কার্শিয়াং পৌরসভা। —ফাইল চিত্র।
তিন পুরসভা কালিম্পং, কার্শিয়াং এবং মিরিকে ভোট নিয়ে রাজ্যকে হাই কোর্ট হলফনামা দিতে বলার পরে দার্জিলিং পাহাড়ে আবার ভোটের আলোচনা শুরু হয়ে গিয়েছে। গত সপ্তাহেই এই তিন পুরসভার ভোট নিয়ে রাজ্যকে সিদ্ধান্ত নিতে বলে কলকাতা হাই কোর্ট। পুর ও নগরোন্নয়ন দফতরের প্রধান সচিবকে ছ’সপ্তাহের মধ্যে সিদ্ধান্ত নিতে নির্দেশ দিয়েছে প্রধান বিচারপতি টিএস শিবজ্ঞানম এবং বিচারপতি হিরণ্ময় ভট্টাচার্যের ডিভিশন বেঞ্চ। তার পরেই রাজ্যের পুর দফতরের সঙ্গে পাহাড়ের জিটিএ, প্রশাসনের তরফেও পুরভোট নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে।
আগামী ছয় সপ্তাহের মধ্যে পুজোর মরসুম চালু হয়ে যাবে। তার পরে দীপাবলি, ভাইফোঁটা, ছটপুজো থেকে বড়দিনের পর পর উৎসব চলবে। তাই নতুন বছরের গোড়ায় ভোট করানো নিয়ে প্রাথমিক ভাবে আলোচনা চলছে। আর জি করের তদন্ত নিয়ে পরিস্থিতি কোন দিকে গড়ায়, তা দেখার পরে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে ঠিক হয়েছে।
জিটিএ প্রধান অনীত থাপা এখনই এ নিয়ে কিছু বলতে চাননি। বিশেষ করে কলকাতা হাই কোর্টের নির্দেশের পর রাজ্য আদালতে কী জানায় তা দেখার পরেই পাহাড় থেকে বক্তব্য রাখা হবে বলে ঠিক হয়েছে। জিটিএ-র এক অন্যতম কর্তা বলেন, ‘‘আগামী কয়েক মাসের মধ্যে ভোট প্রক্রিয়া চালু করতে হবে তা পরিষ্কার। কারণ, হাই কোর্ট রাজ্যের বক্তব্য শোনার পরে দ্রুত ভোটের কথা বলবে এটাই স্বাভাবিক।’’
মামলায় হাই কোর্টের পর্যবেক্ষণ, সুপ্রিম কোর্টের রায় এবং রাজ্য পুরসভা আইনে নির্বাচন ঘোষণা করতে হবে রাজ্য সরকাররকে। কালিম্পং, কার্শিয়াং ও মিরিক পুরসভায় নির্বাচন চেয়ে হাই কোর্টে জনস্বার্থ মামলা দায়ের হয়। এর ভিত্তিতেই রাজ্যকে এই নির্দেশ দিয়েছে প্রধান বিচারপতির বেঞ্চ। আবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৭ সালে মে মাসে শেষবার তিন পুরসভায় ভোট হয়। তার পরে ২০২২ সালের এপ্রিলে পুরবোর্ডগুলির মেয়াদ শেষ হয়। তার পর থেকে ওই পুরসভাগুলির কার্যভার রাজ্যের নিযুক্ত প্রশাসকেরা সামলাচ্ছেন। কোনও পুরসভায় দু’বছরের বেশি সময় ধরে এ ভাবে প্রশাসক বসিয়ে কাজ করানো যায় না বলে মামলায় দাবি করা হয়েছে। আবার প্রশাসকেরা আদতে শাসক দলের লোক হওয়ায় বছরের পর বছর তাঁরাই পুরসভাগুলি চালিয়ে যাচ্ছেন বলে অভিযোগ করা হয়েছে। তেমনিই, নির্বাচিত কাউন্সিলর না থাকায় সাধারণ মানুষ সমস্যায় পড়ছেন। নির্বাচিত সদস্য না থাকার জন্য অনেক উন্নয়নের কাজও থমকে গিয়েছে বলে পাহাড়ের বিরোধী দলগুলিও দাবি করে আসছে।
আপাতত পাহাড়ে ভোটের প্রস্তুতি নেয়নি কোনও দলই। পাহাড়ের নেতারা মনে করছেন, পাহাড়়ের শাসক দল, প্রজাতান্ত্রিক মোর্চা লোকসভা ভোটে হেরেছে। তার আগে অবশ্য তাঁরা জিটিএ, পঞ্চায়েত ভোটে ভাল ভাবে জিতেছে। এদের সঙ্গেই রয়েছে রাজ্যের শাসক দল, তৃণমূলও। পুরভোটে প্রজাতান্ত্রিক মোর্চা নিজেদের মোমবাতি প্রতীকে লড়বে, তা স্বাভাবিক। তবে সংগঠনস্তরে প্রস্তুতি শুরু করার কথা শাসক দলের তরফে দলীয় প্রতিষ্ঠা দিবসে ঘোষণা করা হয়েছে। তেমনিই, বিরোধীরা লোকসভার ভোটের ফলের জেতার হাওয়াকে ধরে রেখেই ভোটে যেতে চাইবে তা স্বাভাবিক।