তদন্ত: ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন হন ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞ। নিজস্ব চিত্র।
শনিবার দুপুর ১২টা। সুজাপুরে বিস্ফোরণে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হওয়া প্লাস্টিকের কারখানায় হাজির হলেন রাজ্যের ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞ দল। বিস্ফোরণে টুকরো টুকরো হয়ে যাওয়া কাটিং মেশিনের নমুনা সংগ্রহ করেন দুই সদস্যের সেই প্রতিনিধি দল। মিনিট পনেরো তদন্তের পর যান্ত্রিক ত্রুটির কারণেই বিস্ফোরণ বলে ইঙ্গিত দেন তাঁরা। ফরেন্সিক প্রতিনিধি দলের কর্তা চিত্রাক্ষ সরকার বলেন, “যান্ত্রিক ত্রুটি থেকেই বিস্ফোরণ বলে প্রাথমিক ভাবে মনে হচ্ছে।”
ফরেন্সিক দলটি শুক্রবারই মাঝরাতে মালদহে আসে। সুজাপুরের ঘটনাস্থলও ঘুরে আসেন তখন। তারপর ফের এ দিন দুপুরে সেখানে গিয়ে নমুনা সংগ্রহে ব্যস্ত হয়ে পড়েন দলের সদস্যরা। সংগ্রহ করেন কাটিং মেশিনের লোহার ব্লেডের সঙ্গে যুক্ত থাকা পাত। মাটি লেগে থাকায় পাত লোহার রডের টুকরো দিয়ে পরিষ্কার করতেই দেখা যায় আগুনের ফুলকি। সাদা ধোঁয়া দেখে হকচকিয়ে যান ফরেন্সিক দলের সদস্য এবং তদন্তকারী পুলিশ কর্তারা। বিস্ফোরণের ৪৮ ঘণ্টা পরেও কেন আগুনের ফুলকি, সে প্রশ্নও ওঠে পুলিশ মহলেই। চিত্রাক্ষ বলেন, “রাসায়নিক দিয়ে মাটি পরিষ্কার করতেই আগুনের ফুলকি দেখা গিয়েছে। যন্ত্রাংশের টুকরোটি সংগ্রহ করা হয়েছে।” তদন্তের পরেই বিস্ফোরণের কারণ স্পষ্ট হবে বলে জানান তিনি।
বৃহস্পতিবার সুজাপুরের ওই প্লাস্টিক কারখানায় বিস্ফোরণে ছ’জনের মৃত্যু এবং সাত জন জখম হয়েছেন। জখমদের মধ্যে মহিলা ও নাবালকও রয়েছে। বিস্ফোরণে কারখানা লন্ডভন্ড হয়ে যায়। ঘটনাকে কেন্দ্র করে শুরু হয় রাজনৈতিক চাপানউতোরও। বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ এ দিন দাবি করেন, ‘‘সত্যি কথা বলার সাহস নেই ফরেন্সিকের, ওখানে বিস্ফোরকই ছিল।’’ এ দিনও বিস্ফোরণ কাণ্ডে এনআইএ তদন্তের দাবিতে ইংরেজবাজার শহরে মিছিল করে বিজেপি। সেই মিছিলে নেতৃত্ব দেন বিজেপির কিসান মোর্চার রাজ্য সহ-সভাপতি শ্রীরূপা মিত্র চৌধুরী, জেলা সভাপতি গোবিন্দচন্দ্র মণ্ডল এবং বিধায়ক জোয়েল মুর্মু। গোবিন্দ বলেন, ‘‘পুলিশ ঘটনাটি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করছে। তাই এনআইএকে দিয়ে তদন্ত করাতে হবে।” এরই মধ্যে এ দিন সুজাপুরে মৃতদের পরিবারের সঙ্গে দেখা করে আর্থিক সাহায্য তুলে দেন বিধায়ক সাবিনা ইয়াসমিন, অম্লান ভাদুড়ির মতো তৃণমূল নেতারা। কংগ্রেস নেতা ইশা খান, মোস্তাক আলমদের সুরে সাবিনা বলেন, “কেন্দ্রে বিজেপি ক্ষমতায় রয়েছে। অথচ অসহায়দের পাশে না দাঁড়িয়ে সুজাপুরকে বদনাম করার জন্য বিজেপি বোমার তত্ত্ব সাজিয়ে রাজনীতি করছে।”
যান্ত্রিক ত্রুটি থেকেই বিস্ফোরণ বলে প্রাথমিক তদন্তেই জানিয়েছিল পুলিশ। এ দিন ফরেন্সিক দলও সেই ইঙ্গিতই দিয়েছে। ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞদের দাবি, কাটিং মেশিনের উপরে লোহার হুপার থাকে। হুপারের তলায় চারটি লোহার মোটা পাত থাকে। তার মধ্যে দুটি পাতে ব্লেড লাগানো থাকে। যাতে প্লাস্টিকের সামগ্রী টুকরো টুকরো হয়ে যায়। থ্রি-ফেজ একটি মোটরও থাকে। প্রচণ্ড গতিতে ব্লেডগুলি ঘোরে। সেই যন্ত্রটি পুরনো হয়ে গিয়েছিল। এ ছাড়া দীর্ঘক্ষণ একনাগাড়ে চলায় সেটি গরমও হয়ে গিয়েছিল। যন্ত্রের ত্রুটি থেকেই ঘটনাটি ঘটে থাকতে পারে বলে অনুমান ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞ দলের প্রতিনিধিদের।
এরই মধ্যে এ দিন পর্যন্ত ওই ঘটনায় মামলা রুজু করেনি পুলিশ। এর পাশাপাশি এখনও প্রকাশ্যে আসেননি কারখানার এক মালিক আমলু শেখ। এ দিন পুলিশের এক কর্তা বলেন, “আমলুর খোঁজ পুলিশও করছে।” মালদহের পুলিশ সুপার অলোক রাজোরিয়া বলেন, “ফরেন্সিক দলের তদন্ত রিপোর্ট সামনে আসার পরেই দুর্ঘটনার কারণ স্পষ্ট হবে।”