সম্ভাবনা: গোসানিমারির প্রত্নক্ষেত্র। নিজস্ব চিত্র
রাজপাট। কামতেশ্বরী মন্দির। শালবাবাগান। রাজার গড়। সিঙ্গিমারি নদী। তার সঙ্গে লাগোয়া বিঘের পর বিঘে জমি। কোথাও ধান, কোথাও পাট, কোথাও তামাক। টুকরো টুকরো করে দেখলে মনে হবে এক ছুটে চলে যায় ওই সুদৃশ্য প্রান্তরে। যেখানে রাজা, মন্দিরের কথা ভাবতে ভাবতে হারিয়ে যাওয়া যাবে কয়েক বছর আগের ইতিহাসে।
যেখানে নদীর জলের পাশে খানিক বসে মিটিয়ে নেওয়া যাবে ক্লান্তি। আর পরিচিত হওয়া যাবে কৃষির সঙ্গে। কোচবিহারের গোসানিমারিকে নিয়ে এমন ভাবনাতেই কৃষি ভিত্তিক পর্য়টন কেন্দ্র গড়ে তোলার দাবিতে সরব হয়েছেন বাসিন্দারা। ইতিমধ্যেই কোচবিহারের সাংসদ পার্থপ্রতিম রায়কে বিষয়টি জানিয়েছেন তাঁরা।
সাংসদ বলেন, “ওই বিষয়টি নিয়ে আমরা আলোচনা করছি। গোসানিমারি এমনিতেই একটি পর্যটন কেন্দ্র। তার অনেক ইতিহাস। এ ছাড়া কৃষিক্ষেত্রেও নানাদিক রয়েছে ওই এলাকার। সব মিলিয়ে একটা কৃষি ভিত্তিক পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলার একটা সুযোগ রয়েছে। তা নিয়ে সংশ্লিষ্ট দফতরের সঙ্গে কথা বলব।” কোচবিহার সাতমাইল ফার্মার্স ক্লাবের পক্ষ থেকে বিষয়টি নিয়ে একটি প্রকল্প তৈরি করা হয়েছে। তাঁরা জানিয়েছেন, ওই প্রকল্পের কথা তাঁরা সাংসদকে জানিয়েছেন। এ বারে পর্য়টন ও কৃষি দফতরেও জমা দেবেন তাঁরা। পর্যটক টানতে সেখানে কিছু পরিকাঠামো তৈরি করতে হবে। গরুর গাড়ি ওঠার সুযোগ করে দেওয়া যেতে পারে পর্যটকদের। মাছ ধরার ব্যবস্থা থাকতে পারে। নানা ধরনের ফসলের প্রদর্শনী ক্ষেত্র থাকতে পারে। স্থানীয় সংস্কৃতি ভাওয়াইয়া, বাউল গানের আসর বসানো যেতে পারে।
ওই সংস্থার সম্পাদক অমল রায় বলেন, “গোসানিমারিতে এসব করলে খুবই ভাল হবে। আমাদের বিশ্বাস তাহলে ডুয়ার্স, পাহাড় ছুঁয়ে ক্ষণিকের জন্য হলেও এখানে আসতে হবে পর্যটকদের।’’
স্থানীয়দের অভিযোগ, কয়েকশো বছর আগের ক্ষেন রাজাদের ইতিহাস অবহেলায় পড়ে আছে সেখানে। ১৯৯৯ সালে গোসানিমারি রাজপাট খননের কাজ হয়। সেই সময় সেখানে প্রাচীন মূর্তি, পুরনো ইটের তৈরি কুয়ো, দেওয়াল, রুপোর মুদ্রার হদিশ মেলে। তার পর থেকে খনন কাজ বন্ধ রয়েছে। রাজপাট থেকে কিছু দূরেই কামতেশ্বরী মন্দির। ১৬৬৫ সালে ওই মন্দির তৈরি করেছিলেন কোচবিহারের মহারাজা প্রাণনারায়ণ।
কোচবিহার হেরিটেজ সোসাইটির সম্পাদক অরূপ মজুমদার বলেন, “কোচবিহার ও গোসানিমারি ঘিরে পর্যটন যেখানে নিয়ে যাওয়া যেত তার কিছুই হয়নি। অনেক কিছুই অবহেলায় পড়ে রয়েছে। এই বিষয়টিতে নজর দিলে শুধু গোসানিমারি নয় গোটা কোচবিহার পর্যটকদের অন্যতম আকর্ষণ হয়ে উঠবে।”