ধর্না: শীতের মধ্যেও দাড়িভিট স্কুলের মাঠে নিহতদের পরিবারের ধর্না চলছে। নিজস্ব চিত্র
সামনের ৬ জানুয়ারি দাড়িভিট স্কুলের মাঠেই তৃণমূলের উত্তর দিনাজপুর জেলা পর্যবেক্ষক শুভেন্দু অধিকারীর সভা। বুধবার দাড়িভিট কাণ্ডে নিহত নিহত রাজেশ সরকার ও তাপস বর্মণের পরিবারের লোকেরা জানিয়ে দিলেন, ওই সভা তাঁরা করতে দেবেন না। রাজেশের মা ঝর্নাদেবী বলেন, ‘‘স্কুল মাঠে শুভেন্দুবাবুকে ঢুকতেই দেব না।’’ তাপসের মা মঞ্জুদেবী বলেন, ‘‘সভা করতে হলে আমাদের লাশের উপর দিয়েই যেতে হবে।’’ বিজেপির প্রভাবেই রাজেশ ও তাপসের পরিবার এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে অনেকে মনে করছেন। তবে ঝর্না ও মঞ্জুদেবীর বক্তব্য, কোনও রাজনৈতিক দলকেই স্কুল মাঠে তাঁরা সভা করতে দেবেন না। ঝর্নাদেবী বলেন, ‘‘যত দিন না সিবিআই তদন্ত হচ্ছে, কাউকে সভা করতে দেব না।’’
মঙ্গলবার সকালে রাজেশ ও তাপসের পোস্টার ছিড়ে দেওয়া হয়েছে দেখেই নতুন করে উত্তেজনা ছড়ায়। তারপরে এ দিন শুভেন্দুবাবুকে সভা করতে না দেওয়ার হুঁশিয়ারি দেওয়ায় শুরু হয় চাপানউতোর।
যদিও প্রশাসনের অনুমতি নিয়েই স্কুল মাঠে সভা হবে বলে জানিয়েছেন তৃণমূল নেতৃত্ব। কাজেই পরিবহণমন্ত্রীর সভাকে ঘিরে রীতিমতো চাপানউতর শুরু হয়েছে। মঞ্জুদেবী বলেন, ‘‘শুভেন্দুবাবুকে মাঠে ঢুকতে দেব না। তাঁরা এর আগে দু’টি ছেলেকে গুলি করে মেরেছেন।। আবার কি গুলি করে মারতে চান?’’
এর পরেই ইসলামপুরের বিধায়ক কানাইয়ালাল অাগরওয়াল-সহ স্থানীয় তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের এ দিন দেখা গিয়েছে ইসলামপুর থানাতে। দাড়িভিট স্কুল মাঠে জেলা পর্যবেক্ষকের সভার অনুমতির জন্যই তাঁরা গিয়েছিলেন বলে তৃণমূলের একটি সূত্রে জানা গিয়েছে। বিধায়ক কানাইয়ালাল বলেন, ‘‘কেউ তো আর মুখের কথায় সভা আটকে দিতে পারেন না। প্রশাসনের অনুমতি নিয়েই এলাকাতে সভা হবে।’’
তৃণমূল সূত্রে দাবি, বিজেপির প্রভাবেই শুভেন্দুর সভায় বাধা তৈরি করতে চাইছেন নিহতদের পরিবারের লোকেরা। তৃণমূলের নেতারা বলছেন, এখন রাজেশ ও তাপসের পরিবার ওই মাঠে কোনও রাজনৈতিক দলকেই সভা করতে দেবেন না বলে দাবি করছেন। কিন্তু মাত্র ক’দিন আগে বিজেপির প্রস্তাবিত রথযাত্রার সময় দাড়িভিটে সভার আয়োজনে সম্মতি ছিল নিহতদের পরিবারের লোকজনদের। সভায় বিজেপির শীর্ষ নেতাদেরও আসার কথা ছিল। প্রশাসনের কাছে সেই সভার অনুমতি চাইতে গিয়েছিলেন রাজেশ ও তাপসের পরিবারই। রথযাত্রা স্থগিত হয়ে যাওয়ায় সেই সভা আর হয়নি, সেটা আলাদা কথা।
মঞ্জুদেবীর বক্তব্য, ‘‘রথযাত্রার সময় আমরা যে অনুমতি চেয়েছিলাম, তা প্রশাসন দেয়নি। তাই আর কাউকেই সভা করতে দেব না।’’ বিজেপির জেলা সভাপতি শঙ্কর চক্রবর্তীর বক্তব্য, ‘‘তৃণমূল সভায় আমাদের আপত্তি নেই। কিন্তু গ্রামবাসীরা যদি আপত্তি করেন, তা হলে আমরা তাঁদের সঙ্গে রয়েছি।’’ তাঁর কথায়, শুভেন্দুবাবু পরিস্থিতি উত্তপ্ত করছেন, তবু তাঁকে সভা করতে দেওয়া হচ্ছে, অথচ বিজেপিকে অনুমতি দেওয়া হয়নি। তবে পুলিশ সুপার সুমিত কুমার জানিয়েছেন, শুভেন্দুবাবুর সভা নিয়ে এখনও তাঁরা কিছু জানেন না। অনুমতি চাওয়া হলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। দাড়িভিটে তাই ভরা শীতেও পরিস্থিতি ক্রমশ উত্তপ্ত হয়ে উঠছে। তবে এর মধ্যেই এ দিনও স্কুলে ক্লাস হয়েছে।