দু’দফায় ইস্তাহার, ক্ষোভ তৃণমূলেই

পুরভোটের বাকি আর মাত্র পনেরো দিন। বেশ কয়েক দিন হল বামফ্রন্ট তাদের ইস্তাহার প্রকাশ করে ফেলেছে। কিন্তু তৃণমূল কেন এতদিন তা করতে পারেনি, সেই নিয়ে ক্ষোভ ছিল দলেই। শুক্রবার সেই ক্ষোভ সামাল দিতেই শিলিগুড়ি পুরভোটে তৃণমূলের ইস্তেহার প্রকাশিত হল। কিন্তু সেই সঙ্গেই জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, কিছু দিনের মধ্যে আর এক দফায় ইস্তেহারের আর একটি অংশ প্রকাশ করা হবে। তাতে দলে ফের ক্ষোভ বেড়েছে। বিরোধীরাও কটাক্ষ করতে ছাড়েনি শিলিগুড়ি পুরভোটে তৃণমূলের সেনাপতি উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেবকে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ১১ এপ্রিল ২০১৫ ০৩:১৭
Share:

পুরভোটের বাকি আর মাত্র পনেরো দিন। বেশ কয়েক দিন হল বামফ্রন্ট তাদের ইস্তাহার প্রকাশ করে ফেলেছে। কিন্তু তৃণমূল কেন এতদিন তা করতে পারেনি, সেই নিয়ে ক্ষোভ ছিল দলেই। শুক্রবার সেই ক্ষোভ সামাল দিতেই শিলিগুড়ি পুরভোটে তৃণমূলের ইস্তেহার প্রকাশিত হল। কিন্তু সেই সঙ্গেই জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, কিছু দিনের মধ্যে আর এক দফায় ইস্তেহারের আর একটি অংশ প্রকাশ করা হবে। তাতে দলে ফের ক্ষোভ বেড়েছে। বিরোধীরাও কটাক্ষ করতে ছাড়েনি শিলিগুড়ি পুরভোটে তৃণমূলের সেনাপতি উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেবকে।

Advertisement

স্থানীয় তৃণমূল নেতাদের বক্তব্য, ইস্তেহার নিয়ে জটিলতা ভোটারদের মনে বিরূপ প্রভাব ফেলবে। তা ছাড়া, দ্বিতীয় দফায় আবার ইস্তেহার প্রকাশ করার পরে তা ৪৭ ওয়ার্ডের পুরসভার বিভিন্ন এলাকার ভোটারদের হাতে যথা সময়ে পৌঁছে দেওয়াও শক্ত বলে তাঁরা মনে করেন। তাই একবারেই কেন পুরোটা প্রকাশ করা হল না, সে প্রশ্ন তুলেছেন স্থানীয় তৃণমূল নেতাকর্মীরা। তাঁদের বক্তব্য, তাতে না হয় ইস্তেহারটি মোটা হত, কিন্তু বারবার তা নিয়ে ভোটারদের কাছে ছুটতে হত না।

তৃণমূল সূত্রে খবর, গৌতমবাবু পুরসভা ভোটে মেয়র পদপ্রার্থী হয়ে দাঁড়াবেন ভেবে নিয়েই বর্তমান ইস্তেহারটি তৈরি করা হয়েছিল। এই ইস্তেহারে রাজ্য স্তরের কিছু প্রকল্পের পাশাপাশি প্রধানত গৌতমবাবুর খাসতালুক উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দফতর ও এসজেডিএ-র নানা প্রকল্পের সাফল্যের খতিয়ান তুলে ধরা হয়েছে। কিন্তু তারপরে দলের নির্দেশে গৌতমবাবু ভোটে দাঁড়াননি। এরপরে সম্প্রতি প্রচারে শিলিগুড়িতে এসে দলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় ইস্তেহারে তৃণমূলের রাজ্যব্যাপী নানা কর্মকাণ্ড তুলে ধরার পরামর্শ দেন। সেই সব প্রকল্পের ছবি দিয়ে তা সাজিয়ে প্রকাশ করতে গেলে ইস্তেহার প্রকাশ করতে দেরি হয়ে যেত। তাই তড়িঘড়ি কিছু রাজ্য স্তরের প্রকল্পের কথা তুলে ধরে এই ইস্তেহারটি প্রকাশ করে দিয়ে আবার দ্বিতীয় দফায় তা প্রকাশের সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে দলের একাংশের দাবি।

