ধর্ম পাসোয়ান। ফাইল চিত্র
সেই পরিচিত সাদা পায়জামা-পাঞ্জাবি। মুখে কিছু চিবোচ্ছেন। কিছুক্ষণ আগে আদালত তাঁকে পাঁচ দিনের পুলিশি হেফাজতে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছে। সেই শুনানির পরে তখন পুলিশের গাড়িতে উঠছেন পানশালা কাণ্ডে মূল অভিযুক্ত তৃণমূল নেতা ধর্ম পাসোয়ান। গাড়ি ঘিরে ধরেন ধর্মের অনুগামীরা। সেই ভিড় ঠেলে গাড়ির চাকা এগোনো মুশকিল।
নেতা-সুলভ ভঙ্গীতে হাত তুলে ভিড়কে ভোজপুরী ভাষায় ধর্ম বলেন, “তোমরা আর এগিয়ো না। আমি থানায় যাচ্ছি। কোনও অসুবিধে হবে না।” তার পরে পুলিশের দিকে ফিরে পরিষ্কার বাংলায় ধর্মের মন্তব্য, “চলুন, ওরা আর এগোবে না।” তখন বৃহস্পতিবার বিকেল, ধর্ম পাসোয়ানকে নিয়ে জলপাইগুড়ি জেলা আদালত চত্বর ছেড়ে এগিয়ে গেল পুলিশের গাড়ি।
মঙ্গলবার গভীর রাতে কলকাতার ট্যাংরা ফ্ল্যাট থেকে ধর্ম পাসোয়ানকে গ্রেফতার করা হয়। তার পরে এ দিন বৃহস্পতিবার জলপাইগুড়ি জেলা আদালতে হাজির করানো হয়। কলকাতা থেকে ধর্মকে গ্রেফতার করে জলপাইগুড়ি নিয়ে আসার দিন তাঁকে নীল টি শার্ট এবং ছাই রঙা জিনসে দেখা গিয়েছিল। বৃহস্পতিবার পুলিশ যখন ধর্মকে আদালতে নিয়ে আসে, তখন তিনি হাফ হাতা সাদা পাঞ্জাবি এবং সাদা পায়জামা পরে চেনা চেহারায়। জেলা আদালতের মুখ্য বিচারবিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেট সুতীর্থ তরফদারের এজলাশে ধর্মের আইনজীবী অভিজিৎ সরকার-সহ অন্যরা জামিনের আর্জি জানান। সরকারি আইনজীবী মৃন্ময় বন্দ্যোপাধ্যায় পাল্টা জানান, ধর্মই পানশালা কাণ্ডে মূল অভিযুক্ত। তাঁকে জেরা করতে চায় পুলিশ।
পানশালায় যৌন ব্যবসার জাল কোথায় ছড়িয়ে রয়েছে, তা বের করতে ভিন রাজ্যেও ধর্মকে নিয়ে যেতে চায় পুলিশ। পুলিশের তরফে আদালতে জানানো হয়, জেরার সময়ে ধর্ম তাদের কাছে নিজের দোষ কবুল করেছেন। নারী পাচারের অভিযোগও তিনি মেনে নিয়েছেন বলে পুলিশের দাবি। তদন্তে সহযোগিতা করে আরও অপরাধীদের ধরা এবং মহিলাদের উদ্ধারে পুলিশকে সাহায্য করতে ধর্ম রাজি বলেও পুলিশের দাবি। মামলায় ইমমরাল ট্র্যাফিক প্রিভেনশন বা অনৈতিক পাচার দমন আইনের দুই ধারা জুড়েছে পুলিশ। তবে তারা ধর্মকে চোদ্দো দিন হেফাজতে চাইলেও আদালত ৬ দিনের হেফাজত মঞ্জুর করেছে।
১৬ জুলাই থানারোডে ধর্মের পানশালায় অভিযান চালায় পুলিশ। পানশালায় দেহব্যবসা চালানোর অভিযোগে ২৮ জন কর্মীকে গ্রেফতার করে পুলিশ। উদ্ধার হন ১৩ জন গায়িকা। পুলিশের দাবি, এর সঙ্গে আর্ন্তজাতিক নারীপাচার চক্রেরও যোগ রয়েছে। যদিও মামলার মূল অভিযোগকারী তথা ধর্মের পানশালার এক গায়িকা ঘটনার কয়েকদিন পরে দাবি করেন, তাঁকে দিয়ে পুলিশ জোর করে অভিযোগ দায়ের করেছে।
এ দিন আদালতে সংবাদমাধ্যমে ধর্ম বলেন, ‘‘আমার ব্যবসা ভাল চলছিল। তাই কদমতলার এক হোটেল ব্যবসায়ী পুলিশকে ভুল বুঝিয়ে আমাকে ফাঁসিয়েছেন। আমি নির্দোষ।” ইসলামপুর আদালতে ট্র্যানজিট রিমান্ড নিতে যাওয়ার সময়ে ধর্মের মুখ গামছা দিয়ে ঢাকা ছিল। এ দিন তিনি মুখ না ঢেকেই আদালতে এসেছিলেন। ধর্মকে নিয়ে যখন পুলিশের গাড়ি আদালত থেকে বেরিয়ে যাচ্ছিল, তখন ভিড়ের মধ্যে থেকে ললিতা পাসোয়ান, গীতা পাসোয়ান, দুলাই পাসোয়ানরা ধর্মের নামে জয়ধ্বনি দিচ্ছিলেন।