স্বজনহারা পরিবার। নিজস্ব চিত্র
বোর্ড দখলকে কেন্দ্র করে দাসপাড়ায় সংঘর্ষের ২৪ ঘণ্টা পরেও থমথমে পরিস্থিতি উত্তর দিনাজপুরের চোপড়া এলাকায়। বুধবার দাসপাড়া বাজারে প্রায় জনশূন্য ছিল। এলাকা জুড়ে বিভিন্ন জায়গায় পুলিশ পিকেট বসেছে। বিভিন্ন থানার ওসি এবং আইসিদেরও আনা হয়েছে সেখানে। তবু আতঙ্ক কাটেনি।
মঙ্গলবার খাটাখোয়া এলাকায় গুলি ও ধারাল অস্ত্রের আঘাতে মহম্মদ খইরুল মারা যান। পুলিশ ওই ঘটনায় ধরপাকড় শুরু করেছে। পুলিশের ভয়ে এলাকাছাড়া অনেকেই। এদিকে, খইরুল তাদের সমর্থক দাবি করে এলাকায় বন্ধ পালনের ডাক দিয়েছিল তৃণমূল। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে বন্ধ প্রত্যাহৃত হলেও বাড়ির বাইরে বেরোতে ভরসা পাচ্ছেন না এলাকার বাসিন্দারা। ফলে স্বাভাবিক জীবন বিপর্যস্ত। দুপুরে চোপড়া-সহ কয়েকটি এলাকা ঘুরে দেখেন পুলিশ সুপার অনুপ জায়সবাল এবং পুলিশের উত্তরবঙ্গের আইজি আনন্দ কুমার। তাঁরা আশ্বাস দেন, এলাকায় শান্তি ফেরাতে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। পুলিশ সুপার বলেন, ‘‘ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে পুলিশ গ্রেফতার করছে।’’ অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার করা হচ্ছে না কেন? এই প্রশ্নের উত্তরে পুলিশ সুপার বলেন, ‘‘সব কিছুই দেখা হচ্ছে। অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারের চেষ্টা চলছে।’’ জেলা পুলিশের আধিকারিকদের একাংশ বলেন, থানাগুলোর একাংশ থেকে অনেক ক্ষেত্রেই সঠিক তথ্য দেওয়া হচ্ছে না বলে অবস্থা জটিল হচ্ছে।
এ দিন সন্ধেয় খইরুলের দেহ বাড়িতে পৌঁছলে শোকে ভেঙে পড়েন পরিবারের লোকজন। সকাল থেকেই বাড়িতে এসেছেন পরিচিত লোকেরা। রাজমিস্ত্রি খইরুলের আয়ই পরিবারের একমাত্র ভরসা ছিল। খইরুলের স্ত্রী জানান, ছোটমেয়ে অসুস্থ। তাকে চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যাওয়ার জন্য টাকা আনতে গিয়েছিলেন স্বামী। কিন্তু বেরিয়েই ওই ঘটনা। দোষীদের গ্রেফতার এববং শাস্তির দাবি জানিয়েছেন পরিবারের লোকেরা।
খইরুল খুনের ঘটনায় তাঁর স্ত্রী থানায় ২৮ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেছেন। এখনও পর্যন্ত আটজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। ইসলামপুর অতিরিক্ত মু্খ্য ও দায়রা আদালতের বিচারক তাদের চারজনকে চারদিনের পুলিশ হেফাজত ও বাকিদের ১৪ দিনের জেল হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছেন বলে জানান সরকারি আইনজীবী সঞ্জয় ভাওয়াল।
মঙ্গলবার দাসপাড়ার বোর্ড গঠনকে কেন্দ্র করে এলাকা থেকে প্রায় দুই কিলোমিটার দূরের খাটাখোয়াগছে তৃণমূলের সঙ্গে গন্ডগোল বাধে কংগ্রেস ও তৃণমূলের বিরোধী জোটের সদস্যদের।
নির্বাচনের পর বোর্ড গঠনকে কেন্দ্র করে উত্তপ্ত হয় উত্তর দিনাজপুরের ইসলামপুর ও চোপড়ার বেশ কিছু এলাকা। গত শনিবার ইসলামপুরের পণ্ডিতপোতা-১ এলাকায় বোর্ড গঠনকে কেন্দ্র করে তৃণমূলের গোষ্ঠী কোন্দলে মৃত্যু হয়েছে লাল মহম্মদের। রবিবার পণ্ডিতপোতা-২ এলাকা উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। সেখানেও গুলি ও বোমাবাজির অভিযোগ ওঠে।