বামের ভোট কি রামে, পুরসভা নিয়ে শুরু উদ্বেগ

তৃণমূলের তরফে ভোটের হারের পর রাম-বামের যোগাযোগের অভিযোগ করা হয়েছে।

Advertisement

কৌশিক চৌধুরী

শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ২৪ মে ২০১৯ ০৮:০৮
Share:

দলীয় ক্যাম্প অফিসে অশোক ভট্টাচার্য। নিজস্ব চিত্র

এ যেন বাম প্রায় মিশে গেল রামে! বৃহস্পতিবার লোকসভার ফল বের হতেই শিলিগুড়ির ছবি অনেকটাই স্পষ্ট ভাবে তাই বলছে। কোনও ভাবেই দেখা মিলল না বহুল চর্চিত শিলিগুড়ি মডেলের। উল্টে, গেরুয়া ঝড়ে বামেদের সঙ্গে কংগ্রেস, তৃণমূলও হারল শিলিগুড়িতে।

Advertisement

আগামী বছর, শিলিগুড়ি পুরসভা নির্বাচন। সঙ্গে সঙ্গে হওয়ার কথা শিলিগুড়ি মহকুমা পরিষদের পঞ্চায়েত ভোটেরও। লোকসভা ফলের ভিত্তিতে এগিয়ে থাকা বিধানসভায় বিজেপির সঙ্গেই ওই দুই ভোটে রাজ্যের শাসক দলের লড়াই হতে চলছে—তা একপ্রকার ঠিকই হয়ে গেল বলে অনেকের ধারণা। সেখানে স্থানীয় ভোটে রামের ঘর থেকে বামেরা ফিরে আসবেন কি না, অথবা কংগ্রেস শহরের নিজেদের পুরানো অস্তিত্ব আবার প্রমাণ করতে পারবে কি না, তা সময়ই বলবে।

তৃণমূলের তরফে অবশ্য ভোটের হারের পর রাম-বামের যোগাযোগের অভিযোগ করা হয়েছে। জেলার একাধিক নেতা বলেছেন, ‘‘এর আগের বিজেপি সাংসদের সঙ্গেও বাম নেতাদের অত্যন্ত সখ্য ছিল। সাংসদের তহবিলের টাকার অনুদান থেকে পুরসভায় অনেক সময় রাম বামকে পাশাপাশি দেখা গিয়েছে। নিজেরা তৃতীয় স্থানে থাকবে বুঝে গিয়ে বামেরা অধিকাংশ ভোট তাই ওই ঘরেই পাঠিয়েছে।’’ জেলা তৃণমূল সভাপতি তথা মন্ত্রী গৌতম দেব বলেন, ‘‘আমরা একা লড়াই করে হেরেছি। সেখানে বামেদের ভোট সবটাই প্রায় বিজেপিতে গিয়েছে। এতে তো সব স্পষ্ট, কোথায় কী হয়েছে।’’

Advertisement

দলীয় সূত্রের খবর, তিন বছর আগে শিলিগুড়ি বিধানসভা ভোটে বামেদের ঘরে ছিল, ৭৮ হাজার ভোট। এ দিন রাতে নির্বাচন কমিশনের শেষ হিসাবে (চূড়ান্ত ১৮ রাউন্ডের পরে) বলছে, এই বিধানসভায় বামেদের প্রাপ্ত ভোট মাত্র ১৩,৭৩৬টি। তা হলে কোথায় গেল, ৬৫ হাজারের মতো ভোট! যার হিসেব জলের মতো স্পষ্ট, তিন বছর আগের বিজেপির বিধানসভার ২০ হাজারের মতো ভোট এ বার বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১,০৩,৫৫৯। আর তা থেকেই পরিষ্কার, বামেদের ওই বিরাট ভোটব্যাঙ্ক ঢুকে পড়েছে নরেন্দ্র মোদী, অমিত শাহদের ঘরে। তার সঙ্গে যোগ হয়েছে কংগ্রেসে ভোটও। উল্লেখ্য, ২০১১ সালে প্রবল পরিবর্তনের হাওয়াতেও যা হয়নি। সে বার বামপ্রার্থী অশোক ভট্টাচার্য ৬৭ হাজারের মতো ভোট পান।

বাম নেতারা অবশ্য নানা যুক্তি দিচ্ছেন। তাঁরা জানাচ্ছেন, ২০১৪ সালে লোকসভা ভোটে বিজেপি প্রার্থীরা শিলিগুড়ি পুর এলাকার ২২টি ওয়ার্ডে এক নম্বরে ছিল। আরও ৮টি ওয়ার্ডে তৃণমূল এবং বামেদের ঘাড়ের কাছে নিঃশ্বাস ফেলেছিল। কিন্তু, ২০১৫ সালে হিসাব পাল্টে যায়। পুরসভা এবং মহকুমা পরিষদ শিলিগুড়ি মডেলের হাত ধরে বামেরা দখলও করে নেয়। বিজেপি ২টি পুর ওয়ার্ডে মাত্র জেতে। পরের বছর বিধানসভায় অশোকবাবু জিতেও যান। তাই স্থানীয় ভোটের সঙ্গে লোকসভা ভোট গুলিয়ে ফেললে চলবে না। মেয়র অশোকবাবুর কথায়, ‘‘লোকসভার সঙ্গে বাকি সব ভোটের প্রেক্ষিত, পরিস্থিতি আলাদা। তবে আমাদের ভোট অনেকটাই কমেছে। আমরা পর্যালোচনা করব।’’

তবে বামেদের কিছু নেতা জানাচ্ছেন, এ বারের লড়াইয়ে অনেক বাম সমর্থকের ঘরের ভোটও বিজেপি পেয়েছে। বামেরা যা অস্বীকার করেছে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement