শিলিগুড়ির লেকটাউনে রাস্তা আটকে তোলা হচ্ছে চাঁদা। — নিজস্ব চিত্র
শিলিগুড়ি শহরকে মাটিগাড়ার সঙ্গে আরেক দিক জুড়ে দেওয়ার নতুন সেতু চতুর্থ মহানন্দা সেতু। সেতু ছাড়িয়ে মাটিগাড়ার দিকে কিলোমিটার খানেক এগোলেই রাস্তার মোড়। সেখানে সকাল থেকে রাস্তায় ছাতা মাথায় দিয়ে দাঁড়িয়ে জনা পাঁচেক যুবক। হাতে হলুদ রঙের রসিদ বই। রাস্তার পাশে একটু ছায়াতে টুল পেতে বসে আছেন, তিন মহিলাও। তাঁদের হাতেও রসিদ বইয়ের ছেঁড়া পাতা। ট্রাক থেকে পিকঅ্যাপ ভ্যান, কোনও কোনও সময় গাড়ি দেখেই হাত দেখিয়ে দাঁড় করানো হচ্ছে। ৫০-৭৫ টাকা চাঁদা দাবি করা হচ্ছে, ‘রফা’তে কাছে পিঠে টাকা পেলে ছাড় নইলে চালককে গাড়ি নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে হচ্ছে। কারণ, গাড়ির সামনে হেলান দিয়ে ঠায় দাঁড়িয়ে থাকছেন ওই মহিলা ও যুবকেরা। তবে অভিযোগ নেই বলে পুলিশ নিজে থেকে উদ্যোগী হচ্ছে না কেন তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
মহালয়ার পর রবিবার সকাল। কড়া রোদে ভিড়ে ঠাসা বাজারঘাট। বাবুপাড়া, দেশবন্ধুপাড়া হয়ে এনজেপি যাওয়ার রাস্তা। একটি বাঁকের মুখে অটো, গাড়ি থেকে প্রাইভেট কার, কিছুই বাদ যাচ্ছে না। একদল যুবক রাস্তার ধারে বাইক দাঁড় করিয়ে দেদার চাঁদা তুলছেন। কয়েকজন আপত্তি করলে জবাব মিলছে, ‘‘পাশেই ওই তো পুজোর মণ্ডপ দেখছেন দাদা। কিছু চাঁদা না দিয়ে এ রাস্তা দিয়ে যাতায়াত করলে হয়!’’
এ দিনই কয়েক জায়গায় খবর পেয়ে পুলিশ অবশ্য গিয়েছে, কিন্তু তার আগে রাস্তা ফাঁকা। টিকির দেখা নেই ওই আদায়কারীদের। অভিযোগ নেই, তাই ঘুরে ফিরে পুলিশ ভ্যান ফিরে এসেছে থানাগুলিতে। এ সপ্তাহেই পুজোর শুরু, আগামী কয়েকদিন পুলিশের নজরদারি আরও বাড়ানোর দাবি তুলেছেন শহরের বিভিন্ন পাড়ার বাসিন্দারা। শহরের পুলিশ কমিশনার চেলিং সিমিক লেপচা জানাচ্ছেন, ‘‘সতর্ক আছি।’’
শুধু কী শিলিগুড়ি, উত্তর দিনাজপুরের করণদিঘি থানার রসাখোয়া, বোতলবাড়ি, গোয়ালপোখর থানার গোয়াগাঁও, চাকুলিয়া থানার জনতাহাট ও শকুন্তলা এলাকার রাজ্য সড়কে বিভিন্ন পুজো কমিটি গাড়ি থামিয়ে চালকদের কাছ থেকে ১০-৩০ টাকা করে চাঁদা আদায় করছে বলে অভিযোগ। রায়গঞ্জের অশোকপল্লি এলাকার ৩৪ ও ইসলামপুরের গাইসাল এলাকার ৩১ নম্বর জাতীয় সড়কে ট্রাক থামিয়ে চাঁদা আদায় চলছে। জেলা বাস ও মিনিবাস ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের যুগ্ম সম্পাদক প্লাবন প্রামাণিক বলেন, সারা বছর রাস্তায় গাড়ি চলাচল করে বলেই চালক বা পরিবহণ মালিকেরা পুলিশে অভিযোগ জানান না। পুলিশেরই বিষয়টি দেখা উচিত। জেলা পুলিশ সুপার অমিতকুমার ভরত রাঠৌরের দাবি, জোর করে চাঁদা আদায়ের কোনও খবর নেই। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
চাঁদার জুলুমের অভিযোগ রয়েছে কোচবিহারেও। দিন কয়েক আগে দিনহাটার বোর্ডিং পাড়ার একটি পুজো কমিটির বিরুদ্ধে চাঁদার জুলুমের অভিযোগ ওঠে। চাহিদা মতো চাঁদা দিতে রাজি না হওয়ায়, কয়েকজন বাসিন্দার বাড়িতে হামলা হয়। ওই ঘটনায় পুলিশ ছয় জনকে গ্রেফতার করে। কোচবিহার-বক্সিরহাট জাতীয় সড়কেও বিক্ষিপ্ত ভাবে যানবাহন দাঁড় করিয়ে চাঁদার জুলুমের অভিযোগ রয়েছে। পুলিশ অবশ্য জানিয়েছে, সর্বত্র নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।
দক্ষিণ দিনাজপুরের পুলিশ সুপার প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন,‘‘এ ধরনের কোনও খবর নেই।’’ মালদহের পুলিশ সুপার অর্ণব ঘোষও বলেন, নজরদারি চলছে।
জলপাইগুড়িতে রবিবার দিনবাজারের একাধিক পুজো কমিটি চাঁদা আদায় করছে। ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক দেবু চৌধুরী বলেন, “চাঁদার উপদ্রব শুরু হয়েছে। পুলিশ প্রশাসন কারও তখন দেখা পাওয়া যায় না।” চাঁদা আদায় হচ্ছে টোটো চালকদের কাছ থেকেও।