ঢেউ: কয়েক ঘণ্টার বৃষ্টিতে এমনই জল জমে গিয়েছে শিলিগুড়ির রাস্তায়। মঙ্গলবার। ছবি: বিনোদ দাস
বৃষ্টির রেকর্ডে ২০১৯ সালকে ছাপিয়ে গেল ২০২০। লকডাউনের পাঁচ মাসে তো বটেই, তার আগে-পিছেও টি-২০ ম্যাচের মতো ব্যাটিং করে জলপাইগুড়ি, কোচবিহার ও আলিপুরদুয়ারে তাক লাগিয়ে দিয়েছে বৃষ্টি। কোথাও কোথাও বৃষ্টিপাত বৃদ্ধির পরিমাণ হাজার মিলিমিটারের বেশি। বর্ষার ঢের আগে থেকে বৃষ্টি শুরু হয়েছিল এ বছর। বর্ষা বিদায়েও তা হয়নি। শরতের গত কয়েক দিন রেকর্ড বৃষ্টি হয়েছে জলপাইগুড়ি-সহ উত্তরের বিভিন্ন জনপদে। আলিপুরদুয়ারে গত ২৪ ঘণ্টায় প্রায় ২৯২ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। টানা বৃষ্টিতে ফুঁসছে উত্তরের সব নদী-ঝোরা। জলপাইগুড়ি জেলা সদরেও করলা নদীর জল ঢোকার মুখে। নদী টইটম্বুর হয়ে বইছে। একই রকম বৃষ্টি হয়েছে শিলিগুড়ি শহরেও। কয়েক ঘণ্টার বৃষ্টিতে সেই শহরের অনেক পথই যেন নদী হয়ে যায়!
করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে গত মার্চ মাসের শেষ থেকে লকডাউন শুরু হয়েছে। তখন থেকেই রাস্তায় যানবাহন চলাচল কমে যায়। কল-কারখানার বড় অংশ বন্ধ হয়ে যায়। বাতাসে সবরকম দূষণই কমতে থাকে। বিশেষজ্ঞরা দাবি করেন, প্রকৃতিতে দূষণের কমে আসার সঙ্গে বৃষ্টিপাতের সরাসরি যোগ রয়েছে। যদিও কেন্দ্রীয় আবহাওয়া দফতরের সিকিমের আধিকারিক গোপীনাথ রাহা বলেন, “সরাসরি এমন যোগসূত্র আছে বলা যাবে না। এ বছর বেশি বৃষ্টি হওয়ার অন্যতম কারণ হল বঙ্গোপসাগরে বেশি পরিমাণে নিম্নচাপ তৈরি না হওয়া। বঙ্গোপসাগরে পরপর নিম্নচাপ তৈরি হতে থাকলে মৌসুমি অক্ষরেখা সরে যায়। এ বছর তা হয়নি। ফলে মৌসুমি অক্ষরেখা উত্তরবঙ্গের উপরে থাকায় বৃষ্টি বেশি হয়েছে।”
অন্য দিকে, পরিবেশপ্রেমী সংগঠনের মুখপাত্র রাজা রাউত বলেন, “এমন অনুমান করাটা স্বাভাবিক। শুধু আমাদের শহর বা দেশ নয়, গোটা বিশ্বেই লকডাউন হয়েছিল। গোটা বিশ্বেই দূষণ কমেছে। তার প্রভাব তো পরিবেশের ওপরে পড়বেই।” জলপাইগুড়িতে গত চব্বিশ ঘণ্টায় আশি মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। গত পাঁচ দিন ধরে নাগাড়ে বৃষ্টি হচ্ছে জলপাইগুড়িতে। অতিরিক্ত বৃষ্টির সুফল মিলছে বলে কৃষকদের দাবি। এই সময় ধানের চারা মাথা তুলেছে। বৃষ্টির জল পেলে ধানের ফলন ভালই হবে বলে কৃষকদের দাবি। তবে টানা বৃষ্টিতে স্বাভাবিক তাপমাত্রাও কমেছে। তার জেরে সর্দি-জ্বরের সংক্রমণও বাড়ছে। করোনা আবহে তা আতঙ্কও তৈরি করেছে বাসিন্দাদের মধ্যে। কেন্দ্রীয় আবহাওয়া দফতরের পুর্বাভাস, আগামী চব্বিশ ঘণ্টায় বৃষ্টি চলতে পারে।