ছোটর পথে ভারী গাড়ি, দুর্ঘটনাপ্রবণ ডালখোলা

নিয়ম কেবল ছোট গাড়ি চলার। তা না মেনেই ভারী যানবাহন চলায় দুর্ঘটনা বাড়ছে বলে অভিযোগ উঠেছে ডালখোলার বেঙ্গল টু বেঙ্গল সড়কে। দাবি। মঙ্গলবার রাতেই কলকাতা থেকে শিলিগুড়িগামী একটি বেসরকারি যাত্রীবোঝাই বাস উল্টে পাঁচ জন যাত্রী জখম হন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

রায়গঞ্জ শেষ আপডেট: ১৪ মে ২০১৬ ০২:৩৬
Share:

সংকীর্ণ রাস্তা আরও সংকীর্ণ হয়েছে ভুট্টা শুকোতে দেওয়ার জন্য। বাড়ছে দুর্ঘটনার ভয়। ছবি: গৌর আচার্য।

নিয়ম কেবল ছোট গাড়ি চলার। তা না মেনেই ভারী যানবাহন চলায় দুর্ঘটনা বাড়ছে বলে অভিযোগ উঠেছে ডালখোলার বেঙ্গল টু বেঙ্গল সড়কে। দাবি। মঙ্গলবার রাতেই কলকাতা থেকে শিলিগুড়িগামী একটি বেসরকারি যাত্রীবোঝাই বাস উল্টে পাঁচ জন যাত্রী জখম হন। তার পরে ভবিষ্যতে দুর্ঘটনা রুখতে বেঙ্গল টু রোডে ভারী গাড়ির চলাচল রুখতে ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ জানিয়ে বুধবার জেলা আঞ্চলিক পরিবহণ আধিকারিককে চিঠি দিয়েছেন পুলিশ সুপার।

Advertisement

জেলা পুলিশের দাবি, পরিবহণ দফতরের তরফে ওই রাস্তায় বেআইনিভাবে ভারী যানবাহন চলাচল রুখতে কোনও বিধিনিষেধ জারি না হওয়ায় অভিযান চালানো সম্ভব হচ্ছে না। পুলিশ সুপার অমিতকুমার ভরত রাঠৌর বলেন, ‘‘ভবিষ্যতে দুর্ঘটনা রুখতে আমি জেলা আঞ্চলিক পরিবহণ আধিকারিককে চিঠি পাঠিয়ে ওই রাস্তায় ভারী যানবাহন চলাচল বন্ধ করতে উপযুক্ত পদক্ষেপ করার অনুরোধ করেছি। তাঁকে পুলিশের সঙ্গে অবিলম্বে বৈঠকে বসারও অনুরোধ করা হয়েছে। বেআইনি যানবাহন চলাচল রুখতে পুলিশ জেলা পরিবহণ দফতরকে সবরকম সহযোগিতা করবে বলে আশ্বাস দিয়েছি।’’

ডালখোলা এলাকার ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কে দিনভর দফায় দফায় রেলগেট বন্ধ হওয়ার কারণে যানজটের সমস্যা দীর্ঘদিনের। কখনও রেলগেট আবার কখনও পণ্যবাহী ট্রাক বিকল হয়ে পড়ার কারণেও ডালখোলা, পূর্ণিয়ামোড়, করণদিঘি ও টুঙ্গিদিঘির বিভিন্ন এলাকার ৩১ ও জাতীয় সড়কেও তীব্র যানজট হয়। এই পরিস্থিতিতে জাতীয় সড়কে যানজট এড়াতে প্রতিদিনই দিনভর শিলিগুড়ি, রায়গঞ্জ ও কলকাতা রুটে বহু দূরপাল্লার বাস ও পণ্যবাহী ট্রাক বেঙ্গল টু বেঙ্গল রোড ধরে চলাচল করে। মূলতঃ করণদিঘি থানার বোতলবাড়ি মোড় থেকে গোয়ালপোখর থানার গোয়াগাঁও হয়ে চাকুলিয়া পর্যন্ত প্রায় ৫০ কিলোমিটার, চাকুলিয়া থানার কালীবাড়ি মোড় থেকে কিষাণগঞ্জ পর্যন্ত প্রায় ১২ কিলোমিটার ও চাকুলিয়া থানামোড় থেকে কানকি পর্যন্ত প্রায় ১০ কিলোমিটার তিনদিকের বেঙ্গল টু বেঙ্গল রোড হয়ে বাস ও ট্রাকগুলি চলাচল করে। ওই রাস্তাটি বড় গাড়ির জন্য সঙ্কীর্ণ হওয়ায় মাঝে মাঝেই ব্যাপক যানজট হয়। সেই সঙ্গে, পুলিশের নজরদারি না থাকায় কিছুদিন ধরে ওই রাস্তার বিভিন্ন এলাকায় দিনের বেলায় ইট ও গাছের গুঁড়ি ফেলে একদিক দখল করে বাসিন্দারা ভুট্টা শুকনোর কাজ শুরু করায় মাঝেমধ্যেই ভুটভুটি, বাইক, ট্রেকার-সহ বিভিন্ন ছোটগাড়ি উল্টে বাসিন্দারা জখম হচ্ছেন।

