মুখ্যমন্ত্রী ফিরতেই নেই ভাত

সপ্তাহখানেক আগে শ্রীমতি ও মহানন্দার জল মিলেমিশে ডুবিয়ে দিয়েছে গাজোলের করকচ গ্রাম পঞ্চায়েতের আহোড়া থেকে আলাল গ্রাম পঞ্চায়েতের ময়না পর্যন্ত বিস্তীর্ণ এলাকা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

মালদহ শেষ আপডেট: ২৩ অগস্ট ২০১৭ ০২:০৮
Share:

সোমবার মুখ্যমন্ত্রী এসেছিলেন। তাই মিলেছিল ডাল, ভাত, খিচুড়ি। তিনি ফিরে যেতেই ফের সেই শুকনো চিড়ে-গুড় আর জলের পাউচ। গাজোলের আহোড়ায় ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কের ধারে আশ্রয় নেওয়া বানভাসিরা তাই শুকনো মুখেই কাটিয়ে দিলেন গোটা দিন। তাঁরাই জানালেন, আগের দিন মুখ্যমন্ত্রী এসেছিলেন। তাই ভাত খেয়েছেন। কিন্তু তিনি ফিরতেই আবার আগের অন্ধকার।

Advertisement

সপ্তাহখানেক আগে শ্রীমতি ও মহানন্দার জল মিলেমিশে ডুবিয়ে দিয়েছে গাজোলের করকচ গ্রাম পঞ্চায়েতের আহোড়া থেকে আলাল গ্রাম পঞ্চায়েতের ময়না পর্যন্ত বিস্তীর্ণ এলাকা। আহোড়ায় ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কের দু’পাশে এখন সংসার পেতে রয়েছেন কয়েক হাজার বাসিন্দা। কেউ কেউ আশ্রয় নিয়েছেন মশালদিঘি হাইস্কুলে, অনেকে আমার ময়না হাইস্কুলে। অন্য যে প্রাথমিক স্কুল রয়েছে সেগুলিতেও জল ঢুকে গিয়েছে। তাই এলাকার বাকি বাসিন্দারা জীবন বাঁচাতে আশ্রয় নিয়েছেন সেই ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কে। রাস্তার দুপাশ তো বটেই, এমনকী ডিভাইডারেও ত্রিপল টাঙিয়ে তাঁরা রয়েছেন। ইটাহারের দিকে ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কে জল থাকায় যানবাহন চলছে কম। তাও ঝুঁকি রয়েছে, কিন্তু উপায়ন্তর নেই।

ঘর ডোবায় আহোড়ার বধূ সিতু সিংহ স্বামী, ছেলেকে নিয়ে ঠাঁই নিয়েছেন জাতীয় সড়কের ডিভাইডারে। ছেলে ভাত চেয়ে চিত্কার জুড়ে দেওয়ায় মঙ্গলবার দুপুর দু’টো নাগাদ সড়কের ওপরই গোবরের ঘুঁটে পুড়িয়ে উনুন জ্বালিয়েছেন।

Advertisement

প্রশাসন অবশ্য দাবি করেছে, ওই রাস্তার পাশে যত পরিবার রয়েছেন তাঁদের প্রতিদিনই রান্না করা খাবার দেওয়া হচ্ছে। সিতুদেবী তবে ভাত চাপালেন কেন? তাঁর উত্তর, ‘‘সোমবার মুখ্যমন্ত্রী এখানে এসেছিলেন, তাই কাল রান্না করা খাবারের কোনও অভাব ছিল না। খিচুড়ি, ডাল-ভাত সবই ছিল। কিন্তু এ দিন সকাল থেকে শুধু একটি বেসরকারি সংস্থা এসে চিড়ে, গুড় ও বিস্কুট দিয়ে গিয়েছে। দুপুর দুটো পর্যন্ত আর কারও দেখা নেই। ছেলের কান্নায় ভাত বসাতেই হল।’’

সিতুদেবী একা নন, ওই এলাকার বধূ পলি সিংহ, শিপ্রা বিশ্বাস, মুকুলবালা সরকার থেকে শুরু করে সন্দীপ সিংহ, অনিলচন্দ্র রায়-সকলেরই একই কথা। তবে তাঁরা জানিয়েছেন, প্রশাসনের তরফে প্রত্যেক পরিবারকে একটি করে ত্রিপল দেওয়া হয়েছে, রোজ পানীয় জলের প্যাকেট দেওয়া হচ্ছে। কখনও সখনও রান্না করা খাবার।

দুর্গতদের এই পরিস্থিতির জন্য সরকারকেই বিঁধেছেন রায়গঞ্জের সিপিএম সাংসদ মহম্মদ সেলিম। তাঁর কথায়, ‘‘সরকার গেলেন, সরকার দেখলেন, সরকার ফিরে এলেন। পরিস্থিতির কোনও উন্নতি হল না।’’ গাজোলের বিডিও বিষ্ণুপদ চক্রবর্তী অবশ্য বলেন, ‘‘অভিযোগ ঠিক নয়। জাতীয় সড়কের পাশে যাঁরা রয়েছেন তাঁদের ময়না স্কুল থেকে রান্না করা খাবার এনে বিলি করা হচ্ছে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement