কালিম্পঙে শহিদ দিবসের অনুষ্ঠানে জিটিএ প্রধান অনীত থাপা ও বিধায়ক রুদেন সাদা লেপচা। —নিজস্ব চিত্র।
গত কয়েক বছরে পাহাড়ে বিজেপির দেওয়া মিথ্যা আশ্বাস আর প্রতিশ্রুতির জেরে, পথে নেমে গোর্খারা ‘শহিদ’ হয়েছেন বলে মন্তব্য করলেন ‘গোর্খাল্যান্ড টেরিটোরিয়াল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন’ (জিটিএ)-এর প্রধান অনীত থাপা। বৃহস্পতিবার সকালে কালিম্পঙের এগারো মাইলের শহিদ পার্কে পাহাড়ের শহিদ দিবসের অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন অনীত।
গত কয়েক বছরে পাহাড়ে আন্দোলনের জেরে, পর পর মৃত্যুর জন্য তিনি বিজেপি সরকারকে সরাসরি দায়ী করেন। দেশে সরকার পরিবর্তন হলে পাহাড়ের গোর্খারা আবার স্বপ্ন দেখতে পারবেন বলেও মন্তব্য করেন জিটিএ প্রধান। অন্য দিকে, দার্জিলিঙে গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার শীর্ষ নেতা বিমল গুরুংও এ দিন শহিদ দিবসের অনুষ্ঠান থেকে জানিয়েছেন, দিল্লিতে যন্তরমন্তরে ৪ অগস্ট আলাদা রাজ্যের দাবিতে ধর্না দেবেন। ১৫ অগস্ট প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী গোর্খাদের জন্য কোনও ঘোষণা না করলে, দিল্লিতে গিয়ে আন্দোলন করার কথাও বলেন তিনি। যদিও পাহাড়ে গুরুং-বিরোধীদের দাবি, লোকসভার বাদল অধিবেশনে পাহাড় সংক্রান্ত বিষয়ে কিছুই তালিকাভুক্ত নেই৷ তাঁদের দাবি, সবটাই ‘লোকদেখানো’ রাজনীতি৷
অনীত এ দিন বলেন, ‘‘গোর্খাদের শুধু আশ্বাস এবং প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে। ‘গোর্খাদের স্বপ্ন, আমাদের স্বপ্ন’ অবধি বলা হয়েছে। আর গোর্খারা নিজেদের ঘর জ্বালিয়ে আলাদা রাজ্যের জন্য শহিদ হয়েছেন। বিজেপির জন্যই এটা হয়েছে।’’ অনীতের অভিযোগ, গত ১৫ বছরে পাহাড় থেকে নির্বাচিত তিন জন বিজেপি সাংসদ দিল্লি থেকে কিছুই আনতে পারেননি, মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। যদিও অনীতের মন্তব্য নিয়ে দার্জিলিঙের বিজেপি সাংসদ রাজু বিস্তা মন্তব্য করেননি। পাহাড়ের বিজেপি নেতারাও কিছু বলতে চাননি।
১৯৮৭ সালে কালিম্পঙে ভারত-নেপাল চুক্তিপত্র পোড়ানো এবং আলাদা রাজ্যের দাবিতে আন্দোলন হয়। শতাধিক পাহাড়বাসী মারা যান। গুলি-বোমা-ল্যান্ডমাইনের ব্যবহার অবধি হয়েছিল বলে অভিযোগ। শেষে পার্বত্য পরিষদ গঠন হয় এবং সুবাস ঘিসিং তার দায়িত্বে আসেন। সে সময় থেকে ২৭ জুলাই পাহাড়ে শহিদ দিবস পালিত হয়। ২০০৭ সাল, ২০১৭ সালে আলাদা রাজ্যের আন্দোলনে নেমে যাঁরা মারা গিয়েছেন, তাঁদেরও একই দিনে স্মরণ করা হয় পাহাড়ে। বিভিন্ন দল অনুষ্ঠান করে।
অনীতের বক্তব্য, স্থানীয় পরিকাঠামো ও উন্নয়নের সঙ্গে আত্মপরিচয় দৃঢ় করে কেন্দ্রের কাছে দাবি করতে হবে। তাঁর অভিযোগ, সে সব না করে শুধু নিজেদের মধ্যে মারামারি এবং সরকারি-বেসরকারি সম্পত্তি নষ্ট করা হয়েছে। অনীত বলেন, ‘‘রাজ্যের সঙ্গে সমন্বয় রেখে নিজেদের এলাকাকে তৈরি করতে হবে। তার পরে, কেন্দ্রের দরবারে যেতে হবে। তবে কেন্দ্রে বিজেপি সরকার থাকলে, পাহাড়ে কিছুই হবে না। ’’
আশির দশকে আন্দোলন থামিয়ে পার্বত্য পরিষদ এবং ২০১১ সালের পরে, আবারও আন্দোলন বন্ধ করে ‘গোর্খাল্যান্ড টেরিটোরিয়াল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন’ (জিটিএ) কেন্দ্রে কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন সরকার থাকাকালীনই হয়েছে।