প্রয়াত: যোগেশচন্দ্র বর্মণ।
রবিবার বেলা এগারোটা নাগাদ বেঙ্গালুরুর একটি বেসরকারি হাসপাতালে মৃত্যু হল রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী যোগেশ বর্মণের। বয়স হয়েছিল ৬৯ বছর। ১৯৯৬ সাল থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত রাজ্যের বনমন্ত্রীর দায়িত্ব সামলেছেন যোগেশবাবু। পরবর্তী পাঁচ বছর তিনি অনগ্রসর শ্রেণিকল্যাণ দফতরের মন্ত্রীর দায়িত্ব সামলান। তাঁর মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে আলিপুরদুয়ার জেলার সব রাজনৈতিক দলেই।
১৯৪৯ সালের ৪ নভেম্বর ফালাকাটার বালাসুন্দর গ্রামে জন্ম যোগেশবাবুর। কলেজ জীবন শেষ করার পরে ফালাকাটার ভুতনিরঘাট হাইস্কুলে সহ শিক্ষকের পদে যোগ দেন। প্রধানশিক্ষকও হন তিনি। ১৯৮৮ সালে শিক্ষক আন্দোলনের মধ্য দিয়েই সিপিএমের সঙ্গে প্রত্যক্ষ যোগাযোগ। ১৯৯১ সালে প্রথম বার বিধানসভার সদস্য হন তিনি। ১৯৯৬ সালে বিধানসভা নির্বাচনে জয়ী হয়ে বনমন্ত্রীর দায়িত্ব পান তিনি। তখন থেকে টানা দশ বছর তিনি সেই পদেই ছিলেন। যোগেশবাবু বনমন্ত্রী থাকাকালীন রাজ্যে ইকো-ট্যুরিজমের ব্যাপক বিকাশ ঘটে। এ ছাড়াও সেই সময় বন দফতরের উল্লেখযোগ্য বেশ কিছু কাজে তাঁর ভূমিকা ছিল।
কিন্তু ২০০৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনের পর তাঁকে অনগ্রসর কল্যাণ দফতরের দায়িত্ব দেওয়া হয়। তখন ঘনিষ্ঠ মহলে খানিকটা হতাশাও প্রকাশ করেছিলেন তিনি। আলিপুরদুয়ার জেলার এক সিপিএম নেতার কথায়, “বনের নানা সমস্যা বোঝার মতো ক্ষমতা সেই সময় আর কারও মধ্যে ছিল না। তাই তাঁর আমলে বনভূমির সব থেকে বেশি উন্নতি হয়েছে। তবে অনগ্রসর কল্যাণ দফতরের মন্ত্রীর দায়িত্ব পেয়েও অনেক কাজ করে গিয়েছেন।”
তবে ২০১১ সালের নির্বাচনে টিকিট পাননি মৃত্যুর আগে পর্যন্ত সিপিএমের আলিপুরদুয়ার জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য হিসাবে দায়িত্বে থাকা যোগেশবাবু। তবে দলের শীর্ষ নেতাদের দাবি, যোগেশবাবু নিজেই সেই সময় নির্বাচনে দাঁড়াতে অনিচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন।
সূত্রের খবর, অনেক দিন থেকেই যোগেশবাবু লিভারের সমস্যায় ভুগছিলেন। মাস আড়াই আগে তা বড় আকার় নেয়। দলীয় সূত্রের খবর, চিকিৎসার জন্য হায়দ্রাবাদে যান তিনি। সেখানে চিকিৎসকরা লিভার প্রতিস্থাপনের পরামর্শ দেন। তারপর বেঙ্গালুরুতে গেলে চিকিৎসকরা তাকে একই পরামর্শ দেন। এই অবস্থায় কলকাতায় এসএসকেএম হাসপাতালে ভর্তি হন। কিছু দিন আগে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও তাঁর চিকিৎসার ব্যাপারে আশ্বাস দেন।
সিপিএম সূত্রের খবর, এরই মধ্যে লিভার প্রতিস্থাপনের সম্ভাবনা দেখা দিলে গত বৃহস্পতিবার তাকে বেঙ্গালুরুর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু তিনি পৌঁছনোর আগেই সেই লিভারটি অন্য রোগীর মধ্যে প্রতিস্থাপন করা হয়। যাতে তিনি খানিকটা হতাশ হয়ে পড়েন। শনিবার রাত থেকে আচমকাই তাঁর অবস্থার অবনতি হতে শুরু করে। রবিবার বেলা এগারোটা নাগাদ সেখানেই মৃত্যু হয়।
দলীয় সূত্রের খবর, সোমবার বিমানে করে বাগডোগরায় আনা হবে যোগেশবাবুর দেহ। তারপর জলপাইগুড়ি পার্টি অফিস, ফালাকাটার ভুতনিরঘাটে বাড়ি হয়ে আলিপুরদুয়ার পার্টি অফিসে তাঁর দেহ আসবে। সেখান থেকে তাঁর দেহ ফের ফালাকাটায় নিয়ে যাওয়া হবে। সেখানেই তাঁর শেষকৃত্য সম্পন্ন হবে।
বর্তমান বনমন্ত্রী বিনয়কৃষ্ণ বর্মণ বলেন, ভেবেছিলাম উনি সুস্থ হয়ে উঠবেন। সিপিএমের জেলা সম্পাদক মৃণালকান্তি রায় বলেন, ওনার মৃত্যুতে দলের যে ক্ষতি হল, তা পূরণে অনেক সময় লাগবে। যোগেশবাবুর স্ত্রী, এক পুত্র ও এক কন্যা বর্তমান।