Advertisement

মঙ্গলবার রাতেই করণদিঘির সাবধান এলাকার বেঙ্গল টু বেঙ্গল রোডে বাঁক ঘোরার সময়ে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে কলকাতা থেকে শিলিগুড়িগামী একটি বেসরকারি বাস রাস্তার ধারে উল্টে যায়। ওই বাসে ৪০ জন যাত্রী থাকলেও দুর্ঘটনায় তাঁদের মধ্যে পাঁচজন যাত্রী জখম হন। দুর্ঘটনার পর বেসরকারি ওই বাসের চালক, খালাসি ও কনডাক্টর পালিয়ে যান। পুলিশ বাসটিকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়। রাস্তার একদিক দখল করে ভুট্টা শুকোনোর কাজ চলতে থাকায় গত একসপ্তাহে একাধিক ভুটভুটি, ট্রাক, বাইক ও অটো উল্টে গিয়ে বহু যাত্রী জখম হয়েছেন বলে পুলিশের কাছে খবর এসেছে। পুলিশ সুপার বলেন, ‘‘জাতীয় সড়কের বিকল্প জেলার দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ বেঙ্গল টু বেঙ্গল রাস্তায় পুলিশের নজরদারি নেই। সেই সুযোগ নিয়েই বাসিন্দারা বিভিন্ন এলাকায় রাস্তার একদিক দখল করে ভুট্টা শুকোনোর কাজ করছেন। তারই জেরে যানজট ও দুর্ঘটনা লেগে রয়েছে। অবিলম্বে পুলিশের হস্তক্ষেপে ওই রাস্তায় ভুট্টা শুকোনোর কাজ বন্ধ না করলে যে কোনও সময়ে বড়সড় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।’’

জেলা বাস ও মিনিবাস ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক প্লাবন প্রামাণিকের দাবি, ‘‘যাত্রীদের নিরাপত্তার স্বার্থে আমরাও চাই বেঙ্গল টু বেঙ্গল টু বেঙ্গল রোডে ভারী যানবাহন চলাচল নিষিদ্ধ হোক। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে পুলিশ ডালখোলা এলাকায় যানজট সমস্যার সমাধান করতে ব্যর্থ হচ্ছে বলেই চালকেরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বেঙ্গল টু বেঙ্গল রোড দিয়ে ভারী গাড়ি চালাতে বাধ্য হচ্ছেন। তাই পুলিশ ও পরিবহণ দফতরের অভিযান শুরুর আগে জাতীয় সড়কে যানজট সমস্যা ও বেঙ্গল টু বেঙ্গল রোডকে দখলমুক্ত করা উচিত।’’ তবে পুলিশ সুপারের পাল্টা দাবি, ‘‘মঙ্গলবার রাতে ডালখোলা এলাকার জাতীয় সড়কে কোনও যানজট ছিল না। কলকাতাগামী ওই বাসটি বেআইনিভাবে কানকি বা কিষাণগঞ্জ দিয়ে বেঙ্গল টু বেঙ্গল রোডে ঢুকে পড়েছিল।’’ তিনি জানান, জাতীয় সড়কে যানজট সমস্যার স্থায়ী সমাধানের চেষ্টা চলছে। বেঙ্গল টু বেঙ্গল রোড দখল করে বাসিন্দাদের ভুট্টা শুকনোর কাজ না করার জন্য পুলিশের তরফে সতর্ক করে মাইকিং করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement