স্পারের ক্ষতি হলে বা তিস্তার জল বাড়লেই আধিকারিককে জানাবেন নজরদারির দায়িত্বে থাকা সেচকর্মী। ছবি: দীপঙ্কর ঘটক।
অসংরক্ষিত এলাকায় তিস্তার জল বিপদসীমার উপর দিয়ে বইতে থাকায় নদীর চরের বাসিন্দাদের সরাতে শুরু করেছে জলপাইগুড়ি জেলা প্রশাসন। শনিবার এবং রবিবার জলপাইগুড়ি শহর লাগোয়া মণ্ডলঘাটের চর থেকে সাড়ে চারশো বাসিন্দাকে সরিয়ে ফ্লাড সেন্টারে নিয়ে আসা হয়েছে। সেনা বাহিনীর সাহায্য নিয়ে পরিবারগুলিকে সরানো হয়। প্রশাসন সূত্রে জানানো হয়েছে, ভরা তিস্তায় ছোটো নৌকায় তুলে বাসিন্দাদের পারাপারের ঝুঁকি নেওয়া হয়নি, সে কারণেই সেনা বাহিনীর বড় নৌকার সাহায্য নেওয়া হয়েছে। শনিবার চর থেকে ৪০০ এবং রবিবার সকালে ৪০ জন বাসিন্দাকে সরিয়ে আনা হয়েছে বলে জানানো হয়েছে। তিস্তা নদীর অসংরক্ষিত এলাকায় লাল সর্তকতা জারি থাকায় বাসিন্দাদের চর থেকে সরানোর সিদ্ধান্ত নেয় প্রশাসন। এ ছাড়াও শনিবার সকালে প্রবল বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস থাকায় কোনও ঝুঁকি নিতে চায়নি প্রশাসন। বাসিন্দাদের একাংশের আপত্তি অগ্রাহ্য করেই সকলকে চর থেকে ফ্লাড সেন্টারকে নিয়ে আসা হয়েছে। তবে, দুপুরের পরে জল কিছিুটা নামতে শুরু করতেই, বাসিন্দারা ফিরে যেতে শুরু করেছেন।
জলপাইগুড়ির জেলাশাসক পৃথা সরকার বলেন, ‘‘তিস্তায় বেশ কিছুদিন ধরেই লাল সর্তকতা জারি রয়েছে। আবহাওয়া দফতর থেকে বৃষ্টির পূর্বাভাসও জানানো হয়েছে। সে কারণেই বিভিন্ন নদীর চর থেকে বাসিন্দাদের সরানোর কাজ শুরু হয়েছে। সেনা বাহিনীর সাহায্য নেওয়া হয়েছে।’’
ফি বছরই বর্ষার শুরুর দিন থেকে সেনা বাহিনীর অফিসাররা জলপাইগুড়ি জেলা সদরে চলে আসেন। বন্যা পরিস্থিতি সহ দৈনন্দিন বৃষ্টির পরিমাণ তাঁরা পর্যবেক্ষণ করে রিপোর্ট পাঠান। সেনা জওয়নাদের একটি দল জেলা সদরে ছাউনি করে থাকতেও শুরু করে। সে কারণে শনিবার সকালে তিস্তার জল বাড়তে থাকার খবর পেয়ে মণ্ডলঘাটের বাসিন্দাদের সরানোর কাজে সাহায্য চাইলে, দ্রুত সেনার তরফে পদক্ষেপ করা হয়। প্রশাসন সূত্রে জানানো হয়েছে, রবিবার সকালের পরেই উদ্ধার কাজ শেষ হয়ে যায়। পরবর্তীতে জল বাড়লে কাদোবাড়ি, মেখলিগঞ্জ, রংধামালি, মিলনপল্লির চর থেকেও বাসিন্দাদের সরানো হতে পারে।
গত বৃহস্পতিবার থেকেই জলপাইগুড়ি শহর লাগোয়া দোমহনী থেকে বাংলাদেশ পর্যন্ত তিস্তা নদীর অসংরক্ষিত এলাকায় লাল সর্তকতা জারি রয়েছে। সংরক্ষিত এলাকাতেও হলুদ সর্তকতা রয়েছে। পাহাড় এবং সমতলে প্রবল বৃষ্টির কারণে গত সপ্তাহের গোড়া থেকেই তিস্তা নদীতে জল বাড়তে শুরু করেছিল। অসংরক্ষিত এলাকার বিপদসীমার প্রায় তিন সেন্টিমিটার উপর দিয়ে গত শুক্রবার জল বইতে শুরু করে। এরপরেই জলপাইগুড়ি শহর সহ, মণ্ডলঘাট, কাদোবাড়ি, হলদিবাড়ি মেখলিগঞ্জের মতো তিস্তার নদীর পাড়ে থাকা এলাকাগুলিতেও সর্তকতা জারি করা হয়। তিস্তা নদীর চড়েই বিভিন্ন এলাকায় বসতি রয়েছে। জল বাড়তে থাকায় অধিকাংশ চরগুলি ডুবে যেতে শুরু করেছে। জলমগ্ন হয়ে পড়েছে নদীর পাড়ে থাকা কলোনিগুলিও। হঠাৎ করে নদীর জল অনেকটাই বেড়ে গেলে চরের বাসিন্দাদের উদ্ধার করা সম্ভব হবে না। সে কারণেই প্রশাসনের তরফে আগেভাগেই বাসিন্দাদের সরানোর কাজ শুরু হয়েছে।
রবিবার বিকেলের পর থেকে অবশ্য নদীতে জল কমতে শুরু করেছে। নতুন করে পাহাড়, সমতলে বৃষ্টি না হলে আজ সোমবারের মধ্যে তিস্তার জল অসংরক্ষিত এলাকাতেও বিপদসীমার নীচে নেমে যেতে পারে বলে সেচ দফতরের আধিকারিকদের আশা।