁর টিপ্পনি, “দক্ষিণবঙ্গে তাপমাত্রা বেশি চলছে। উত্তরবঙ্গে সেখানে মনোরম আবহাওয়া চলছে। তবে (মুখ্যমন্ত্রী) উনি তো এখানে এসে নানা কিছু করার চেষ্টা করেছেন অতীতে। হয়তো এ বারও কিছু করবেন। তবে সুনতালেখোলার মতো জনবিচ্ছিন্ন এলাকায় থেকে এদিকের মানুষের সমস্যা ঠিক কীভাবে সমাধান করবেন, দেখা যাক। আসলে ওঁর তো শিল্পী, কবি, লেখক সত্তাও রয়েছে। সুন্দর আবহাওয়া উপভোগ করে কিছু হয়তো করবেন।” সেই সঙ্গে প্রাক্তন পুরমন্ত্রী অশোক ভট্টাচার্যের সংযোজন, “আলুচাষিদের মৃত্যু রুখতে যদি কিছু উনি ভাবতেন তা হলে ভালই হত। কারণ, বৃষ্টিতে আলুর আরও বেশি ক্ষতি হল।”

Advertisement


সুনতালেখোলা যাওয়ার আগে বাগডোগরা বিমানবন্দরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
সঙ্গে উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী গৌতম দেব। সোমবার বিশ্বরূপ বসাকের তোলা ছবি।

বস্তুত, বৃষ্টিতে চা বাগানগুলি উপকৃত হলেও আলু চাষিরা বিপাকেই পড়েছেন।

শিলিগুড়ি, জলপাইগুড়ি, আলিপুরদুয়ার, কোচবিহার সর্বত্রই বৃষ্টি হয়েছে। তবে শিলিগুড়ি এবং জলপাইগুড়িতে বৃষ্টির সঙ্গে ঝড়ও হয়েছে। বিকেল সওয়া পাঁচটা নাগাদ শিলিগুড়িতে ঝড় বৃষ্টি শুরু হয়ে যায়। সকাল থেকে দিনভর আকাশ পরিষ্কার থাকলেও বিকেলের পরে আচমকা আকাশ কালো করে ঝড়, বৃষ্টি শুরু হলে বিপাকে পড়েন অফিস ফেরত মানুষ। তাতে ভোটের মুখে প্রচারের কাজেও সমস্যায় পড়তে হয়েছে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা কর্মীদের।

‘গোদের উপরে বিষ ফোঁড়ার’ মতো বৃষ্টির জন্য আলু চাষিদের মাথায় হাত পড়েছে। চাষিদের অনেকে দাম বাড়বে আশায় খেত থেকে আলু তোলেননি। বিপাকে পড়েছেন তাঁরা। খেত ভিজে যাওয়ায় আলু ফেলে রাখা সম্ভব হবে না বলে জানান কৃষি আধিকারিকরা। যে সমস্ত চাষি আলু তুলে বস্তায় পুড়ে মাঠে খোলা আকাশের নীচে ফেলে রেখেছেন, তাঁরাও বিপাকে পড়েছেন। আলু না শুকিয়ে হিমঘরে পাঠাতে পারবেন না। জলপাইগুড়ি জেলা কৃষি আধিকারিক সুজিত পাল বলেন, “বেশিরভাগ আলু উঠেছে। দশ শতাংশের মতো খেতে আছে। যে ভাবে বৃষ্টি হয়েছে, তাতে ওই আলু দ্রুত তুলে ফেলতে হবে।”

