বানভাসিদের জন্য রোজ হেঁসেলে বিধায়ক নিজে

রাঁধুনিদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বিধায়ক ও তাঁর স্বামী নিজেরা যে শুধু রান্নাই করছেন, তাই নয়, গাড়ি ও নৌকায় করে সেই খাবার বয়ে নিয়ে গিয়ে এলাকার ত্রাণ শিবিরগুলিতে বিলিও করছেন।

Advertisement

জয়ন্ত সেন

গাজল (মালদহ) শেষ আপডেট: ২৬ অগস্ট ২০১৭ ০৩:০১
Share:

একসঙ্গে: স্বামী স্ত্রী হাতে হাত মিলিয়ে রান্নায়।— নিজস্ব চিত্র।

রাজনীতির মানুষ তিনি। এমনি সময় হয়তো় হেঁসেলে ঢোকার বিশেষ সময় হয় না। কিন্তু এখন হেঁসেলের পুরো দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছেন। বানভাসিদের মুখে প্রতিদিন খাবার তুলে দিতে হবে যে। টানা সাত দিন ধরে গাজোলের বিধায়ক দীপালি বিশ্বাসের বাড়িতে চলছে বন্যা দুর্গতদের জন্য রান্না-যজ্ঞ। আর ওই কাজে তাঁর সব থেকে বড় সহযোগী তাঁর স্বামী।

Advertisement

রাঁধুনিদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বিধায়ক ও তাঁর স্বামী নিজেরা যে শুধু রান্নাই করছেন, তাই নয়, গাড়ি ও নৌকায় করে সেই খাবার বয়ে নিয়ে গিয়ে এলাকার ত্রাণ শিবিরগুলিতে বিলিও করছেন।

সোমবার মুখ্যমন্ত্রী বন্যা পরিদর্শনে এসে যখন গাজোলের আহোড়াতে গিয়েছিলেন, সে সময় সেখানে বানভাসিদের মধ্যে খিচুড়ি বিলি করছিলেন দীপালিদেবী। যা দেখে তাঁকে জড়িয়ে ধরে প্রশংসাও করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। শুক্রবার তাঁরা মুরগির মাংস ও ভাত রান্না করে বিলি করলেন গাজোল ব্লকের শলাইডাঙা ও রানিগঞ্জ ২ গ্রাম পঞ্চায়েতের ত্রাণ শিবিরগুলিতে।

Advertisement

গত বিধানসভা নির্বাচনে গাজোল থেকে সিপিএমের টিকিটে নির্বাচিত হয়েছিলেন দীপালি। গত বছরের ২১ জুলাই তিনি তৃণমূলে নাম লেখান। দলবদল করে তৃণমূলে যান সিপিএমের জেলা কমিটির সদস্য তাঁর স্বামী রঞ্জিত বিশ্বাসও। গাজোলের বামনগোলা মোড় থেকে কিছুটা গেলেই নয়াপাড়ায় বাড়ি দীপালিদেবীর। বাড়ির সামনে রয়েছে টিনের বড় চাতাল, যা বিধায়কের কার্যালয় বলেই পরিচিত। আর সেখানেই চলছে এই রান্না-যজ্ঞ। জানা গেল, রান্নার প্রস্তুতি চলে আগের রাত থেকেই। আনাজ কেটে, মশলা বেটে রাখা হয় আগের রাতে। প্রতিবেশী তৃণমূল সমর্থক অঞ্জলি সরকার, জবা বিশ্বাস, জলি মজুমদার, প্রফুল্ল বিশ্বাস, বিমল বর্মনরা সে সব করছেন পালা করে। আর সকাল হতেই শুরু হচ্ছে রান্না।

শুক্রবার সকালে দীপালিদেবীর বাড়িতে গিয়ে দেখা গেল তিনটি গ্যাসের ওভেন জ্বলছে। কোনওটিতে ভাত, কোনওটিতে মাংস। দু’জন রাঁধুনি দু’টি ওভেনে রান্না করছেন। আর একটিতে পেল্লায় কড়াইয়ে মাংস রান্নায় ব্যস্ত স্বামী-স্ত্রী, দুজনেই। কখনও খুন্তি ধরছেন দীপালিদেবী, কখনও বা রঞ্জিতবাবু। বিধায়ক জানালেন, দলের অনেকেই পাশে দাঁড়িয়ে সহযোগিতা করছেন। তিনি বলেন, ‘‘বাড়িতে সময় পেলে রান্না করি, কিন্তু এখন রোজ দুর্গতদের জন্য রান্না করছি।’’

রান্না করা খাবার বেলা ১২টার মধ্যেই তাঁরা নিয়ে যাচ্ছেন বিভিন্ন ত্রাণ শিবিরে। তৃণমূল কর্মীদের সঙ্গে নিয়েই সেই খাবার বন্যা দুর্গতদের মধ্যে বিলি করছেন স্বামী-স্ত্রী। রঞ্জিতবাবু জানালেন, গত ২০ তারিখ থেকে তাঁরা রোজ রান্না করা খাবার দুর্গতদের বিলি করছেন। মেনু কোনও দিন ডিমের ঝোল-ভাত, কোনওদিন ডাল-ভাত-সবজি, আবার কোনওদিন খিচুড়ি। তৃপ্তি করে খাচ্ছে দুর্গতরা। তাঁদের স্বস্তি এটাই।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement