অস্ত্রোপচারের পরে। —নিজস্ব চিত্র
স্বাভাবিক প্রসবের জন্য অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। কিন্তু প্রসবের চেষ্টা করতেই চিকিৎক বুঝলেন জরায়ুতে আটকে গিয়েছে গর্ভস্থ সন্তান। জরায়ুতে কোনও ত্রুটির জন্য এমনটা হয়ে থাকে। কিন্তু পরীক্ষায় দেখা যায় একটি নয়, জরায়ুতে একাধিক ত্রুটি রয়েছে। এ ক্ষেত্রে সিজ়ারিয়ান অপারেশন জরুরি। কিন্তু ওই অস্ত্রোপচারের পরিকাঠামো নেই চাঁচলে। এ দিকে মাঝপথে প্রসূতিকে মেডিক্যাল কলেজে পাঠানো সম্ভব নয় বলে শেষ চেষ্টায় ঝুঁকি নিয়েই অস্ত্রোপচার করলেন চিকিৎসক। সফলও হলেন। চাঁচল সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে বুধবার রাতে রেণু বিবি নামে ওই মহিলার অস্ত্রোপচার করা হয়। চিকিৎসকের চেষ্টায় ভূমিষ্ঠ হয় ফুটফুটে কন্যাসন্তান। দু’জনেই সুস্থ রয়েছেন, তাঁদের সঙ্কটও কেটে গিয়েছে।
ওই প্রসূতির জরায়ু ছোট, অকেজো হয়ে গিয়েছে একটি ফ্যালোপিয়ান টিউবও। এছাড়া জরায়ুতে জন্মগত একটি ত্রুটিও ছিল। একই সঙ্গে তিন ধরনের ত্রুটি সচরাচর দেখা যায় না। চিকিৎসা পরিভাষায় এ ধরনের সমস্যাকে বলা হয় ইউনিকর্নুয়েট ইউটেরাস উইথ রুডিমেন্টারি হর্ন। এমন অস্ত্রোপচার চাঁচলে এটাই প্রথম বলে হাসপাতাল সূত্রে খবর।
রেণুর অস্ত্রোপচার করেন হাসপাতালের স্ত্রী রোগ বিশেষজ্ঞ শল্য চিকিৎসক সৌমেন চৌধুরী। অ্যানাস্থেটিস্ট হিসেবে তাঁর সহযোগী ছিলেন চিকিৎসক দীপ্তিমান খামরুই। সৌমেন বলেন, ‘‘ওই প্রসূতির জরায়ুর গঠনই আলাদা। তিনি বিষয়টি জানতেন না। কিন্তু যে পরিস্থিতিতে তা আমরা জানতে পারি তখন জরায়ুর চিকিৎসা করা সম্ভব ছিল না। ফলে ওই সময় প্রসবের ঝুঁকি নেওয়া ছাড়া বিকল্প ছিল না। যাক! দু’জনেই এখন সুস্থ ভেবে ভাল লাগছে।’’ জুন মাসেও এক প্রসূতির ফ্যালোপিয়ান টিউবে ভ্রূণ আটকে থাকা অবস্থায় সফল অস্ত্রোপচার করেছিলেন তিনি।
হাসপাতাল সূত্রে খবর, হরিশ্চন্দ্রপুরে কুশিদা-রামপুরের ওই প্রসূতিকে সোমবার রাতে ভর্তি করিয়েছিলেন পরিজনেরা। খুবই অভাবী ঘরের তরুণীটির স্বাভাবিক প্রসবের চেষ্টা করছিলেন চিকিৎসক। বুধবার রাতে প্রসব যন্ত্রণা শুরু হওয়ার পরে তাঁকে অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে যাওয়া হয়। তখনই বিষয়টি ধরা পড়ে।
প্রসূতির স্বামী সোমরুল ইসলাম ভিন্ রাজ্যে শ্রমিকের কাজ করেন। রেণুকে নিয়ে এসেছিলেন তাঁর মা শোভা বিবি। ফুটফুটে নাতনিকে দেখে আনন্দে আটখানা তিনি। বললেন, ‘‘একসময় শুনছিলাম, দু’জনেরই বাঁচার সম্ভাবনা কম। ডাক্তারবাবুর জন্যই সব সম্ভব হয়েছে। উনি আমাদের কাছে ঈশ্বরের সমান।’’ হাসপাতালের সুপার সুব্রত বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘এমন অস্ত্রোপচার মেডিক্যালেই সম্ভব। তাও কদাচিত। এ নিয়ে জার্নালে নিবন্ধ প্রকাশিত হয়। এখানে এই পরিকাঠামোয় এমন অস্ত্রোপচার হয়েছে, আমরা গর্বিত। আমরা স্বাস্থ্যভবনেও বিস্তারিত জানিয়েছি।’’