এ দিন বিকেল থেকে দমকা হাওয়া বয়েছে। ৬টা নাগাদ ডুয়ার্সের বিভিন্ন এলাকায় অঝোরে বৃষ্টি নামে। সেই সঙ্গে শুরু হয় লোডশেডিং। বৃষ্টির জেরে শিলিগুড়ি শহরের বিভিন্ন রাস্তায় জল দাঁড়িয়ে যায়। বৃষ্টি কমলে পরে জল সরেছে। ডুয়ার্সে, ময়নাগুড়ি, ধূপগুড়ি এলাকায় বৃষ্টির সঙ্গে লোডশেডিংয়ের জেরে বিপাকে পড়েন পথচারীরা। এদিকে ভারি বৃষ্টি দেখে দিশেহারা চাষিদের অনেকে পলিথিন নিয়ে মাঠে তুলে রাখা আলু ঢেকে রাখার কাজ শুরু করেন। কিন্তু দমকা হাওয়ার জন্য তাও অনেক জায়গায় সম্ভব হয়নি। আলু বলয় হিসেবে পরিচিত হয়ে ওঠা ধূপগুড়ি, জলপাইগুড়ি সদর এবং ময়নাগুড়ির চাষিদের একাংশ বৃষ্টিতে ভিজে খেতে রাখা বস্তা বোঝাই আলু ঘরে তুলে আনতে চেষ্টা করেন। ময়নাগুড়ির মাধবডাঙা-২ এলাকার আলু চাষি তথা সিপিএম নেতা শিরেন রায় বলেন, “খেতে থাকা আলু কাদায় তলিয়েছে। তাড়াতাড়ি তোলার ব্যবস্থা না করলে পচন ধরবে।”


সুনতালেখোলা যাওয়ার আগে বাগডোগরা বিমানবন্দরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
সোমবার বিশ্বরূপ বসাকের তোলা ছবি।

জেলা কৃষি দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, জলপাইগুড়ি এবং আলিপুরদুয়ার জেলায় প্রায় ৫০ হাজার হেক্টর জমিতে আলু চাষ হয়েছে। গত বছরের তুলনায় চাষের এলাকা বেড়েছে প্রায় ১০ হাজার হেক্টর।

গত বছর দুই জেলায় আলু উৎপাদনের পরিমাণ ছিল প্রায় ৮ লক্ষ মেট্রিক টন। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় উৎপাদন বেড়ে ১০ লক্ষ মেট্রিক টন ছেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ওই আলু মজুত করা নিয়েও সমস্যা দেখা দিয়েছে। জলপাইগুড়ি এবং আলিপুরদুয়ার জেলায় মাত্র ২৬টি হিমঘর রয়েছে। সেখানে ৩ লক্ষ ৫৭ হাজার মেট্রিক টন আলু মজুত করা সম্ভব। জলপাইগুড়ি মহকুমা কৃষি আধিকারিক হরিশ্চন্দ্র রায় বলেন, “উত্তর পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলিতে আলু পাঠানোর কাজ চলছে। পরিস্থিতি অনেকটা স্থিতিশীল। দাম কিছুটা বেড়েছে। এই মুহূর্তে বৃষ্টি নতুন করে সমস্যা ডেকে আনল।”

আলু চাষিরা উদ্বেগে পড়লেও ভারি বৃষ্টি পেয়ে খুশি চা চাষিরা। তাঁরা জানান, টানা অনাবৃষ্টিতে পোকার অত্যাচার বেড়ে চলায় বাগানে পাতার উৎপাদন কমে যায়। সেচের ব্যবস্থা করতে হচ্ছিল। জলপাইগুড়ি জেলা ক্ষুদ্র চা চাষি সমিতির সম্পাদক বিজয়গোপাল চক্রবর্তী জানান, এই মুহূর্তে বৃষ্টি পেয়ে একদিকে যেমন সেচের খরচ কমল, অন্য দিকে পোকার আক্রমণ কমে পাতার উৎপাদন বাড়বে।

এদিন দুপুর ৩টে থেকে টানা তিন ঘণ্টা রায়গঞ্জে বৃষ্টি হয়েছে। সন্ধ্যা ৭টা থেকে প্রায় এক ঘন্টা হাল্কা বৃষ্টি হয়। কালিয়াগঞ্জ, ইটাহার ও হেমতাবাদেও বৃষ্টি হয়েছে। এদিন মেঘলা আকাশের জেরে বিকাল ৪টা নাগাদ রায়গঞ্জে সন্ধ্যা নেমে যায়। বৃষ্টির জেরে এদিন রায়গঞ্জের রাস্তাঘাট সুনসান হয়ে যায়। দোকানপাট খোলা থাকলেও ক্রেতাদের ভিড় চোখে পড়েনি। রায়গঞ্জের লাইন বাজার এলাকায় চৈত্র সেলের বাজারেও ক্রেতাদের ভিড় চোখে পড়েনি। রায়গঞ্জের মোহনবাটী, মিলনপাড়া, সুদর্শনপুর, উকিলপাড়া, অশোকপল্লি সহ বিভিন্ন এলাকায় জল জমলেও পরে তা নেমে যায়।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement