হামরো পার্টির সভাপতি অজয় এডওয়ার্ড। —ফাইল চিত্র।
নতুন বছরের এপ্রিল নাগাদ দার্জিলিং পাহাড়ে তিন পুরসভায় পুরভোট হতে চলেছে৷ পাহাড়ের শাসক দল প্রজাতান্ত্রিক মোর্চার বিরুদ্ধে নতুন মঞ্চ গড়ে লড়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন হামরো পার্টির সভাপতি অজয় এডওয়ার্ড। আগামী ২২ ডিসেম্বর অজয়ের নতুন রাজনৈতিক মঞ্চ সামনে আসছে। সেখানে বিজেপি, জিএনএলএফ বা গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা আগামীতে কী করবে বা তাদের ভূমিকা কী হবে, তা নিয়ে এখন পাহাড়ে আলোচনা শুরু হয়েছে। আদৌও ওই দলগুলি অজয়ের পাশে থাকবে কি না, সে প্রশ্নও উঠতে শুরু করেছে।
পাহাড়ের রাজনৈতিক নেতারা মনে করছেন, অজয় দ্বিমুখী লড়াইয়ের চিন্তা-ভাবনা করলেও আগামী পুরভোট পাহাড়ে ত্রিমুখীই হবে। কারণ, প্রজাতান্ত্রিক মোর্চা এবং অজয়-বিরোধীরা বিজেপির নেতৃত্বে আলাদা জোটে যেতে পারে। অনেকটা লোকসভার জোট বা জিটিএ-র মতো নির্দল প্রার্থীদের সবাই মিলে বিভিন্ন আসনে দাঁড় করাতে পারে। তাতে আখেরে বহুমুখী লড়াইয়ে পাহাড়ের বর্তমান শাসক দলের সুবিধা হতে পারে।
আগামী চার মাস পরের ভোট নিয়ে এখনই রোজ চুলচেরা বিশ্লেষণে নেমেছেন নেতারা। প্রজাতান্ত্রিক মোর্চার সভাপতি তথা ‘গোর্খাল্যান্ড টেরিটোরিয়াল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন’ (জিটিএ)-এর প্রধান অনীত থাপা বলেছেন, ‘‘অজয়কে নিয়ে আমরা বিন্দুমাত্র ভাবছি না। আর বাকিরা তো ভোটের ময়দানে থাকবেই।’’ তাঁর দাবি, স্থানীয় ভোটে প্রজাতান্ত্রিক মোর্চা ভাল ফল করে এসেছে। আগামী পুরভোটেও করবে। বাকিদের সংগঠন বলে পাহাড়ে কিছু নেই।
যদিও অজয় এডওয়ার্ডের অনুগামীরা জানাচ্ছেন, গত সাত দিনে দার্জিলিং শহর, পোখরিবং, সুখিয়াপোখরি থেকে শুরু করে কালিম্পং জেলার বিভিন্ন প্রান্তে ঘুরেছেন হামরো পার্টির সভাপতি। জিএনএলএফের পুরানো নেতা থেকে শাসক দলের বহু নেতাকেই তিনি পাশে পেয়েছেন। তবে তাঁর পুরানো দল জিএনএলএফফকে তিনি কোনও দিনই ভোট-লড়াইয়ে হয়তো পাশে পাবেন না। আর বিমল গুরুং সম্প্রতি অজয়ের কিছু কাজকর্ম নিয়ে প্রকাশ্যেই সরব হয়েছিলেন। তাতে বোঝা গিয়েছে, ব্যক্তিগত সম্পর্ক থাকলেও আদতে গুরুং জল না মেপে অজয় বা অন্য কারও পাশে যাবেন না।
অজয় অবশ্য ভোটের থেকে বেশি জাতিসত্ত্বা, উন্নয়ন বা গোর্খাদের দাবিদাওয়াকে সামনে এনে নতুন লড়াইয়ের কথা বলা শুরু করেছেন। সেখানে তিনি আলাদা রাজ্যের প্রসঙ্গও তুলেছেন। অজয় বলছেন, ‘‘উন্নয়ন থেকে গোর্খাদের উন্নতি কিছুই হচ্ছে না। কেউ ভাল কাজ করতে গেলে তাঁদের টেনে নামানোর ব্যবস্থা হচ্ছে। সেই জায়গায় বসে জিটিএ চালিয়ে শাসক দল পাহাড়ে কী করছে তা মানুষ দেখছেন। গোর্খা জাতির উন্নতির লক্ষ্যে সবাইকে একজোট হয়ে অপশাসনের বিরুদ্ধে সরব হতে হবে।’’
অনীতেরা অবশ্য শান্তি এবং উন্নয়নকে হাতিয়র করেই প্রচারে নামার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। দলীয় সূত্রের খবর, এ সপ্তাহেই কালিম্পংয়ের বৈঠকে অনীত দলীয় নেতাদের এলাকাভিত্তিক বৈঠক, সংগঠনের কাজে নেমে পড়ার কথা বলেছেন। সেখানে পাহাড়ে শান্তি থাকলে উন্নয়ন ত্বরান্বিত হয়, রোজগারে প্রভাব পড়ে না— সে কথা বাসিন্দাদের বলতে বলা হয়েছে। সরকারি প্রকল্পগুলিও তুলে ধরে প্রচার করার কথা ঠিক হয়েছে।