Advertisement

গৌতমবাবুর অবশ্য বক্তব্য, ‘‘আমরা ইস্তেহার একটিই বার করেছি। এরপর যেটি প্রকাশ করা হবে, সেটি এক ধরনের প্রচারপত্র। তাতে কিছু প্রকল্পের ছবি ও কিছু অঙ্গীকার থাকবে।’’ কিন্তু এক সঙ্গেই কেন তা করা হল না? গৌতমবাবুর জবাব, ‘‘প্রথমটি বেশি বড় হয়ে যাচ্ছিল দেখে দ্বিতীয়টি একটু অন্য রকম ভাবে তৈরি করছি।’’

এই জবাবে অখুশি তৃণমূলকর্মীদের একাংশই। তাঁদের দাবি, ২৩ এপ্রিল শেষ প্রচার। তার ১৩ দিন আগে একটি ইস্তাহার প্রকাশ হল। আবার আরেকটি হবে বলা হচ্ছে। এই ভাবে দফায় দফায় ইস্তাহার নিয়ে ওয়ার্ডের সব বাসিন্দাদের কাছে পৌঁছানো যাবে কি না, তা নিয়েই সংশয় থেকেই যাচ্ছে।

বিরোধীরাও এই নিয়ে কটাক্ষ করতে ছাড়েননি। বামফ্রন্টের মেয়র পদপ্রার্থী তথা সিপিএম নেতা অশোক ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘তৃণমূলের ইস্তাহারের প্রথম পত্র বার হয়েছে বলে শুনেছি। আবার না কী দ্বিতীয় পত্র বার হবে। এতো মনে হচ্ছে স্কুল পরীক্ষার প্রশ্নপত্র।’’ তাঁর কথায়, আসলে তড়িঘড়ি করে যা বার করা হয়েছে, তাতে কেন্দ্রীয় প্রকল্প ভরে রয়েছে, সমস্ত ক্ষেত্রে শহরের সার্বিক উন্নয়ন কী হবে তাও ঠিকঠাক নেই।

এদিন প্রথম দফার ইস্তেহারে বামেদের পথে হেঁটেই বস্তিবাসী এবং পিছিয়ে পড়া বাসিন্দাদের বিনা পয়সা জল সরবরাহ এবং কর ছাড়ের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে। তবে রাষ্ট্রীয় স্বাস্থ্য বিমা যোজনা, এশিয়ান হাইওয়ে, মহানন্দা অ্যাকশন প্ল্যান, জাতীয় সড়কের চারলেন, রেলের সঙ্গে একাধিক আন্ডারপাস তৈরির মতো প্রকল্পের কথাও বলা হয়েছে, যেগুলিতে কেন্দ্রের সাহায্য লাগে। তা ছাড়া, ক্ষমতায় এলে কেন্দ্রের কাছে ৫০০ কোটি টাকা চাওয়ার কথাও গৌতমবাবুরা বলেছেন। এমনকি, উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজের একাধিক প্রকল্প, মাটিগাড়ায় ক্রিকেট স্টেডিয়ামের কথাও বলেছেন। কেন্দ্রীয় প্রকল্প এবং পুর এলাকার বাইরের প্রকল্পগুলি নিয়ে গৌতমবাবুর যুক্তি, ‘‘রাজ্য ও কেন্দ্রের সহযোগিতা মিলেই শহরের উন্নয়ন হবে। আর লাগোয়া এলাকায় উন্নয়নের প্রভাব শহরকে বাড়তে সাহায্য করে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement