বেঙ্গল সাফারি পার্ক।
লোহার বেড়া টপকে বাইরে পালিয়েছিল রয়াল বেঙ্গল টাইগার সচিন। টানা ১০৮ ঘন্টা বন দফতরের আধিকারিকদের ঘুম উড়িয়ে পরে খাবারের লোভে নিজেই ফেরে কাঁটাতারের ঘেরাটোপে। এর পরেও একাধিক বার বেড়া টপকে পালানোর চেষ্টা করেছে কয়েকটি চিতাবাঘ ও ভালুক।
প্রশাসনিক সূত্রে খবর, সে সব রুখতে এ বার শিলিগুড়ি শহর লাগোয়া বেঙ্গল সাফারি পার্কের চার দিকের উচ্চতা বাড়ানোর কাজ শুরু করা হল। তা ছাড়াও বিশেষ ধরণের গোল কাঁটাতারের বেড়া লাগানোর প্রক্রিয়াও চলছে। পার্কের চারপাশে অনেকটা ‘সেনা ছাউনির’ আদলে নকশা বদল করে বাড়ানো হচ্ছে নিরাপত্তা।
বন দফতর সূত্রে খবর, অক্টোবর মাসে ওই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। নভেম্বর মাসে ই-টেন্ডার পর্ব শেষ হয়েছে। বর্তমানে সমস্ত নথিপত্র অনুমোদনের জন্য কলকাতায় রয়েছে। সেখান থেকে সবুজ সঙ্কেত মিললেই কাজ শুরু হয়ে যাবে। ৭৮ লক্ষ টাকার এই প্রকল্পের কাজ ৪৫ দিনের মধ্যে শেষ করা হবে বলে ঠিক হয়েছে। পাশাপাশি সাফারি পার্ক এলাকার ভিতরের ৮ কিলোমিটার দীর্ঘ রাস্তা ফের সংস্কারের জন্য ১৮ লক্ষ টাকার প্রকল্পও আলাদা করে তৈরি হয়েছে।
বেঙ্গল সাফারি পার্কের অধিকর্তা ধর্মেন্দ্র রাই বলেন, ‘‘পার্কের নিরাপত্তার কথা মাথা রেখেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ভিতরের প্রাণীরা তো বটেই, বাইরের লোকজন, লাগোয়া মহানন্দা অভয়ারণ্যের কোনও বন্যজন্তু যাতে কোনও ভাবেই বেড়া টপকাতে না পারে, তার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। দ্রুত কাজ শুরুর চেষ্টা চলছে।’’
বন দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, শিলিগুড়ি শহর থেকে কিলোমিটার দশেক দূরত্বে বেঙ্গল সাফারি পার্ক। প্রায় ২৯৭ হেক্টর এলাকা জুড়ে স্বাভাবিক জঙ্গলকে ঘিরে গড়ে উঠেছে ওই পার্ক। ২০১৬ সালের জানুয়ারি মাসে দু’বছর কাজ চলার পরে পার্কের উদ্বোধন করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তার মধ্যে রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার, চিতাবাঘ, হিমালয়ান ব্ল্যাক বিয়ারের জন্য ২০ হেক্টর করে ঘেরাটোপ রয়েছে। তার বাইরে ৯১ হেক্টরে তৃণভোজীদের ঘেরাটোপ ছাড়াও গন্ডার, বিভিন্ন প্রজাতির বিড়াল, পাখি, কুমির-ঘড়িয়াল, হাতি সাফারির জন্য আলাদা আলাদা এলাকা রয়েছে। ২০ হেক্টর মাপের এলাকাগুলিতে ১৮ ফুট উঁচু লোহার বেড়া ছাড়াও উপরে অ্যালমনিয়ামের তৈরি বিশেষ ব্যবস্থা রয়েছে। বাকি এলাকাগুলি বেশিরভাগ ১৪-১৫ ফুটের লোহার বেড়ায় ঘেরা। তেমনই গোটা সাফারি পার্ক এলাকার চারপাশেও (প্রায় ৯ কিলোমিটার) ঘেরাটোপ রয়েছে। তার নিচের অংশ কংক্রিটের। ১৪ ফুটের উপরে বাইরের দিকে ‘ইলেকট্রিক ফেন্সিং’ দেওয়া রয়েছে।
বন দফতরের আধিকারিকেরা জানিয়েছেন, নতুন পরিকল্পনায় ঠিক হয়েছে ওই লোহার বেড়ার ভিতরের দিকে আরেকটি উঁচু লোহার অংশ বসানো হবে। তাতে বেড়ার মাথাটি ‘ওয়াই’ আকৃতির তৈরি হয়ে যাবে। তার মধ্যেই গোলাকার কাঁটাতার বিছিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এতে বেড়ার উচ্চতা ১-২ ফুট করে বেড়ে যাওয়া ছাড়াও নিরাপত্তাও আঁটসাট হবে।