শ্মশান থেকে আধপোড়া দেহাংশ খুবলে খেল একটি কুকুর। শুক্রবার সকালে শিলিগুড়ির রামঘাট এলাকার একটি শ্মশানে এই ঘটনায় এলাকায় আতঙ্কের পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। ঘটনার পরে উত্তেজিত জনতার বিক্ষোভ ঠেকাতে ঘটনাস্থলে যেতে হয় শিলিগুড়ি থানার পুলিশকে। পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনলেও স্থানীয় বাসিন্দারা ফের বৃহত্তর আন্দোলনের জন্য তৈরি হচ্ছেন তাঁরা বলে জানানো হয়েছে।
ঘটনার নিন্দা করে বিষয়টি নিয়ে ওই শ্মশান কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে দ্রুত সমস্যা সমাধান করার আশ্বাস দিয়েছেন মেয়র। ওই শ্মশান চালান স্থানীয় অগ্রসেন মণ্ডল নামে ট্রাস্ট। ওই ট্রাস্টের দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিক ভগবতী প্রসাদ ডালমিয়া অবশ্য জানিয়ে দেন, তাঁদের ট্রাস্ট শ্মশানটি চালালেও সেখানে তাঁরা কোনও নজরদারি করবেন না। তিনি বলেন, ‘‘আমি এমন কোনও ঘটনা শুনিনি। তবে কে কোন অবস্থায়, কোনও মৃতদেহ শ্মশানে আনছে, তা দেখার দায়িত্ব আমার নয়। আমাদের সাফাইকর্মী বা অন্য কোনও কর্মীরাও এর দায়িত্ব নেবেন না।’’ তিনি পুলিশকেও জানাতে নারাজ বলে জানান। যদিও বিষয়টি হালকা ভাবে নিচ্ছেন না বলে জানিয়েছেন শিলিগুড়ির পুলিশ কমিশনার চেলিং সিমিক লেপচা। তিনি বলেন, ‘‘আমার বিষয়টি জানা ছিল না। সংশ্লিষ্ট থানাকে এ বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ করতে নির্দেশ দিচ্ছি।’’
এই শ্মশানে মৃতদেহ পোড়াতে গেলে কোনও ডাক্তারি শংসাপত্র লাগে না। চুল্লিও কাঠের। এ বিষয়ে দু’বছর আগে খবর প্রকাশিত হওয়ার পরে তৎকালীন উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী, এখন পর্যটনমন্ত্রী গৌতম দেব তাঁর দফতরের পক্ষ থেকে শ্মশানটিকে অধিগ্রহণ করে তাঁতে বৈদ্যুতিক চুল্লি তৈরি করার পরিকল্পনা নেন। তার শিলান্যাসও করা হয়েছিল। কিন্তু স্থানীয় লোকজনের আপত্তিতে শ্মশানের কাজ শেষ করতে পারেননি। ফলে আগের অবস্থাই চালু থাকে। পুরসভার নজরদারি না থাকায় আগে এখানে মৃতদেহ পুড়িয়ে তারপর পোড়ানোর স্লিপ দেখিয়ে পুরসভা থেকে মৃত্যু শংসাপত্র দেওয়া হয়। এ বিষয়ে তাঁদের হাত-পা বাঁধা বলে স্বীকার করেছেন তিনি। তিনি বলেন, ‘‘এটি ভয়ঙ্কর ঘটনা। বিষয়টি নিয়ে এ বার ভাবার সময় এসেছে। আমি শ্মশান কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলব।’’ যদিও বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন করতে গৌতমবাবু বলেন, ‘‘আমি শ্মশানে বৈদ্যুতিক চুল্লি তৈরি করে তাকে একটি প্রক্রিয়ার মধ্যে আনতে চেয়েছিলাম। মানুষ চায়নি, তাই কাজ হয়নি।’’ এর বেশি কিছু তিনি বলতে চাননি। স্থানীয় লোকেরা সেই সময় বাধা দিয়েছিলেন, তাঁদের সঙ্গে আলোচনা না করে সরকার পদক্ষেপ করছিল বলে। সেই সময়ে এক ব্যক্তি মহানন্দ মণ্ডলকে মন্ত্রী চড়ও মারেন। এরপরে গোলমাল বড় আকার নেয়। পরে দীর্ঘ আন্দোলনের পর চুল্লি আর হয়নি। সেই মহানন্দবাবু বর্তমানে দার্জিলিং জেলা ফরওয়ার্ড ব্লকের সম্পাদক। তিনি এদিন অবশ্য শ্মশান কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ দেখান। তাঁকে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, ‘‘মানুষের সমস্যা হচ্ছে। বেআইনিভাবে মড়া পোড়ানো হচ্ছে। এটা তো হতে দিতে পারি না।’’ তবে আগে কেন বাধা দিয়েছিলেন, তার উত্তর মেলেনি।