ক্রমাগত চাপের মুখে এ বার গোর্খাল্যান্ডের দাবিতে রিলে অনশন থেকেও পিছু হঠল মোর্চা। টানা চল্লিশ দিন ধরে পাহাড়ের তিন মহকুমাতে মোর্চার ছাত্র সংগঠনের রিলে অনশন প্রত্যাহার করার কথা ঘোষণা করা হয়েছে রবিবার। যে দিন মোর্চা ছাত্রদের অনশন প্রত্যাহার করিয়েছে, সে দিনই পাহাড় থেকে আগামী ভোট প্রচার শুরু করল তৃণমূল।
এ দিন, বিজনবাড়িতে দলের এক সভায় উপস্থিত ছিলেন রাজ্যের পর্যটন মন্ত্রী গৌতম দেব। চলতি বছরের শেষেই পাহাড়ে পুরসভা এবং পঞ্চায়েত ভোট হওয়ার কথা। আগামী বছরে জিটিএ-র ভোটও হতে পারে। এ দিন পর্যটনমন্ত্রী পাহাড়ের আগামী সব ভোটেই তৃণমূলের প্রার্থীদের জয়ী করার আবেদন জানিয়েছেন। বিজনবাড়িতে এ দিনের সভায় মোর্চা ছেড়ে কয়েকশো সমর্থক তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন বলে দাবি।
লাগাতার বন্ধের হুমকি দিয়েও চাপের মুখে মোর্চা প্রধান তথা জিটিএ চিফ বিমল গুরুঙ্গ সুর নরম করেছেন। গত বুধবার মোর্চার ডাকা বন্ধ নিয়ে প্রশাসনের সক্রিয়তা, হাইকোর্টের বন্ধকে অবৈধ ঘোষণা সব মিলিয়ে চাপে পড়ে গুরুঙ্গ বিবৃতি দিয়ে জানান, উৎসবের মরসুমে পাহাড়ে কোনও বন্ধ হবে না। রাজ্য সরকারের সঙ্গে সরাসরি সংঘাতের পথ থেকে খানিকটা সরে মুখ্যমন্ত্রীকে নানা ‘অনুরোধ’ চিঠিতে জানানোর কথাও জানান গুরুঙ্গ। রাজ্যের তৈরি সরাসরি চাপের সঙ্গে কেন্দ্রের ভুমিকাও উদ্বেগে রেখেছে মোর্চাকে। দলের ছাত্র সংগঠন পৃথক গোর্খাল্যান্ডের দাবিতে টানা অনশন চালিয়ে গেলেও, কেন্দ্রের তরফে কোনও সাড়া মেলেনি। আরও কিছু দিন অনশনে চালিয়ে গেলে মুখ পোড়ার আশঙ্কা ছিল বলে মোর্চা নেতাদের অনেকে দাবি করেন। চাপের প্রসঙ্গ স্বীকার করেননি মোর্চার সাধারণ সম্পাদক রোশন গিরি। তিনি দাবি করে বলেন, ‘‘চাপ থাকবে কেন? দার্জিলিঙের সাংসদ তথা কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর অনুরোধেই অনশন প্রত্যাহার করা হয়েছে। উরিতে জঙ্গি হামলার পরে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি স্পর্শকাতর হয়ে রয়েছে। সে করাণে আপাতত অনশন স্থগিত রাখা হয়েছে।’’
তৃণমূল অবশ্য পাহাড়ে সংগঠন বাড়ানোর চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। এ দিন বিজনবাড়িতে তৃণমূলের সভায় মন্ত্রী গৌতমবাবু পুরোদস্তুর ভোট প্রচার সেরে ফেলেন। গৌতমবাবু বলেন, রাস্তার হাল খারাপ, কৃষিতে বাসিন্দারা কোনও সহযোগিতা পান না অভিযোগ করে তিনি বলেন, ‘‘হাজারো সমস্যা রয়েছে এই এলাকায়। জিটিএ নিজেরা কাজ করে না, রাজ্যের কোনও দফতর কাজ করতে গেলে বাধা দেয়। দ্রুত পাহাড়ে পুরসভা-পঞ্চায়েত ভোট হবে, জিটিএ ভোটও হবে। উন্নয়নের স্বার্থে আপনারা তৃণমূলকে ভোট দিন।’’ বিজনবাড়িতে মহকুমা ঘোষণা, রোপওয়ে চালানো, পিপিপি উদ্যোগে নানা পর্যটনের প্রকল্পও হবে বলে গৌতমবাবু আশ্বাস দিয়েছেন। বিজনবাড়ি কলেজে আরও বেশ কিছু নতুন পাঠ্যক্রম, নতুন কৃষি কলেজ তৈরির প্রতিশ্রুতি মিলেছে তৃণমূলের মঞ্চ থেকে। এ দিন দার্জিলিঙে রাজ্য সরকারের গাঁধী জয়ন্তীর অনুষ্ঠানেও উপস্থিত ছিলেন গৌতমবাবু। সেই অনুষ্ঠানে সরকারি প্রকল্পে ৫০ জনকে ৭৫ হাজার টাকার চেক দেওয়া হয়।