বিজেপি, তৃণমূল ও মোর্চার বিরোধী, পাহাড়ের এমন দলগুলোর কাছাকাছি আসার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল বেশ কিছুদিন আগেই। আসন্ন লোকসভা ভোটে ওই দলগুলো সর্বসম্মতভাবে কোনও প্রার্থী দেবে কিনা তা নিয়েও জল্পনা চলছে। শুক্রবার সকালে কালিম্পঙের জন আন্দোলন পার্টির (জাপ) নেতা হরকাবাহাদুর ছেত্রী শিলিগুড়িতে সিপিএমের দলীয় অফিস অনিল বিশ্বাস ভবনে আসেন। যা সেই জল্পনাকে আরও উসকে দিল বলেই মনে করছে পাহাড়ের রাজনৈতিক মহল।
যদিও এ দিন অশোক ভট্টাচার্য বা জীবেশ সরকারের সঙ্গে হরকাবাহাদুরের দেখা হয়নি। তাঁরা দু’জনেই তখন দলের কাজে শহরের বাইরে ছিলেন। সিপিএম অফিস থেকেই তাঁদের সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেন হরকা। আজ, শনিবার তিনি সিপিএম নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে বসতে পারেন। হরকাবাহাদুর বলেন, ‘‘ভোট এসে গিয়েছে। পাহাড়ের ভূমিপুত্রকে সর্বসম্মতভাবে প্রার্থী করার একটি আওয়াজ উঠেছে। পাহাড়ের ১৬টি দলে তা আলোচনা হয়েছে। সবাই চাইলে আমিও প্রার্থী হতে পারি। তবে সবই আলোচনা করে চূড়ান্ত হবে। এই জন্যই সিপিএম অফিসে এসেছিলাম। আবার বৈঠক হবে।’’
সিপিএমও এ বার পাহাড়ের দিকে তাকিয়ে সর্বসম্মত প্রার্থীর পক্ষে সওয়াল শুরু করেছে।
মেয়র অশোকবাবু বলেন, ‘‘হরকাবাহাদুরের সঙ্গে কথা হয়েছে। কয়েকদিনের মধ্যে জেলার সমমনোভাবাপন্ন দলগুলোর একটি বৈঠক হবে। একজোট হয়ে লড়াই করা যায় কি না তা দেখা হবে।’’
হরকাবাহাদুরের সঙ্গে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাদের বরাবর সুসম্পর্ক রয়েছে। অশোকবাবুদের সঙ্গে যেমন তাঁর দীর্ঘ দিন ধরে যোগাযোগ রয়েছে। তেমনিই কংগ্রেস, সিপিআরএম, গোর্খা লিগ, জিএনএলএফ বা মোর্চার নেতার কারও কারও সঙ্গেও তাঁর যোগাযোগ রয়েছে। ২০১১-র পর থেকে তৃণমূলের সঙ্গে নিবিড় যোগাযোগ থাকলেও গত কয়েক বছরে তিনি ঘাসফুল শিবির থেকে অনেকটাই সরে এসেছেন। গত এক মাস ধরে পাহাড়ে সর্বসম্মত প্রার্থীর পক্ষে জোর সওয়াল শুরু হতেই ময়দানে নেমেছেন হরকাবাহাদুর।
২০১৪-র লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি প্রার্থী সুরেন্দ্র সিংহ অহলুওয়ালিয়া মোর্চার সমর্থনে ৪ লক্ষ ৮৮ হাজারের মত ভোট পান। দ্বিতীয় স্থানে তৃণমূলের ভাইচুং ভুটিয়া ২ লক্ষ ৯১ হাজার, সিপিএমের সমন পাঠক ১ লক্ষ ৬৭ হাজার
এবং কংগ্রেসের প্রার্থী ৯০ হাজার মত ভোট পান। জিএনএলএফ ভোটে লড়েনি। পাহাড়ের বিজেপি ও তৃণমূল বিরোধী দলগুলোর দাবি, বিজেপির ভোটের বেশিরভাগটাই মোর্চার। সেখানে বিনয় তামাং ক্ষমতায় আসার পরে বিমল গুরুংপন্থীরা ক্ষুব্ধ। প্রকাশ্যে কেউ কিছু না বললেও ভোটের বাক্সে তার প্রভাব পড়তে পারে বলে তাদের ধারণা। তেমনি, কংগ্রেস এবং সিপিএমের মিলিত ভোটের অংশও বড়। তার উপরে গত কয়েক বছরে জিএনএলএফের সংগঠন ভালই শক্তিশালী হয়েছে। কালিম্পঙেও মোর্চা ছাড়া জাপই সবচেয়ে বড় দল। এই সমস্ত ভোট এক করে লড়তে চাইছেন হরকা বাহাদুর।
এই বিষয়ে কংগ্রেসের জেলা সভাপতি শঙ্কর মালাকার বলেন, ‘‘তৃণমূল ও বিজেপি দুই দলেরই বিরোধী আমরা। সর্বসম্মত প্রার্থী নিয়ে আমাদের জানানো হলে আমরা দলীয় স্তরে আলোচনা করব।’’