লেলিহান: বৃহস্পতিবার দুপুরে রায়গঞ্জের মিলনপাড়ায় সিলিন্ডার ফেটে আগুন ছড়াল। নিজস্ব চিত্র
রান্নার গ্যাস সিলিন্ডার ফেটে আগুন ছড়িয়ে পুড়ে ছাই হল বাড়ি। বৃহস্পতিবার দুপুরে ওই ঘটনাকে কেন্দ্র করে আতঙ্ক ছড়ায় রায়গঞ্জ শহরের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের মিলনপাড়া এলাকায়।
পুলিশ জানিয়েছে, এ দিন প্রথমে আনাজ ব্যবসায়ী ভবেশ দাসের বাড়িতে আগুন লাগে। ভবেশ, তাঁর স্ত্রী আরতি ও ছেলে পিন্টু বাড়িতে ছিলেন না। ভবেশের নাতনি চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রী দীপিকা ঘরে শুয়েছিল। ঘরের কোণে পুজোআচ্চার জায়গায় জ্বলন্ত প্রদীপ থেকে একটি শাড়ি আগুন ধরে গিয়েছে। ভয় পেয়ে দীপিকা প্রতিবেশী নীলিমাকে খবর দিতে যায়। নীলিমা এসে দেখেন, একটি গ্যাস সিলিন্ডারের পাইপ জ্বলছে। তিনি দ্রুত দীপিকাকে নিয়ে বাইরে এসে চিৎকার করতে থাকেন। এক প্রতিবেশী ছুটে আসেন। তখনই প্রচণ্ড শব্দে একটি গ্যাস সিলিন্ডার ফেটে যায়। বিস্ফোরণের তীব্রতায় ঘরের টিনের চালের একাংশ উড়ে যায়। আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে এলাকায়। কিছুক্ষণের মধ্যে আর একটি সিলিন্ডার ফাটে। ভবেশের ঘরেই রান্নার জন্য গ্যাসের সিলিন্ডার দু’টি ছিল। পাশের ঘরে ছিল আরেকটি সিলিন্ডার। নিমেষেই জ্বলতে থাকে গোটা বাড়ি।
একই বাড়িতে পরপর ঘরে ভবেশ এবং তাঁর দুই ভাই দীনেশ এবং সুরেশের পরিবার থাকে। দীনেশ এবং সুরেশ প্রয়াত। বিস্ফোরণের পরেই ভবেশের ঘরের পাশে তাঁর দুই বৌদি দীনেশের স্ত্রী বিমলা ও সুরেশের স্ত্রী পূর্ণিমার টিনের ঘরে আগুন লেগে যায়। ভবেশ রায়গঞ্জের মোহনবাটী বাজারে আনাজের ব্যবসা করেন। তাঁর স্ত্রী আরতি পরিচারিকার কাজ করেন। তাঁদের একমাত্র ছেলে পিন্টু রংমিস্ত্রির কাজ করেন। তাঁরা কেউই ছিলেন না। অগ্নিকাণ্ডের সময় বিমলা ও পূর্ণিমা বাড়িতে ছিলেন না। আরতিও কাজে গিয়েছিলেন। বাড়িতে ছিল ভবেশের নাতনি দীপিকা। বাইরে খেলছিল নাতি জিৎ। সিলিন্ডার ফাটার সময় জ্বলন্ত টুকরো এসে পায়ে লেগে প্রতিবেশী আশা ঘোষের ডান পায়ের আঙুলগুলো জখম হয়েছে। আগুন নেভানোর সময় গরম টিনে হাতে ফোস্কা লেগেছে আরতির।
এ দিন ঘটনাস্থলে যান রায়গঞ্জ পুরসভার তৃণমূলের পুরপ্রধান সন্দীপ বিশ্বাস, স্থানীয় তৃণমূল কাউন্সিলর পুষ্পা মজুমদার এবং পুরসভার বিভিন্ন ওয়ার্ডের কাউন্সিলররা। সন্দীপ বলেন, ‘‘তিনটি পরিবারই দুঃস্থ। পুরসভার তরফে তাঁদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার চেষ্টা চলছে।’’ পুলিশ ও দমকল সূত্রের খবর, ভবেশের একটি বড় টিনের ঘর ছিল। সেই ঘরের এক কোণে গ্যাস ওভেন জ্বালিয়ে রান্না করতেন আরতি। রান্নার জায়গার কিছুটা দূরে বিভিন্ন দেবদেবীর ছবি রেখে পুজো করতেন তিনি। সেখানেই এদিন পুজো করে প্রদীপ জ্বালিয়ে গিয়েছিলেন। ঘটনার সময় আতঙ্ক ছড়ায়। তাঁরা অনেকেই তড়িঘড়ি নিজেদের বাড়ি থেকে গ্যাস সিলিন্ডার সরিয়ে কেউ মাঠে আবার কেউ রাস্তার ধারে রেখে আসেন।
ভবেশ, বিমলা ও পূর্ণিমাদেবীরা বলেন, ‘‘আগুনে সবকিছু পুড়ে ছাই হয়ে যাওয়ায় আমরা নিঃস্ব হয়ে পড়েছি। সরকারি ক্ষতিপূরণ না পেলে পরিবারের লোকেদের নিয়ে পথে বসতে হবে।’’